REMspace-এর যুগান্তকারী সাফল্য: প্রথমবারের মতো স্বপ্নের মধ্যে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ: প্রবন্ধটি পড়ুন:
লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-র Inception মুভি টা আমরা অনেকেই দেখেছি। দেখার সময় অনেকেই হয়ত ভেবেছি, কেমন হতো ব্যাপারটা যদি কারো স্বপ্নে প্রবেশ করে দেখা যেত? ঘুমের ঘোরে দেখা আমাদের স্বপ্নগুলো তে কেউ অনুপ্রবেশ করে বসবে না তো কখনো আবার?
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক স্টার্ট-আপ REMspace লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নতুন ধরনের যোগাযোগের সম্ভাবনা উন্মোচন করে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। যেটা একসময় সিনেমাতে দেখা কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল, তা বাস্তবে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষভাবে ডিজাইন করা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, দুইজন অংশগ্রহণকারী তাদের স্বপ্নে প্রবেশ করে একটি সাধারণ বার্তা বিনিময় করতে সক্ষম হয়েছেন।
আগে জেনে নেই লুসিড ড্রিম ব্যাপারটা আসলে কি? লুসিড ড্রিম হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে স্বপ্নের মধ্যে থেকেই কেউ বুঝতে পারে যে সে স্বপ্ন দেখছে। এই ঘটনা সাধারণত REM(Rapid Eye Movement) sleep তথা ঘুমের সময় ঘটে এবং এর নানাবিধ সম্ভাবনা রয়েছে – কিছু মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে নতুন দক্ষতা শেখার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হতে পারে। এর আগের গবেষণায় REMspace দেখিয়েছে, ফেসিয়াল ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (EMG) সেন্সর দিয়ে স্বপ্নের মধ্যে উচ্চারিত কিছু শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এর ভিত্তিতে তারা তৈরি করেছে “Remmyo”, যা একটি “ড্রিম ল্যাঙ্গুয়েজ” বা স্বপ্নের ভাষা, যা বিশেষ সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
২০২৪ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর, অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমানোর সময় তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ এবং অন্যান্য ঘুম সম্পর্কিত ডেটা দূর থেকে ট্র্যাক করা হয়। প্রথম অংশগ্রহণকারী যখন লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেন, তখন সার্ভার তার কাছে একটি র্যান্ডম Remmyo শব্দ পাঠায় ইয়ারবাডের মাধ্যমে। অংশগ্রহণকারী স্বপ্নের মধ্যে সেই শব্দটি উচ্চারণ করেন, এবং তার প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পর, আরেকজন অংশগ্রহণকারী তার লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, তিনি প্রথম অংশগ্রহণকারীর পাঠানো বার্তাটি গ্রহণ করেন এবং ঘুম থেকে জাগার পর সেটি নিশ্চিত করেন। এভাবেই প্রথমবারের মতো স্বপ্নের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া, দুইজন অংশগ্রহণকারী সরাসরি সার্ভারের সঙ্গেও তাদের স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন।
REMspace-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মাইকেল রাডুগা(Michael Raduga) এই ব্যাপারে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, “যেটা গতকালও কল্পনা মনে হতো, সেটা আজ বাস্তব। আর আগামীকাল এটা এমন সাধারণ হয়ে যাবে যে আমরা কল্পনাও করতে পারবো না জীবনে এর প্রভাব ছাড়া। এই প্রযুক্তি নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং স্বপ্নের জগতে আমাদের যোগাযোগের ধরন পুরোপুরি পাল্টে দেবে। এ কারণেই আমরা মনে করি REM ঘুম এবং লুসিড ড্রিম আগামীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) পরবর্তী বড় শিল্পখাত হয়ে উঠবে।”
এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের নিবিড় গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলাফল হিসেবে। ২৪শে সেপ্টেম্বর প্রথমবার যোগাযোগ সফল হওয়ার পর থেকে REMspace দল তাদের প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিটি নতুন পরীক্ষায় আরও উন্নত ফলাফল পেয়েছে। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো রিয়েল-টাইম স্বপ্নের যোগাযোগ সম্ভব করা, যদিও এটি আরও জটিল একটি চ্যালেঞ্জ। তবে REMspace-এর গবেষকরা আত্মবিশ্বাসী যে কয়েক মাসের মধ্যেই তারা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
REMspace একটি নিউরোটেকনোলজি কোম্পানি, যারা ঘুমের মান উন্নয়ন এবং লুসিড ড্রিমের গবেষণায় বিশেষজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানটি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন স্লিপিং মাস্ক এবং স্বপ্নের জার্নাল শেয়ার করার জন্য বিশেষ ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরির মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সরবরাহ করে। REMspace-এর পূর্ববর্তী গবেষণায় তারা প্রমাণ করেছে, স্বপ্ন থেকে কথা ও সুর সরাসরি প্রেরণ করা সম্ভব। এমনকি ঘুমের মধ্যে থেকেই ভার্চুয়াল সাইবার ট্রাক বা স্মার্ট হোম নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।
এই যুগান্তকারী আবিষ্কার আমাদের স্বপ্নের জগৎকে কল্পনার সীমানা ছাড়িয়ে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। যেখানে আগে স্বপ্ন ছিল নিছক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সেখানে এখন তা হয়ে উঠছে যোগাযোগের নতুন মাধ্যম। REMspace প্রমাণ করেছে যে, ঘুম আর বাস্তবতার মধ্যে দেয়াল ভেঙে আমরা এমন এক ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে স্বপ্নের মাধ্যমে চিন্তা, বার্তা, এবং সম্ভাবনা বিনিময় হবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এখন প্রশ্ন শুধু একটাই—এই স্বপ্নে আপনি কী বলবেন?
Leave a comment