চিকিৎসা বিদ্যান্যানোপ্রযুক্তি

বিজ্ঞানীরা তৈরি করল চালের দানার চেয়েও ছোট পেসমেকার

Share
Share

নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একটি যুগান্তকারী পেসমেকার তৈরি করেছেন, যা চালের একটি দানার চেয়েও ছোট। এই ক্ষুদ্র পেসমেকারটি ইনজেকশনের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করানো যাবে এবং শরীরের ভেতরে নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলীন হয়ে যাবে। ফলে, এটি ব্যবহারের জন্য কোনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে না।

পেসমেকার কী এবং কেন ব্যবহার করা হয়?

পেসমেকার একটি চিকিৎসা ডিভাইস যা হৃদয়ের অনিয়মিত স্পন্দন বা হৃদস্পন্দনের সমস্যা (অ্যারিদমিয়া) সমাধানে ব্যবহৃত হয়। প্রচলিত পেসমেকারে ব্যাটারি এবং তার ব্যবহার করতে হয়, যা অস্ত্রোপচার মাধ্যমে শরীরে বসানো হয়। কিন্তু নতুন এই প্রযুক্তিতে তার বা ব্যাটারি নেই, এটি সম্পূর্ণ তারবিহীন এবং অস্থায়ীভাবে হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

কীভাবে কাজ করে এই ক্ষুদ্র পেসমেকার?

এই ক্ষুদ্র পেসমেকারটি একটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কাজ করে, যাকে বলে গ্যালভানিক সেল। ডিভাইসটিতে দুইটি ধাতব ইলেকট্রোড থাকে, যা শরীরের ভেতরের তরলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এর ফলে ব্যাটারির প্রয়োজনীয়তা দূর হয়েছে।

পাশাপাশি বুকের ওপর একটি নরম, নমনীয়, ওয়্যারলেস প্যাচ লাগানো থাকে, যা হৃদস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করে। যখনই অনিয়মিত হৃদস্পন্দন শনাক্ত হয়, তখন প্যাচটি ইনফ্রারেড আলোর পালস পাঠায়। এই আলো শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে পেসমেকারকে সক্রিয় করে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই আবিষ্কার?

বিশেষ করে জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ঝুঁকিপূর্ণ, তাই এই ইনজেকশন পদ্ধতিতে পেসমেকার স্থাপন করা অনেক নিরাপদ ও কার্যকর। ব্যবহারের পর ডিভাইসটি শরীরের ভেতরেই নিজে থেকে মিশে যায়, যার ফলে আলাদা অস্ত্রোপচার করে এটি বের করার প্রয়োজন পড়ে না।

সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ও বিস্তৃত প্রয়োগ

এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন, নার্ভ ও হাড়ের দ্রুত আরোগ্য, ক্ষত নিরাময় এবং ব্যথা নিরসনে ব্যবহার করা যাবে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, বিভিন্ন রঙের আলোর মাধ্যমে হৃদয়ের নানা সমস্যা নিরসনে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।

গবেষণা ও বিজ্ঞানীদের কথা

এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন বায়োইলেকট্রনিক্স বিশেষজ্ঞ জন এ. রজার্স এবং সহযোগী ইগোর এফিমোভ। তাঁদের গবেষণা সম্প্রতি “Nature” নামক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এমন উদ্ভাবন আমাদের নতুন দিগন্ত দেখায়, যা ভবিষ্যতের চিকিৎসা প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করবে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org