প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন
ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণার প্রতি আগ্রহী ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে এবং তাদের গবেষণার পথে সহায়তা দিতে কয়েকটি কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এতে তারা গবেষণায় সাফল্য অর্জন করতে এবং স্কলারশিপ পেতে আরও আগ্রহী ও প্রস্তুত হবে। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তার জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
১. গবেষণার গুরুত্ব বোঝানো:
ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণার গুরুত্ব বোঝাতে হবে। গবেষণা কেন দরকার, এটি কীভাবে তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করে এবং তারা গবেষণায় সফল হলে দেশের জন্যও কীভাবে অবদান রাখতে পারে, তা বোঝানো গুরুত্বপূর্ণ।
২. মেন্টর খোঁজার ব্যবস্থা করা:
ছাত্র-ছাত্রীদের এমন মেন্টর খুঁজতে উৎসাহিত করতে হবে যিনি তাদের গবেষণার প্রতি আগ্রহী করবেন এবং প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও গবেষণায় আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের মেন্টরশিপ নিতে পারেন, যা তাদের গবেষণার ভিত্তি গড়তে সহায়ক হবে।
৩. গবেষণা পরিকল্পনা তৈরি করা:
গবেষণার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজন একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা। তাদেরকে একটি গবেষণার বিষয়ে আগ্রহী হতে বলুন এবং কীভাবে গবেষণা শুরু করতে হয়, বিভিন্ন পর্যায়গুলোতে কীভাবে কাজ করতে হয়, তা তাদের শেখান। পরিকল্পনা থাকলে গবেষণা সহজ ও গঠনমূলক হয়।
৪. প্রাথমিক গবেষণায় সহায়তা:
শুরুর পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কীভাবে রিসার্চ আর্টিকেল পড়তে হয়, কোন প্রশ্নগুলোকে গবেষণার বিষয় হিসেবে নির্বাচন করতে হয় এবং কীভাবে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করতে হয় তা শিখানো প্রয়োজন। তাদেরকে ডাটাবেজ ব্যবহার ও রেফারেন্স ম্যানেজমেন্ট টুলস (যেমন Zotero, EndNote) শেখানোর জন্য কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে।
৫. গবেষণা নেটওয়ার্ক তৈরি করা:
গবেষণার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যান্য গবেষক, ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং অ্যালামনাইদের সাথে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করুন। তারা বিভিন্ন গবেষণা সম্মেলন, কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারে, যেখানে গবেষক এবং শিক্ষকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ থাকে।
৬. স্কলারশিপ সম্পর্কিত তথ্য ও প্রস্তুতি:
স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য গবেষণার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, আবেদন পদ্ধতি ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জানানো জরুরি। যেমন GRE, TOEFL/IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতি, সঠিক সময়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা এবং আবেদনপত্র ও প্রস্তাবনা পত্র (SOP) ভালোভাবে প্রস্তুত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার অফিসে বা ছাত্রকল্যাণ অফিসে স্কলারশিপ নিয়ে কাউন্সেলিং সেশন রাখতে পারেন।
৭. আত্মবিশ্বাস ও পজিটিভ মনোভাব তৈরি করা:
গবেষণা অনেক সময় কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। এ কারণে, ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা জরুরি। তাদের ছোট ছোট সাফল্য উদযাপন করতে উৎসাহিত করুন, যেমন একটি আর্টিকেল প্রকাশ বা সেমিনারে গবেষণাপত্র উপস্থাপন। এতে তারা গবেষণার প্রতি উৎসাহিত হবে।
৮. গবেষণায় ধৈর্যশীল থাকা:
গবেষণায় ধৈর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝানো প্রয়োজন যে, গবেষণায় তাড়াহুড়ো করলে সঠিক ফল পাওয়া যায় না। তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে এবং প্রতি ধাপে শিখতে উৎসাহিত করতে হবে।
৯. রিসোর্সের অ্যাক্সেস প্রদান:
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স ও বইপত্রের অ্যাক্সেস থাকা দরকার। এছাড়া অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম (যেমন Coursera, edX, Udemy) ব্যবহার করে বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে, যা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
১০. গবেষণার বিষয় নির্বাচন:
ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করুন এমন একটি গবেষণার বিষয় বেছে নিতে যা তাদের আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে তারা গবেষণায় নিবিড় মনোযোগ দিতে পারবে এবং গবেষণার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে।
এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণায় আগ্রহী ও আত্মবিশ্বাসী করা যাবে এবং তারা গবেষণার মাধ্যমে স্কলারশিপ পাওয়ার প্রস্তুতিও নিতে পারবে।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত—————–https://www.facebook.com/share/p/14gdWaffgc/
Leave a comment