লেখক- আজিজুল হক
ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশী স্কলারশিপ নিয়ে এমএস বা পিএইচডি করতে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রথমত, গবেষণার মূল ধারণা শেখা প্রয়োজন। গবেষণায় অংশগ্রহণের জন্য কিছু পাবলিকেশন হওয়া জরুরি, তবে তা বড় জার্নালে হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পাবলিকেশন থাকলে গবেষণা এবং পেপার লেখা অনেক সহজ হয়ে যাবে। একাডেমিক পড়াশোনা, বিশেষ করে গবেষণামূলক বিষয়গুলো ভালভাবে বুঝে পড়া প্রয়োজন।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জন করা অপরিহার্য:
উচ্চারণসহ পরিষ্কার ইংরেজি বলা ও লেখার সক্ষমতা প্রয়োজন। গবেষণা পরিচালনা এবং ডাটা বিশ্লেষণ (Data Analysis) ও পরিসংখ্যান (Statistical Analysis) শিখতে হবে। ভালো মানের পেপার লেখা এবং সঠিক জার্নালে সাবমিশন করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। পেপারে রিভিউয়ারদের মন্তব্যের উত্তর কীভাবে দিতে হয়, সেই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
বিদেশী প্রফেসরদের ইমেইল করা এবং প্রজেক্ট প্রোপোজাল তৈরি করা শিখতে হবে। Excel, PowerPoint, MS Word, SPSS, Python, R, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এগুলো শেখার মাধ্যমে গবেষণার পথ অনেক সহজ এবং সুগম হবে।
যেসব কৌশল ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে, সেগুলোকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছি:
১. গবেষণা শিখতে হবে:
গবেষণা মূলত নতুন কিছু জানার এবং সেটিকে বিশ্লেষণ করার প্রক্রিয়া। গবেষণা করার জন্য প্রথমেই আপনাকে যে বিষয়টির ওপর কাজ করবেন, তা নির্বাচন করতে হবে। তারপর, ঐ বিষয়ের পূর্ববর্তী গবেষণাগুলো পড়তে হবে। বেসিক রিসার্চ মেথডস জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই বা ওপেন কোর্স থাকতে পারে, যেগুলো আপনি অনলাইনে পাবেন। গবেষণার জন্য সাধারণত কিছু স্টেপ ফলো করা হয়:
– লিটারেচার রিভিউ: আগের গবেষণাগুলো সম্পর্কে জানানো।
– হাইপোথিসিস ডেভেলপমেন্ট: গবেষণা প্রশ্ন তৈরি করা।
– মেথডোলজি: গবেষণা পদ্ধতি নির্বাচন করা।
– ডাটা সংগ্রহ: সঠিকভাবে ডাটা সংগ্রহ করা।
– ডাটা এনালাইসিস: বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডাটা বিশ্লেষণ করা।
২. পাবলিকেশন এবং জার্নাল সিলেকশন:
গবেষণা করার পরে, আপনার কাজকে পাবলিশ করতে হবে। তবে, এটি যে বিশাল বড় জার্নালে করতে হবে, এমন নয়। আপনাকে প্রথমে কিছু ছোট জার্নালে কাজ প্রকাশ করে অভ্যস্ত হতে হবে। ছোট বা মাঝারি মানের জার্নালগুলোতে গুণগত গবেষণা হতে পারে যা পরে বড় জার্নালে আপগ্রেড করা সম্ভব।
– জার্নাল সিলেকশন: সঠিক জার্নাল সিলেক্ট করতে হবে যা আপনার গবেষণার সাথে সম্পর্কিত এবং সঠিক ধরনের অডিয়েন্স পেতে পারে।
– পেপার সাবমিশন: প্রতিটি জার্নালে পেপার সাবমিশন করার নিজস্ব প্রক্রিয়া আছে। এই প্রক্রিয়াটি শিখতে হবে, যেমন: গাইডলাইনস এবং ফরম্যাটিং অনুসরণ করা।
৩. ইংরেজি ভাষার দক্ষতা এবং উচ্চারণ:
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে গেলে ইংরেজি ভাষায় সাবলীলতা খুব জরুরি। আপনার ইংরেজি কথাবার্তা এবং উচ্চারণ উন্নত করার জন্য নিয়মিত চর্চা করা উচিত। কিছু ইংরেজি স্পোকেন কোর্স বা ভয়েস ট্রেনিং অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন।
– ইংরেজি বলার দক্ষতা: এটি উন্নত করতে, ইংরেজি বই পড়ুন, ইংরেজি ভিডিও দেখুন এবং আপনার উচ্চারণের অনুশীলন করুন।
– স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস: প্রয়োজন হলে ইংরেজি স্পোকেন কোর্সে যোগদান করুন।
৪. রিসার্চ রাণ (Research Run) এবং ডাটা এনালাইসিস:
গবেষণা করার সময় ডাটা সংগ্রহ এবং তার পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ অপরিহার্য। এই জন্য কিছু সফটওয়্যার ও টুলস জানা প্রয়োজন:
– ডাটা এনালাইসিস**: Excel, SPSS, R Programming, এবং Python প্রোগ্রামিং ভাষার ব্যবহার করে ডাটা বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
– স্ট্যাটিস্টিক্যাল এনালাইসিস: গবেষণার উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্ট্যাটিস্টিক্যাল টেস্ট যেমন t-test, ANOVA, Chi-square ব্যবহার করে ডাটা বিশ্লেষণ করা।
উদাহরণ: যদি আপনি একটি গবেষণায় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেন, তবে SPSS বা Excel ব্যবহার করে mean, median, এবং standard deviation বের করে সেটি বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
৫. পেপার লেখার প্রক্রিয়া:
একটি ভাল মানের পেপার লেখার জন্য কিছু মৌলিক নীতি রয়েছে, যেমন:
– একাডেমিক ভাষা ব্যবহার: পেপারে প্যাঁচাল বা অনানুষ্ঠানিক ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়।
– অ্যাবস্ট্র্যাক্ট লেখা: পেপারের সারাংশ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
– লিটারেচার রিভিউ: আগের গবেষণাগুলি এবং আপনার কাজের সাথে সম্পর্কিত তথ্য যুক্ত করুন।
– ডাটা এবং এনালাইসিস সঠিকভাবে উপস্থাপন করুন: উপস্থাপন করতে হবে গঠনমূলকভাবে।
– রেফারেন্সিং: আপনার পেপারে যেসব তথ্য বা ডাটা ব্যবহার করেছেন, তা সঠিকভাবে রেফারেন্স দিন।
৬. জার্নাল ম্যানুসক্রিপ্ট সাবমিশন এবং রিভিউ:
একটি গবেষণাপত্র সাবমিট করার পরে, অনেক সময় রিভিউয়ার থেকে ফিডব্যাক আসে। রিভিউয়ারদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার গবেষণার মান এবং গবেষক হিসেবে আপনার দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলে।
– ফিডব্যাকের উত্তর দেয়া: রিভিউয়ারের মন্তব্য বা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সুনির্দিষ্টভাবে এবং যদি সম্ভব হয়, তাদের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরিবর্তন করতে হবে।
– ইমেইল যোগাযোগ: বিদেশী প্রফেসরদের ইমেইল করার সময় অবশ্যই ফর্মাল টোন ব্যবহার করুন। ইমেইলটি সংক্ষিপ্ত, পরিষ্কার এবং পেশাদারী হতে হবে।
৭. প্রজেক্ট প্রোপোজাল এবং সফটওয়্যার ব্যবহার:
একটি শক্তিশালী প্রজেক্ট প্রোপোজাল তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোপোজালে আপনার গবেষণার উদ্দেশ্য, মেথডোলজি, এবং প্রাসঙ্গিকতা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রপোজাল লেখার সময়:
– ইংরেজি ভাষায় পরিষ্কার লেখনশৈলী ব্যবহার করুন।
– গবেষণার গুরুত্ব এবং অপেক্ষিত ফলাফল নির্ধারণ করুন।
এছাড়া, গবেষণা ও প্রেজেন্টেশনের জন্য কিছু সফটওয়্যার জানা গুরুত্বপূর্ণ:
– MS Excel: ডাটা অ্যানালাইসিস এবং চার্ট তৈরি।
– PowerPoint: প্রেজেন্টেশনের জন্য।
– MS Word: পেপার লেখার জন্য।
– SPSS: স্ট্যাটিস্টিক্যাল ডাটা অ্যানালাইসিস।
– R Programming এবং Python: উন্নত ডাটা এনালাইসিস এবং প্রোগ্রামিং টুলস।
এই ধরনের প্রস্তুতি আপনার গবেষণা এবং ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল করবে। আপনি যদি এই দক্ষতাগুলো অর্জন করেন, তাহলে বিদেশী স্কলারশিপ পাওয়ার এবং বিদেশে উচ্চতর শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, এই যোগ্যতাগুলো গবেষণা ও পড়াশোনা চলমান অবস্থায় আপনাকে অন্যমাত্রায় উঠিয়ে নিবে এবং
ডিগ্রী শেষে ঐ ইউনিভার্সিটিতে বা অন্য প্রতিষ্ঠানে ভালোমানের চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগবে।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–https://www.facebook.com/share/p/15dA9WrEvg/
Leave a comment