অন্যান্য

বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান: ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি ও ফান্ডিংয়ে বিপ্লবের আহ্বান!

Share
Share

প্রফেসর ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন

ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি শক্তিশালী গবেষণা পরিবেশ তৈরি করতে হলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি এবং ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। এই পরিবর্তনগুলো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।

১. গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন:

ক. আধুনিক অবকাঠামো ও প্রযুক্তির উন্নয়ন:

গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব, আধুনিক সরঞ্জাম এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এটি গবেষণার মান বাড়ানোর পাশাপাশি গবেষকদের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

খ. বিশেষায়িত কেন্দ্র স্থাপন:

নির্দিষ্ট গবেষণা ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে বিশেষায়িত গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন জরুরি, যা বিভিন্ন বিষয় যেমন বায়োটেকনোলজি, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর ফোকাস করবে।

২. গবেষণা ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন:

ক. গবেষণা নীতি ও কৌশলগত পরিকল্পনা:

দেশে একটি সুসংগঠিত গবেষণা নীতি প্রণয়ন এবং এর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এই নীতিতে গবেষণার প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

খ. গবেষণা পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধি:

গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মী নিয়োগ করতে হবে। এছাড়াও, গবেষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালা আয়োজন করা উচিত, যাতে তারা গবেষণার নতুন নতুন পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।

৩. গবেষণা সংস্কৃতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন:

ক. সহযোগিতা এবং নেটওয়ার্কিং:

গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। গবেষক এবং শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও জ্ঞান বিনিময়কে উৎসাহিত করতে হবে।

খ. গবেষণার মান ও নৈতিকতা:

গবেষণার মান উন্নয়নের জন্য কঠোর নৈতিক মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। প্রতিটি গবেষণায় সঠিক তথ্য ব্যবহার এবং নৈতিকতার পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

গ. গবেষণায় মেধা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা:

গবেষকদের উদ্ভাবনী ধারণা এবং সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করতে হবে। গবেষণায় মেধা ও উদ্ভাবনের মূল্যায়ন করতে এবং এ বিষয়ে পুরস্কার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৪. গবেষণা ফান্ডিংয়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন:

ক. বাজেট বৃদ্ধি ও বন্টন:

গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গবেষণা ফান্ডিংয়ের জন্য একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠন করে সুষ্ঠু বন্টন এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

খ. বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ:

গবেষণায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। বেসরকারি খাতের সংস্থা ও কর্পোরেশনগুলোকে গবেষণা প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।

গ. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ফান্ডিং:

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ও ফান্ডিং উৎসের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বৈশ্বিক ফান্ডিংয়ের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। এ ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশের গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে।

উপসংহার:

বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি এবং ফান্ডিংয়ে এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করা হলে, দেশের গবেষণা ক্ষেত্রের উন্নতি হবে এবং বাংলাদেশ গবেষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। এর মাধ্যমে দেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথকে সুগম করবে।

ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত————https://www.facebook.com/share/p/18fo9Dc9Cu/

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
অন্যান্যউচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ

বিশ্বব্যাপী পিএইচডি ও পোস্টডক পজিশনের আপডেট!

লেখক আজিজুল হক আজকাল অনেকেই উচ্চশিক্ষা বা পোস্টডক পজিশনের জন্য বিদেশে যাওয়ার...

অন্যান্য

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাঙ্কিং ও পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয়!

প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সাম্প্রতিক ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের মধ্যে...

অন্যান্য

মনসুর আলী জিসান: শিক্ষাক্ষেত্রে সততা, কঠোর পরিশ্রম এবং নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা !

লেখক: মনসুর আলী জিসান পিএইচডি করার ব্যাপারটা আসলে এতো সহজ না। আপনি...

অন্যান্য

গবেষণার মানেই প্রকৃত সাফল্য: পিএইচডি ডিগ্রির সংখ্যার প্রভাব কতটুকু?

লেখক: প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেনফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মোঃ ইয়ামিন হোসেন...

অন্যান্য

জিনোম সিকোয়েন্স’ বিজ্ঞানের ভাষায় জীবন রহস্য!

প্রবন্ধটির লেখক আজিজুল হক। তিনি এই লেখায় জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির গুরুত্ব এবং...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.