গবেষণায় হাতে খড়ি

গবেষণা-বিহীন অধ্যাপনা” একাডেমিক উৎকর্ষতার পথে প্রধান বাধা!

Share
Share

প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন

ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষার যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং সেই জ্ঞানের কার্যকর প্রয়োগ। এ লক্ষ্য পূরণে গবেষণা কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। “গবেষণা-বিহীন অধ্যাপনা” বলতে এমন শিক্ষাদান প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে শিক্ষক শুধুমাত্র পূর্ব-প্রাপ্ত জ্ঞান পরিবেশন করেন, কিন্তু নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা করেন না। এটি শিক্ষার গুণগত মান এবং সমাজের সার্বিক অগ্রগতিতে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করে।

গবেষণা এবং একাডেমিক উৎকর্ষতার সম্পর্ক:

১. নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি:

গবেষণা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নতুন তত্ত্ব, পদ্ধতি, প্রযুক্তি বা জ্ঞান সৃষ্টি করা হয়।

– উদাহরণ: আইজ্যাক নিউটনের “মহাকর্ষ তত্ত্ব” গবেষণার ফল। এটি বিজ্ঞানের অনেক শাখাকে সমৃদ্ধ করেছে।

২. শিক্ষার মানোন্নয়ন:

একজন শিক্ষক গবেষণায় সক্রিয় থাকলে তার শেখানোর কৌশলও উন্নত হয়। কারণ গবেষণা তাকে নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন নিয়ে চিন্তা করতে শেখায়।

– উদাহরণ: ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা গবেষণা-ভিত্তিক। এখানে শিক্ষকেরা নিজেদের গবেষণায় ব্যস্ত থাকেন, যা শিক্ষার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতা উন্নত করে।

গবেষণা-বিহীন অধ্যাপনা” এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব:

১. পরিবেশিত জ্ঞানের স্থবিরতা:

যদি কোনো শিক্ষক গবেষণায় জড়িত না থাকেন, তবে তিনি শুধুমাত্র পুরোনো জ্ঞান বা তত্ত্ব পুনরাবৃত্তি করবেন। এতে শিক্ষার্থীরা সমসাময়িক প্রয়োজনীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়।

– উদাহরণ: প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, যদি কোনো শিক্ষক ১০ বছর আগের প্রোগ্রামিং ভাষা শেখান, তাহলে শিক্ষার্থীরা বর্তমান বাজারে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হবে না।

২. শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণাহীনতা:

গবেষণা সক্রিয় শিক্ষকরা তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহী করেন। গবেষণা-বিহীন শিক্ষকের এই অনুপ্রেরণা দেয়ার ক্ষমতা থাকে না।

– উদাহরণ: জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি শিক্ষকদের গবেষণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে, যা দেশটির উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।

৩. প্রতিষ্ঠানের র‌্যাংকিংয়ে পতন:

বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণমান মাপা হয় গবেষণার সংখ্যা এবং মানদণ্ড দিয়ে। যদি শিক্ষকগণ গবেষণায় অংশগ্রহণ না করেন, তবে প্রতিষ্ঠানটির র‌্যাংকিং ও খ্যাতি হ্রাস পায়।

– উদাহরণ: টাইমস হায়ার এডুকেশন বা QS র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে গবেষণা প্রকাশনার সংখ্যা একটি প্রধান মানদণ্ড।

৪. সমাজের অগ্রগতিতে বাঁধা:

গবেষণার মাধ্যমে নতুন সমস্যা সমাধান এবং উদ্ভাবন সম্ভব। গবেষণা-বিহীন অধ্যাপনা একটি প্রজন্মকে এ ধরনের দক্ষতা থেকে বঞ্চিত করে।

– উদাহরণ: মেডিক্যাল সেক্টরে গবেষণার অভাবে যদি কোনো দেশ নতুন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে না পারে, তবে তা সারা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

“গবেষণা-বিহীন অধ্যাপনা” কেন বিদ্যমান?

১. অপর্যাপ্ত অর্থায়ন:

গবেষণার জন্য ল্যাবরেটরি, যন্ত্রপাতি এবং উপকরণ প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকায় শিক্ষকগণ গবেষণায় জড়িত হতে পারেন না।

– উদাহরণ: উন্নয়নশীল দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন থাকে না।

২. প্রশিক্ষণের অভাব:

গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা। অনেক শিক্ষকের কাছে এই দক্ষতা থাকে না।

৩. প্রশাসনিক দায়িত্বের চাপ:

শিক্ষকদের ওপর প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়, যা তাদের গবেষণা করার সময় বা সুযোগ কমিয়ে দেয়।

৪. উৎসাহের অভাব:

গবেষণার ফলাফল নিয়ে সঠিক মূল্যায়নের অভাব শিক্ষকদের মধ্যে অনুপ্রেরণার ঘাটতি তৈরি করে।

গবেষণার মাধ্যমে অধ্যাপনায় উৎকর্ষতা আনা সম্ভব কিভাবে?

১. অর্থায়নের ব্যবস্থা করা:

সরকারি বা বেসরকারি উৎস থেকে গবেষণার জন্য ফান্ড সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

– উদাহরণ: চীনের সরকার গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

২. গবেষণা প্রশিক্ষণ:

শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত গবেষণার উপর প্রশিক্ষণ আয়োজন করা উচিত।

৩. উৎসাহ প্রদান:

গবেষণায় সফলতা অর্জনকারী শিক্ষকদের পুরস্কৃত করা এবং তাদের সাফল্য স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

৪. সমন্বিত পরিবেশ তৈরি:

একটি গবেষণা-সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করতে পারে।

উপসংহার

“গবেষণা-বিহীন অধ্যাপনা” শিক্ষার উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা। এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের অগ্রগতির জন্য ক্ষতিকর। গবেষণা একটি শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। সুতরাং, গবেষণা ও অধ্যাপনার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে একাডেমিক উৎকর্ষতার দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–https://www.facebook.com/share/p/17QNP3oPKN/

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
গবেষণায় হাতে খড়ি

গবেষণা প্রবন্ধ: প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও প্রাসঙ্গিকতা!

লেখক- আজিজুল হক ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। গবেষণার উদ্দেশ্য এবং বিষয়বস্তু অনুযায়ী...

গবেষণায় হাতে খড়ি

রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশনার অন্ধকার দিক কেন?

লেখক- আজিজুল হক ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশনার জগতে প্রতিনিয়ত...

গবেষণায় হাতে খড়ি

শিক্ষক: জ্ঞান বিতরণকারী নয়, জ্ঞান সৃষ্টিকারী!

প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষককে সাধারণত একটি...

গবেষণায় হাতে খড়ি

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষকের নিজস্ব ল্যাবরেটরী থাকা উচিত!

প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের দায়িত্ব...

গবেষণায় হাতে খড়ি

প্রিপ্রিন্ট(preprint) আধুনিক গবেষণার এক যুগান্তকারী মাধ্যম!

লেখক- আজিজুল হক ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে প্রিপ্রিন্ট (Preprint)...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.