পানি আমাদের সবার জীবনে অতপ্রতভাবে জড়িত। তবে পানি নিয়েও কি গবেষনা হতে পারে? অবাক হলেও এটা সত্যি যে কিভাবে বিশুদ্ধ পানি প্রস্তুত করা যায় এবং মানুষের খাবার উপযোগী করা যায় তা নিয়ে অনেক গবেষনা হচ্ছে। গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমরা এবার কথা বলেছিলাম পানি গবেষক মোঃ রিপাজ উদ্দিন এর সাথে। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এ কর্মরত। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন
আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে পরিবেশ রসায়নে মাস্টার্স করেছি এবং আমার থিসিসের বিষয় ছিল কর্নফুলী নদীর পানির গুনগত মান যাচাই করা এবং সেটা কতটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা বের করা। আমার ৮ বছরের বেশী চাকুরী ও গবেষণা অভিজ্ঞতা আছে। এই সময়ে আমি ৩০টির বেশী আন্তর্জাতিক গবেষণা আর্টিকেল পাবলিশ করেছি তারমধ্য ২৪ আর্টিকেল স্কোপাস ইন্ডেক্স ভুক্ত। এছাড়াও ৪টি পন্যের উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছি যার প্রসেস ও প্যাটেন্ট পাস হয়েছে। এছাড়াও আরো ৮টি পন্যের উৎপাদন কৌশল ডকুমেন্টস সাবমিট করা আছে।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমি মূলত পানি নিয়ে কাজ করি। মিনারেল ওয়াটার প্রোডাকশন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং, এলকালি ওয়াটার প্রোডাকশন, পানি থেকে ক্ষতিকর ধাতুর পরিশোধন, বিভিন্ন কম্পাউন্ড তৈরী করে পানি ফিল্টার তৈরী, পানির লবনাক্ত দূরীকরন, রিভার রেস্টোরেশন, ব্লু ইকোনমি, ডেলটা প্ল্যান-২১০০, জিও থার্মাল এনার্জি, IOT ডিভাইস এবং মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে পানির কোয়ালিটি মনিটরিং, উপকূলীয় অঞ্চলের পানির গুনগত মান যাচাই, পানি মাটি ও মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক উপস্থিত নির্নয়, একটিভিটেড কার্বন তৈরী, গোলপাতার রস থেকে ভিনেগার তৈরী, ফল থেকে বিস্কুট তৈরী, উপকূলীয় অঞ্চলের কেওড়া থেকে জ্যাম, জেলী, কেওড়া জল, পিকেল,ও কোলা উৎপাদন করা এবং ভিটামিন সি এক্সটাক্ট করা। এছাড়াও বিভিন্ন ওষুধী গাছ থেকে বিভিন্ন কম্পাউন্ড পৃথক করে তাদের বায়ো একটিভিটি দেখা নিয়ে আপাতত কাজ করছি।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?
আসলে আমার গবেষণাগুলো সরাসরি শিল্প উৎপাদন ও পরিবেশ এর সাথে সম্পর্কিত । আমার উদ্ভাবিত পন্য বাজারে আসলে তা হতে দেশীয় কাঁচামাল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচ পন্য উৎপাদন করে মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হবেনা, মানুষের কর্মসংস্থান হবে, পুষ্টি ঘাটতি মিটবে, এবং দেশীয় অর্থনীতির চাকা সচল হবে। আর পরিবেশ ঠিক থাকলে এদেশের মানুষ সুস্থ থাকবে। তাই পরিবেশ ঠিক রাখা খুবই জরুরি।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
গবেষণা জন্য প্রধান অস্ত্র হল লেগে থাকা। কোনভাবে হতাশ হওয়া যাবেনা। প্রচুর পড়তে হবে এবং একটিভ হতে হবে। ডেডিকেশনের কোন বিকল্প নাই। গবেষণা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে সেজন্য প্রচুর প্ল্যান এবং মাইন্ড সেটাপ ঠিক রাখতে হবে। বিভিন্ন এক্সপার্ট গ্রুপের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক রাখতে হবে। নতুন নতুন রিসার্চ গ্রুপের সাথে কোলাবোরেশান করতে হবে। আর গবেষণার জন্য নীতি ও নৈতিকতা নিয়ে কোন কম্প্রোমাইজ করা যাবেনা।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
গবেষণা ছাড়া উন্নত জাতি, সভ্য জাতি এবং বিজ্ঞান মনস্ক জাতি গঠন সম্ভব নয়। তাই তরুনদের উচিৎ গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া এবং দেশকে উন্নত জাতির কাতারে নিয়ে যাওয়া। তরুনরা যদি হেরে যায় কিংবা হাল না ধরে তাহলে এই বাংলাদেশ হেরে যাবে এবং কখনো উন্নত জাতি হতে পারবেনা।
আপনার যোগাযোগের তথ্য
md.ripajuddin @ জিমেইল.com
Leave a comment