বিজ্ঞানী জাহিন আলম বর্তমানে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন বিষয় এবং এর প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করেন। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।
আমি মোঃ জাহিন আলম। আমি ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) থেকে ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) বিভাগে আমার B.Sc. ডিগ্রি অর্জন করেছি। আমি একই বিভাগে BUET এ আমার M.Sc. ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছিলাম, তবে BUET জুলাই ২০২৪ এর সময় বন্ধ থাকায় তা আপাতত স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে আমি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে চলে এসেছি এবং Johns Hopkins University-এর ইলেকট্রিক্যাল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং (ECE) বিভাগে আমার Ph.D. ডিগ্রি অর্জনের জন্য অধ্যয়ন করছি। আমার বর্তমান গবেষণা আগ্রহের মধ্যে রয়েছে বায়োমেডিক্যাল সিগন্যাল এবং ইমেজ প্রসেসিং, কোয়ান্টিটেটিভ আলট্রাসাউন্ড, সুপারভাইজড এবং আনসুপারভাইজড ডিপ লার্নিং, এবং স্বাস্থ্যসেবায় মেশিন লার্নিং।
আপনার গবেষনার বিষয় কি? আপনার মূল গবেষনার বিষয়টি আমাদের জন্য একটু সহজভাবে লিখুন
আমার বর্তমান গবেষণার প্রধান ফোকাস হল আল্ট্রাসাউন্ড। বিশেষ করে, আল্ট্রাসাউন্ড শিয়ার ওয়েভ ইলাস্টোগ্রাফি (SWE)। সহজভাবে বলতে গেলে, কোনো টিস্যু অঞ্চলে একটি অ্যাকোস্টিক রেডিয়েশন ফোর্স (ARF) কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং সেই কেন্দ্র থেকে একটি তরঙ্গ টিস্যুর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই তরঙ্গটিকে শিয়ার ওয়েভ বলা হয়। শিয়ার ওয়েভের গতি সাধারণ টিস্যুতে একরকম হয় এবং টিউমারে অন্যরকম। শিয়ার ওয়েভের গতি নির্ণয় করা ক্লিনিকাল সেটিংয়ে টিস্যুর স্বাস্থ্য স্ক্রিনিংয়ে এবং সম্ভাব্য ক্যান্সার নির্ণয়ে সাহায্য করে। কিন্তু আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিংয়ে (আর্টিফ্যাক্ট এবং নয়েজ) এটি করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, এবং এর জন্য বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং সমাধান খুঁজে বের করাই আমার গবেষণার মূল লক্ষ্য।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?
আমার কাজগুলো আশা করি আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিংয়ের মান উন্নত করতে সহায়তা করবে। এটি চিকিৎসকদের টিউমার সনাক্ত করতে এবং দ্রুত ও সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ে সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যসেবায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আল্ট্রাসাউন্ডের মতো একটি মডালিটি, যা একটি বহনযোগ্য সিস্টেম, সেই সিদ্ধান্তকে আরও ভালো করতে সহায়ক হবে।
গবেষনা কাজের কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?
আমার জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা ছিল একটি প্রতিযোগিতার সময়। আমি একটি দলের অংশ ছিলাম যারা IEEE Video-and-Image Processing Cup (2020) এ ফিশআই ক্যামেরা ইমেজ থেকে যানবাহন সনাক্তকরণ ও ট্র্যাকিং বিষয়ে প্রতিযোগিতা করেছিল। আমরা ১ম রানার-আপ পুরস্কার অর্জন করেছিলাম। তবে, বিজয়ী দলের সমাধানটি ছিল খুবই চমৎকার। তারা তাদের কাজে ছোট ছোট ধাপ তৈরি করে সমাধানটিকে সহজ ও আরও বোধগম্য করে তুলেছিল। এতে আমি উপলব্ধি করেছি যে, কোনো কঠিন সমস্যাকে সহজ করে এবং ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নেওয়া গবেষণার সবচেয়ে ভালো উপায়।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
(১) প্রতিটি কাজের জন্য সময় ভাগ করে নেওয়া, (২) একই সমস্যার সমাধানের জন্য আরও ভালো এবং সহজ উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা, (৩) কঠোর পরিশ্রম। এছাড়াও, এই তিনটি গুণই একজন গবেষকের Passion-এর মধ্যে থাকতে হবে। একজন সুখী গবেষকই তার কাজের সাথে অগ্রগতি অর্জন করে।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
তোমার Passion খুঁজে বের করার চেষ্টা করো যা ‘কাজ’ কে ‘আনন্দ’ এর মতো মনে করায়। তখন তোমার গবেষণা থেকে অনেক সম্ভাবনা এবং ইতিবাচক ফলাফল উদ্ভূত হবে। জীবন কঠিন, গবেষণাও তেমনই। তবে চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করো এবং কখনো হাল ছাড়বে না। এবং মনে রেখো, র্যাঞ্চো যা বলেছিল, ‘Don’t run after success. Run after excellence in your field of passion. Success will follow.’
আপনার যোগাযোগের তথ্য:
(1) Email: alammdjahin @ gmail.com. (2) Google Scholar: https://scholar.google.com/citations?hl=en&user=52ejDFsAAAAJ
আপনার লিংকডইন সাইটের ওয়েবএড্রেস
https://www.linkedin.com/in/md-jahin-alam
আপনার ওয়েবসাইট, গবেষনাকাজের লিংক ইত্যাদি
https://scholar.google.com/citations?hl=en&user=52ejDFsAAAAJ
আমরা বিজ্ঞানী জাহিন আলম এর উত্তোরত্তর সফলতা কামনা করি এবং বিজ্ঞানী ডট অর্গ এর পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
Leave a comment