চীনের ১৬ বছর বয়সী একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র, লান বোওয়েন, নিজেই একটি ভাঁজযোগ্য মোবাইল ফোন তৈরি করেছেন, যা অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর ৩ডি প্রিন্টার ও পুরোনো মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে একটি উল্লম্বভাবে ভাঁজযোগ্য (vertical foldable) স্মার্টফোন তৈরি করেছেন, যা ইতোমধ্যেই ৪.৭ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে এবং ৪ লক্ষ লাইক পেয়েছে।
নতুন কিছু করার আগ্রহ
লান বোওয়েন হুবেই প্রদেশের ইচাং শহরের ইলিং হাই স্কুলের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি জানান, বর্তমান বাজারে অনেক ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন থাকলেও উল্লম্বভাবে ভাঁজ হওয়া এবং বাইরের দিকের স্ক্রিন উন্মুক্ত থাকা স্মার্টফোনের কোনো মডেল নেই। এই ঘাটতি থেকেই তিনি নতুন কিছু তৈরির অনুপ্রেরণা পান।
কীভাবে তৈরি হলো এই ফোন?
ফোন তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি তিনি ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, যা মাত্র ৬ মিনিটের একটি ক্লিপ। এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, কীভাবে তিনি ৩ডি প্রিন্টার ব্যবহার করে ফোনের কাঠামো তৈরি করেন এবং বিভিন্ন পুরোনো স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে ফোনটিকে কার্যকর করেন।
লানের ভাষায়, “আমি এটিকে ‘মিল কার্ড মেশিন’ বলি, কারণ এটি ভাঁজ করার পর ক্যান্টিনের মিল কার্ডের মতো আকার ধারণ করে, যদিও এটি কিছুটা মোটা।”
ভাঁজ করা অবস্থায় ফোনটির পুরুত্ব মাত্র ১৬ মিলিমিটার। তার উদ্ভাবন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং এমনকি একটি প্রধান স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও তার কাজের প্রশংসা করেছে।
প্রযুক্তিগত দিক ও উদ্ভাবনের সীমাবদ্ধতা
লান বোওয়েন তার ফোন তৈরিতে কী ধরনের ৩ডি প্রিন্টার ব্যবহার করেছেন তা এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি, তবে সাধারণত এ ধরনের প্রোটোটাইপ তৈরিতে FDM (Fused Deposition Modeling) অথবা SLA (Stereolithography) ৩ডি প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়।
এই ফোনটি পুরোনো স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশ যেমন মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে, ব্যাটারি এবং ক্যামেরা পুনর্ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, যা ইলেকট্রনিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের একটি ভালো উদাহরণ। তবে, ফোনটির কার্যকারিতা কতটুকু দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এটি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী কি না, তা এখনও পর্যালোচনার বিষয়।
সমাজে প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা
লান বোওয়েনের এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, সীমিত উপকরণ ব্যবহার করেও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সম্ভব। তার এই কাজ অন্যান্য প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণদের নতুন কিছু সৃষ্টির প্রতি অনুপ্রাণিত করবে।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে, তরুণদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লানের মতো তরুণদের যদি প্রয়োজনীয় সুযোগ ও সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে তারা ভবিষ্যতে প্রযুক্তি জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে।
৩ডি প্রিন্টিং ও শিক্ষাক্ষেত্রে সম্ভাবনা
৩ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, এবং এটি শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক্সেই নয়, মেডিকেল, নির্মাণ এবং গবেষণা ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, যা তাদের নকশা, প্রকৌশল, এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারা বিকাশে সহায়তা করবে। যদি শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ডি প্রিন্টিং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়, তবে ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বিকশিত হবে।
লান বোওয়েনের এই চমকপ্রদ উদ্ভাবন প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে— নতুন কিছু তৈরি করতে চাইলে বড় কোম্পানি বা উচ্চমূল্যের সরঞ্জাম দরকার নেই, প্রয়োজন শুধু একটি নতুন ভাবনা ও শেখার আগ্রহ!
Leave a comment