লেখক- আজিজুল হক
ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক।
রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশনার জগতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি নতুন শব্দ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে: পেপার মিল, রিভিউ মিল এবং সাইটেশন মিল। এই শব্দগুলো আর্টিকেল প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রতারণামূলক এবং অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতীক। এই তিনটি প্রক্রিয়া আলাদা হলেও এদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং প্রায়শই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
পেপার মিল:
পেপার মিল হলো এমন সংস্থা যা বৃহৎ পরিসরে রিসার্চ আর্টিকেল তৈরি এবং বিক্রি করে। তবে, এই আর্টিকেলের বেশিরভাগই নিম্নমানের এবং মিথ্যা তথ্য, নকল গবেষণা কিংবা অপ্রাসঙ্গিক ডেটা দ্বারা পূর্ণ। গবেষকদের ওপর ক্রমবর্ধমান প্রকাশনার চাপকে পুঁজি করে, পেপার মিল সহজেই গবেষণার মানহীন কাজ বাজারজাত করে। অনেক গবেষক পেপার মিলকে অর্থ প্রদান করে তাদের নাম এই আর্টিকেলে অন্তর্ভুক্ত করেন। পেপার মিল তাদের কাজ নিশ্চিত করার জন্য নানাবিধ সন্দেহজনক কৌশল অবলম্বন করে। তারা জার্নালের সম্পাদকদের ঘুষ প্রদান করে দ্রুত আর্টিকেল প্রকাশের ব্যবস্থা করে। অনেক ক্ষেত্রে, সন্দেহজনক রিভিউয়ার বা সম্পাদকদের মাধ্যমে তারা নিম্নমানের কাজ প্রকাশ করে। এমনকি বৈধ সম্পাদকীয় বোর্ডে তাদের নিজস্ব এজেন্টদের স্থান দেওয়ার মাধ্যমে তারা পুরো প্রক্রিয়াটিকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসে।
রিভিউ মিল
রিভিউ মিল প্রক্রিয়ায় সন্দেহজনক সংস্থা বা ব্যক্তি নকল রিভিউ প্রদান করে। এই রিভিউগুলো সাধারণত প্রস্তুতকৃত এবং পূর্বনির্ধারিত টেমপ্লেট ব্যবহার করে তৈরি হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো গবেষকদের নির্দিষ্ট আর্টিকেল উল্লেখ করতে বাধ্য করা। এর মাধ্যমে তারা নির্দিষ্ট গবেষকদের সাইটেশন বাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এই কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তি অর্থ গ্রহণ করে।
সাইটেশন মিল
সাইটেশন মিল সংস্থার কাজ হলো রিসার্চ আর্টিকেলের সাইটেশন বিক্রি করা। এটি গবেষণা জগতে কৃত্রিম ইমপ্যাক্ট সৃষ্টির একটি বড় মাধ্যম। এই সাইটেশনগুলো নকল আর্টিকেলের মাধ্যমে বৈধ আর্টিকেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা গবেষণার প্রকৃত মানকে অবমূল্যায়ন করে। সাইটেশন মিলের মাধ্যমে কিছু গবেষক কৃত্রিমভাবে তাদের ইমপ্যাক্ট বাড়ায় এবং রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশনার নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তিন মিলের পারস্পরিক সম্পর্ক
পেপার মিল, রিভিউ মিল এবং সাইটেশন মিল একে অপরের পরিপূরক। পেপার মিল নিম্নমানের আর্টিকেল তৈরি করে, রিভিউ মিল সেই আর্টিকেলগুলোকে বৈধতার মুখোশ দেয় এবং সাইটেশন মিল সেগুলির সাইটেশন বৃদ্ধি করে। এই তিনটি প্রক্রিয়া একসঙ্গে কাজ করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপর একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ইমপ্যাক্ট ফেলে।
সমাধান কী?
বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা এবং গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে হলে গবেষক, প্রকাশক এবং জার্নালগুলোকে আরও সতর্ক হতে হবে। স্বচ্ছ এবং শক্তিশালী সম্পাদকীয় বোর্ড তৈরি করা, সন্দেহজনক কার্যকলাপ সনাক্ত করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, এবং গবেষণায় স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার ওপর জোর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পেপার মিল, রিভিউ মিল এবং সাইটেশন মিল বৈজ্ঞানিক জগতের জন্য একটি বড় হুমকি, যা রুখতে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–https://www.facebook.com/share/p/15k6qQuDkV/
Leave a comment