বাংলাদেশের সাহিত্য ও জ্ঞানচর্চার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রতি বছর বিভিন্ন শাখায় প্রদান করা হয়। এবছর, বিজ্ঞান বিভাগে এই পুরস্কার অর্জন করেছেন দেশের স্বনামধন্য আণবিক বিজ্ঞানী ড. রেজাউর রহমান।
📖 বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও এর গুরুত্ব
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ১৯৬০ সাল থেকে প্রদান করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশি লেখকদের সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পুরস্কার বিভিন্ন শাখায় প্রদান করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে গবেষণা, প্রবন্ধ, কবিতা, উপন্যাস, শিশু সাহিত্য, অনুবাদ সাহিত্য এবং বিজ্ঞান। বিজ্ঞান বিভাগে যারা এই পুরস্কার লাভ করেন, তারা সাধারণত বিজ্ঞানমনস্ক লেখালেখি এবং সাধারণ পাঠকদের জন্য বিজ্ঞানকে সহজবোধ্য করে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন।
🏆 বিজ্ঞান বিভাগে পুরস্কৃত ড. রেজাউর রহমান
ড. রেজাউর রহমান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আণবিক বিজ্ঞানী এবং কীটতত্ত্ববিদ। তিনি ১৯৪৪ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭৯ সালে চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস থেকে কীটতত্ত্বে পিএইচডি লাভ করেন। তার গবেষণার মূল ক্ষেত্র ছিল কীটপতঙ্গের উপর রেডিয়েশনের প্রভাব। তিনি ১৯৬৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি সাভারে ফুড অ্যান্ড রেডিয়েশন বায়োলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন এবং ফলের মাছি নিয়ে মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করেন। পাশাপাশি, ১৯৯১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি স্নাতকোত্তর মানের পাঠ্যপুস্তকসহ ১৫টি জনপ্রিয় বিজ্ঞানগ্রন্থ রচনা করেছেন এবং শতাধিক বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে “টিকটিকি থেকে ডাইনোসর”, “কীটপতঙ্গ”, এবং “মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধানে”। ২০২৪ সালে, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এ বিজ্ঞান বিভাগে তাকে সম্মানিত করা হয়। তার স্ত্রী হালিমা খাতুন এবং তাদের দুই কন্যা নীলাঞ্জনা ও মঞ্জুলিকা।
বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান লেখালেখিতে তার ভূমিকা অনন্য। তিনি শুধুমাত্র গবেষণাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং বিজ্ঞানবিষয়ক পাঠ্যবই, জনপ্রিয় বিজ্ঞান, এবং কীটতত্ত্ব নিয়ে বই লিখে সাধারণ মানুষের মাঝে বিজ্ঞান সচেতনতা ছড়িয়ে দিয়েছেন। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি স্নাতকোত্তর মানের পাঠ্যপুস্তকসহ ১৫টি জনপ্রিয় বিজ্ঞানগ্রন্থ রচনা করেছেন এবং শতাধিক বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে “টিকটিকি থেকে ডাইনোসর”, “কীটপতঙ্গ”, এবং “মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধানে”।

🎤 পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রদান করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা সাহিত্যিক, গবেষক এবং বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন।
📚 বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ও ড. রেজাউর রহমানের ভূমিকা
ড. রেজাউর রহমান তার লেখার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী করার চেষ্টা করেছেন। তার বইগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান ও গণিতের রহস্য, কীটপতঙ্গের জীবনচক্র, এবং পরমাণুর জগৎ উল্লেখযোগ্য। তার লেখালেখির মাধ্যমে পাঠকদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন।
🔎 বিজ্ঞান ও সাহিত্য একসাথে
বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও সাহিত্যের সমন্বিত প্রচেষ্টায় লেখক এবং গবেষকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানবিষয়ক সাহিত্য রচনা এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ড. রেজাউর রহমানের কাজ অনুপ্রেরণাদায়ক।এ ধরনের বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ও গবেষকদের কাজ আরও বেশি প্রচার করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার বিস্তারে বিজ্ঞানী ও লেখকদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়া উচিত।
Leave a comment