একটি সাধারণ অভ্যাস—কারও প্রতি সৌজন্য প্রকাশ। কিন্তু আপনি যদি চ্যাটজিপিটিকে বলছেন “ধন্যবাদ” বা “অনুগ্রহ করে,” তাহলে জানবেন, এই ছোট্ট সৌজন্যবোধের খরচ কিন্তু বিশাল।
সম্প্রতি, ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান স্বীকার করেছেন যে এই ধরণের ভদ্র আচরণ তাদের এআই মডেলের ওপর প্রচুর কম্পিউটিং চাপ সৃষ্টি করছে, যার ফলে বিদ্যুৎ খরচে যোগ হচ্ছে প্রতি বছর কয়েক কোটি ডলার!
একজন ব্যবহারকারী X (সাবেক টুইটার)-এ মজা করে প্রশ্ন করেন, “লোকেরা যখন চ্যাটজিপিটিকে ‘প্লিজ’ আর ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে, তখন ওপেনএআই-এর কত বিদ্যুৎ খরচ হয়?” উত্তরে অল্টম্যান বলেন, “এটা কয়েক কোটি ডলারের মতো খরচ, কিন্তু ভালো খরচ।”
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—ভদ্র হওয়াটা কি সত্যিই প্রয়োজন?
মাইক্রোসফটের ডিজাইন ম্যানেজার কার্টিস বিবার্সের মতে, “ভদ্রতা এআইকে আরও সহযোগিতাপূর্ণ ও পেশাদার প্রতিক্রিয়া দিতে উৎসাহিত করে।” মাইক্রোসফটের WorkLab-এর এক নোটে বলা হয়েছে, “আপনি যতটা ভদ্র, স্পষ্ট ও প্রফেশনাল হবেন, এআইও সেভাবেই প্রতিক্রিয়া দেবে।”
২০২৪ সালের শেষের দিকে এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৭% আমেরিকান চ্যাটবট ব্যবহারকারী তাদের এআইয়ের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করেন। তাদের মধ্যে ৫৫% মনে করেন এটি ‘সঠিক কাজ’, আর ১২% তা করেন ভবিষ্যতের এআই বিপ্লব ঠেকাতে—যদি কখনও এমন কিছু ঘটে!
সৌজন্যের দামে পরিবেশের ক্ষতি?
তবে সমস্যার গভীরতা এখানেই। ওয়াশিংটন পোস্ট ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১০০ শব্দের একটি এআই-উৎপাদিত ইমেইল তৈরি করতে লাগে ০.১৪ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ, যা ১৪টি LED বাতি এক ঘণ্টা জ্বালাতে যথেষ্ট।
ধরা যাক, আপনি প্রতি সপ্তাহে একটি করে এআই ইমেইল পাঠান। তাহলে বছরে প্রায় ৭.৫ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, যা ওয়াশিংটন ডিসির ৯টি পরিবারের এক ঘণ্টার চাহিদার সমান।
এখন ভাবুন, বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লম্বা প্রম্পট পাঠানো হচ্ছে এআই চ্যাটবটগুলোর কাছে। এটি যেন এক বিশাল বিদ্যুৎ খরচের ফাঁদে পরিণত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে এআই-চালিত ডেটা সেন্টারগুলো দুনিয়ার মোট বিদ্যুৎ খরচের প্রায় ২% ব্যবহার করছে, যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
তাহলে কী করবো?
এআইকে “ধন্যবাদ” বা “অনুগ্রহ করে” বলা অবশ্যই ভদ্রতার পরিচয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে—এই আচরণগুলোরও পরিবেশগত প্রভাব আছে।
তাই আপনি যদি চ্যাটজিপিটিকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চান, একবার ভেবে দেখুন—এই ইমেইলটা নিজেই লিখে ফেললে কেমন হয়? এতে পরিবেশও বাঁচবে, আর আপনার মস্তিষ্কও থাকবে সক্রিয়!
সম্পাদকীয় মন্তব্য: ভদ্রতা আমাদের মানবিক গুণ। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে সৌজন্যের এই নতুন মাত্রা একদিকে যেমন এআইয়ের প্রতিক্রিয়া উন্নত করছে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর চাপও সৃষ্টি করছে। ভবিষ্যতের টেকসই পৃথিবীর কথা ভাবতে হলে আমাদের ব্যবহারও হতে হবে আরও সচেতন ও পরিবেশবান্ধব।
আপনার মতামত জানান আপনি কি এআইয়ের সাথে ভদ্র আচরণ করেন? আপনি কি জানতেন এই ছোট্ট সৌজন্যও পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে? আপনার মতামত জানান biggani.org-এ কমেন্ট করে!
Leave a comment