বিজ্ঞানী.অর্গ এ আমরা দেশ বিদেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকার নিয়ে থাকি। আজকে আমাদের সেই সিরিজে কথা বলেছিলাম মো. নাজীবুল ইসলাম এর।
বিজ্ঞানীর পরিচয়:
মো. নাজীবুল ইসলাম একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন বুয়েট বা বাংলাদেশ প্রকৌশলি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের Texas A&M বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার বর্তমান গবেষনার বিষয়বস্তু Microfluidics, Electrokinetics, Low-cost fabrication, Fluid-flow Modeling, Global Health।
কোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করবো?
বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তা হল কোন বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। বিশেষ করে এইচএসসি পাশের পরে এই প্রশ্নটির মুখোমুখি কিশোর/কিশোরীদের হতে হয়। এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলাম নাজীবুলের সাথে। তিনি বললেন যে কোন বিষয় নিয়ে পড়বো তা সিদ্ধান্ত নেবার আগে সেই বিষয়ে কর্মরত মানুষদের জীবন ও কাজকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেই কাজটি আমি কি করতে পারবো? সেইরকম একটি লাইফস্টাইল কি আমার লক্ষ্য। এই ব্যাপারগুলি আমাদের দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিজেকে জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা নিজের সেই সক্ষমতা আছে কিনা, তা কিন্তু আমরা নিজেরাই ভালো বুঝি। তৃতীয়ত, আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের পরিবার কি চাচ্ছে তা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। কেননা আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিবার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আরেকটি বিষয় নিয়ে আমাদের কিশোর/কিশোরিরা প্রায়শই দ্বিধার মধ্যে থাকে তা হল, employbility বা চাকুরি পাবার সম্ভাবনা। এই বিষয়ে নাজীবুল এর দৃষ্টিভঙ্গি হল, যে কোন বিষয় নিয়ে পরিশ্রম করলে সেই বিষয়েই চাকুরি হবে, তাই এটা নিয়ে তেমন চিন্তিত না হলেও হবে।
ভালো ইন্সটিটিউট ও মানসিক সাপোর্ট
পিএইচডিতে গবেষনা করার সময় সেই ল্যাব, প্রোফেসর, এবং প্রতিষ্ঠানের একটি ভালো সাপোর্ট দরকার। এই প্রসঙ্গে তিনি তার স্ত্রী এর অভিজ্ঞতা বলেন যে, পিএইচডি এর মাঝপথেই তার প্রোফেসর মৃত্যু বরণ করেন। সেই কঠিন সময়ে তার প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রোফেসররা যেভাবে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করেছে তা খুব সাহায্য করেছিল।
আমেরিকার গল্প
কথা প্রসঙ্গে আমেরিকা সমন্ধে উনি একটি কথা বললেন যা বেশ ভালো লাগলো। আমেরিকার সব জায়গাতেই সভ্যতার আলো পৌছে গেলেও টাকার আলো পৌছেনি (অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়)। তার এই মন্তব্যেই আমেরিকার একটি চিত্র আমরা পাই যার সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত নই।
সহজলভ্য ও কম খরচের বায়োসেন্সর
নাজীবুল বর্তমানে যে বিষয়টি নিয়ে গবেষনা করছেন তা হল প্রকৃতিতে যে সমস্ত উপাদান রয়েছে তা মানব কল্যাণে কিভাবে ব্যবহার করা যায়। মাইক্রোফ্লুয়িডিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সহজলভ্য এবং কম খরচে কাগজেই তৈরী করা যাবে এমন বায়োসেন্সর তৈরী করেন। বর্তমানে এই প্রযুক্তিটি কোভিডের সময়ে এন্টিজেন টেস্টের সময়ে বহুল ভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
বিজ্ঞানী হিসাবে কৈভাবে তৈরী হবো?
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা হল ফলাফলকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অর্থাত একটি প্রশ্নের সম্ভ্যাব্য উত্তর জানা থাকে, কিন্তু বিভিন্ন ভাবে সেই উত্তরটি বের করতে হয়। এই ক্ষেত্রে ফলাফলটি কিন্তু জানা। অপরদিকে বিজ্ঞানীরা সাধারণত যেসব প্রশ্নের উত্তর বের করার চেষ্টা করেনা তা অজানা। এটিকে উনি Open Ended নামে অভিহিত করলেন। আমাদের যে সমস্যা হয় এই পার্থক্যটা বুঝতে পারি না। তাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার। একজন বিজ্ঞানী হিসাবে আমাকে মনে রাখতে হবে যে আমি যেটি নিয়ে গবেষনা করছি, তার উত্তর নাও পাওয়া যেতে পারে। হয়তবো নেগেটিভ কোন উত্তর আমরা পেলাম, কিন্তু সেটাও কিন্তু একটি আবিষ্কার। এই প্রসঙ্গে অনেক আগের এক বিজ্ঞানীর বক্তব্য হল, মনে করা যাক একটা ফাকা রুমে আমরা কিছু খুঁজছি। অনেক খুঁজেও আমরা কিছু পেলাম না। এই যে কিছু পেলাম না- সেটাই কিন্তু আমার আবিষ্কার। আমরা আবিষ্কার করলাম যে ওই রুমে সেটি নেই। এইভাবে অনেক বিজ্ঞানী অনেক জায়গাতে অজানা অনেক কিছুই খোজেন। অনেক সময় পান, অনেক সময়ই পাননা। এই যে তিনি কিছু পেলেন না, সেটাও কিন্তু আবিষ্কার।
নাজীবুল বললেন, গবেষনার কাজের এই ভ্রমণটা বেশী গুরুত্বপূর্ন, তার ফলাফলের থেকে।
বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব কি?
নাজীবুল বললেন যে একজন বিজ্ঞানী মূলত প্রথমে নতুন কোন জ্ঞান সংগ্রহ করেন। এরপরে দ্বিতীয় যে কাজটি তার তা হল, সেই জ্ঞানটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপরে তৃতীয় কাজ হল, সেই লব্ধ জ্ঞানটি সমাজের কোন কাজে লাগবে তা বোঝা।
পরিশেষে তিনি জীবনকে উপভোগ করতে বললেন। এই যে এই গ্রহতে আমরা জন্মগ্রহন করেছি। সৃষ্টিকর্তা আমাদের কত কিছু দিয়েছেন, সেই সব কে উপলব্ধি করা, সেই সবকে উপভোগ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পুরো সাক্ষাতকারটি দেখুন:
সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছি, আমি ড. মশিউর রহমান
তারিখ, ১৫ নভেম্বর ২০২২, সিঙ্গাপুর
Leave a comment