বিজ্ঞান বিষয়ক খবরমহাকাশ

নাসার সংকট: ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

Share
Share

নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
biggani.org

মহাকাশ গবেষণার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান নাসা সম্প্রতি এমন এক সংকটে পড়েছে, যা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক অভ্যন্তরীণ টাউন হলে নাসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে হতাশার চিহ্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে নাসার সামনে বাজেট সংকোচন, ব্যাপক ছাঁটাই ও নেতৃত্বের শূন্যতার হুমকি প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে।

আতঙ্কের শুরু

নাসার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে সম্প্রতি আরস টেকনিকার সাংবাদিক স্টিফেন ক্লার্ক এক রিপোর্টে জানান, অঘোষিতভাবে অনুষ্ঠিত এবং পরে সরিয়ে নেওয়া এই টাউন হল মিটিংটি সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জ্যানেট পেট্রোকে কর্মীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে দেখা যায়। প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে তাকে এমন অসহায় লাগছিল যেন তিনি কোনো জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।

পেট্রোর পাশে দাঁড়ানো নতুন চিফ অব স্টাফ ব্রায়ান হিউজের বক্তব্য এই আশঙ্কাকে আরও গভীর করেছে। হিউজ এর আগে ফ্লোরিডায় রাজনৈতিক পরামর্শক ছিলেন এবং ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি বক্তব্যে বলেন, “আমি আমাদের প্রতিষ্ঠানকে সরলীকরণ করতে চাই, আমাদের ব্যবসা পরিচালনার ধরনে নতুন করে মনোযোগ দিতে চাই, এবং কর্মপদ্ধতি আরও সংক্ষিপ্ত করতে চাই।” এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় ট্রাম্প প্রশাসন নাসার সংস্কৃতি ও কাঠামো ব্যাপকভাবে পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে।

বাজেট ও কর্মী সংকট

নাসার কর্মীদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা বাজেট সংকোচনের প্রস্তাব। ২০২৬ অর্থবছর থেকে নাসার বাজেট ২৪ শতাংশ হ্রাস এবং কর্মীসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ কমানোর পরিকল্পনা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরের জন্য এই কাটছাঁটের পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই কর্মীদের মধ্যে তীব্র অস্থিরতা তৈরি করেছে।

নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক পেট্রো আশ্বাস দেয়ার চেষ্টা করে বলেন, “নাসার ব্র্যান্ড এখনও খুব শক্তিশালী এবং সামনে আমাদের অনেক উত্তেজনাপূর্ণ মিশন রয়েছে। আমি জানি, এটা আমাদের জন্য কঠিন সময় হবে, কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যত তাড়াতাড়ি নতুন তথ্য আসবে, আমি আপনাদের সাথে তা শেয়ার করব।”

কিন্তু পেট্রোর আশ্বাসেও কর্মীদের আশঙ্কা পুরোপুরি দূর হয়নি। তিনি নাসার প্রথম নারী হিসেবে কেনেডি স্পেস সেন্টারের পরিচালক ছিলেন এবং তার দক্ষতা সর্বজনবিদিত হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা না থাকায় তিনি বড় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছেন না।

প্রশাসনিক শূন্যতা

ব্রায়ান হিউজ কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে প্রশাসনিক শূন্যতার কথা আরও স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানান, নাসার নতুন প্রশাসক নিয়োগে হোয়াইট হাউস তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ইলন মাস্কের সুপারিশে বিলিয়নিয়ার মহাকাশ পর্যটক জ্যারেড আইজ্যাকম্যানকে প্রশাসক পদে মনোনীত করা হলেও ডেমোক্র্যাটদের পূর্বে অনুদান দেওয়ার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে।

হিউজ বলেন, “আগামী ছয় মাসের আগে নতুন প্রশাসক নিয়োগ পাওয়া কঠিন, এমনকি এই প্রক্রিয়া আট থেকে নয় মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে। তবে এটা শুধুই ধারণা।”

আইজ্যাকম্যান বিতর্কের ছায়া

জ্যারেড আইজ্যাকম্যানের মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘটনা শুধু নাসার প্রশাসনিক সংকটই সৃষ্টি করেনি, বরং কর্মীদের মনোবলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই বিতর্কের জেরে ইলন মাস্কও প্রশাসনের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং ট্রাম্পের সুনজর হারান। পুরো বিষয়টি নাসার কর্মীদের মনে এমন ধারণা তৈরি করেছে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে নাসার প্রতি খারাপ আচরণটাই নতুন স্বাভাবিক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা

আরস টেকনিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) স্পষ্ট বলেন, “নাসা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যয়ের মুখোমুখি।” নাসার ভবিষ্যৎ কী হবে, এই প্রশ্ন এখন কর্মীদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। মহাকাশ গবেষণা ও অভিযানের শীর্ষস্থানীয় এই প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতিমালা ও কৌশলগত সিদ্ধান্তের ফলে মহাকাশ গবেষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নেতৃত্ব সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কর্মীসংখ্যা কমানোর ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনের গতি হ্রাস পেতে পারে। ফলে প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়তে পারে।

শেষ কথা

বিশ্বের মহাকাশ গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ নাসা বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক সংকটে নিমজ্জিত। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতিমালা নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে কি নাসা, নাকি এই সংকট মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচনা করবে, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত কর্মীদের আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তাই নাসার ভবিষ্যতের পরিচায়ক।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
বিজ্ঞান বিষয়ক খবরমহাকাশ

সূর্য কি সুপারফ্লেয়ার এর মতন বিস্ফোরিত হতে পারে?

আমাদের সূর্য কি কোনও ধ্বংসাত্মক সুপারফ্লেয়ার সৃষ্টি করতে পারে? সৌর সুপারফ্লেয়ার সম্পর্কে...

গল্পে গল্পে বিজ্ঞানবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

একটি রঙ, যা আপনি দেখতে পারেন না!

"ওলো" এর বৈজ্ঞানিক রহস্য আবিষ্কার করুন, একটি অসম্ভব রঙ যা মানুষ নিখুঁত...

পদার্থবিদ্যামহাকাশ

সূর্য কি সত্যিই হলুদ? মহাশূন্যের চোখে উন্মোচিত হলো সাদা সত্য

সূর্য কি সত্যিই হলুদ? সূর্যের আসল রঙ সম্পর্কে অবাক করা বৈজ্ঞানিক সত্য...

পদার্থবিদ্যামহাকাশ

মহাকাশে কি শব্দ শোনা যায়?

“মহাকাশে কেউ তোমার চিৎকার শুনতে পাবে না।”বিশ্বখ্যাত সায়েন্স-ফিকশন হরর মুভি Alien-এর এই...

ইতিহাসের এই দিনেবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

একটি উদ্ভাবন সারা দুনিয়া বদলে দিতে পারে

আবিষ্কার করুন কিভাবে একটি বিপ্লবী আবিষ্কার—যেমন বাষ্পীয় ইঞ্জিন—বিশ্বকে রূপান্তরিত করেছে। জানুন কিভাবে...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.