সাদিয়া রহমানের (৪৫) জীবন হঠাৎ বদলে যায় যখন চিকিৎসকের কাছ থেকে জানতে পারলেন, তার স্তনে একটি টিউমার রয়েছে। উদ্বেগ আর আতঙ্ক নিয়ে চিকিৎসকের পরবর্তী কথাটি শুনলেন, “আপনাকে সম্ভবত কেমোথেরাপি নিতে হবে।” চিকিৎসার এই কঠিন অধ্যায়ের কথা ভাবতেই শিউরে উঠলেন তিনি। কিন্তু কী হতো যদি এমন একটি ব্যবস্থা থাকতো, যা নিশ্চিত করতে পারতো—তার আসলেই কেমোথেরাপির প্রয়োজন আছে কি নেই?
এমনই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এসেছে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক স্টার্টআপ Ataraxis AI। এই প্রতিষ্ঠানটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা রোগীর ক্যান্সারের ধরন এবং ভবিষ্যতে রোগ ফিরে আসার সম্ভাবনা সম্পর্কে নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যান উইটোস্কি জানান, “আমাদের লক্ষ্য রোগীদের অপ্রয়োজনীয় কেমোথেরাপি থেকে মুক্তি দেওয়া। AI-এর মাধ্যমে ক্যান্সারের পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নির্ণয় করা যায় অত্যন্ত নির্ভুলভাবে।”
Ataraxis AI-এর মূল প্রযুক্তি ‘Kestrel’ নামক একটি AI মডেল, যা কোটি কোটি ক্যান্সার কোষের উচ্চ-রেজুলেশন ছবি থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে। এই মডেলটি “ভিশন ট্রান্সফরমার” ও “সেলফ-সুপারভাইজড লার্নিং” প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যা মানুষের চোখে অদৃশ্য প্যাটার্নকেও শনাক্ত করতে পারে।
বিশ্বখ্যাত AI বিজ্ঞানী ও Meta-র প্রধান AI গবেষক ইয়ান লেকুন বলেন, “এই ধরনের প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবায় অভূতপূর্ব বিপ্লব আনতে পারে।”
সম্প্রতি, Ataraxis AI ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য বিশ্বের প্রথম AI-ভিত্তিক প্রগনস্টিক টেস্ট “Ataraxis Breast” চালু করতে যাচ্ছে। এটি লক্ষাধিক রোগীর টিস্যু নমুনার ছবি বিশ্লেষণ করে নির্ভুল ভবিষ্যৎ ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করতে সক্ষম। লিজা খান, যিনি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, বলেন, “আমি কেমোথেরাপির ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়িয়ে সঠিক চিকিৎসা পেয়েছি। আমার জীবন নতুনভাবে শুরু হয়েছে।”
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা দিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হলেও, চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়া উচিত। বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “AI প্রযুক্তির ব্যবহার আশাব্যঞ্জক, তবে চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিহার্য এবং অবিসংবাদিত।”
Ataraxis AI ইতোমধ্যেই ২০.৪ মিলিয়ন ডলার ফান্ড সংগ্রহ করেছে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্যান্সার নির্ণয়েও এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, AI ভিত্তিক এসব প্রযুক্তি ক্যান্সার চিকিৎসাকে এক নতুন যুগে নিয়ে যাবে। আগামী দিনে হয়তো রোগীদের আর কেমোথেরাপির ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতে হবে না, বরং তারা ফিরে পাবেন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা।
Leave a comment