কথায় বলে, দুঃখ ভাগ করে নিলে কমে আর আনন্দের ভাগে তা আরও বাড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো – আনন্দ বা দুঃখ একজনের থেকে অনেকের মধ্যে ছোঁয়াচে রোগের মত ছড়ায় কেন ? আম্স্টারডামে নেদারল্যান্ড্স ইন্সটিটিউট ফর নিউরোসায়েন্স এর বিজ্ঞানীরা মুষিক অর্থাৎ ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে জানতে পারেন যে “এম্প্যাথেটিক্ মিরার্ নিউরোন” বা “সহমর্মি দর্পণ স্নায়ুকোষ” নামে এক বিশেষ ধরনের নিউরোন বা স্নায়ুকোষ অপরের শারীরিক কষ্ট অনুভব করা সম্ভব করে তোলে।
এর অনেক আগেই ম্যাকাক্ বানরদের ক্ষেত্রে আবিষ্কৃত হয়েছিল যে, কোন বানর কোন কাজ করলে কিংবা অন্য কোন বানরকে বা মানুষকে সেই একই কাজ করতে দেখলে উভয় ক্ষেত্রেই বানরের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু স্নায়ুকোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই স্নায়ুকোষগুলিকেই “এম্প্যাথেটিক্ মিরার্ নিউরোন” বা “সহমর্মি দর্পণ স্নায়ুকোষ”, সংক্ষেপে “মিরার্ নিউরোন” বা “দর্পণ স্নায়ুকোষ” বলে অভিহিত করা হয়েছিল যেগুলি বানর ও মানুষ সহ বহু প্রাণীর মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থেকে অপরের চলাফেরা বা অঙ্গভঙ্গি বা বিভিন্ন আবেগ সংক্রান্ত মুখভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করার সময়ে অপরের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের সক্রিয়তাকে পর্যবেক্ষকের মস্তিষ্কের একই অংশে “ভার্চুয়াল রিয়ালিটি”-র ন্যায় সিমুলেট্ করে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই যে, শারীরিক কষ্ট ভোগ করার সময়ে বা অপরের শারীরিক কষ্ট পর্যবেক্ষণ করার সময়ে ইঁদুর ও মানুষের মস্তিষ্কের একই অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই অংশটির নাম “অ্যান্টেরিয়া সিঙ্গুলেট কর্টেক্স” যার দর্পণ স্নায়ুকোষগুলি শারীরিক কষ্টের সরাসরি অনুভব ও অপরের শারীরিক যন্ত্রণা পর্যবেক্ষণ – উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয় হয়, তবে শারীরিক কষ্টের সরাসরি অভিজ্ঞতায় অ্যান্টেরিয়া সিঙ্গুলেট কর্টেক্স-র সক্রিয় স্নায়ুকোষের তালিকায় কিছু এমন স্নায়ুকোষও থাকে যেগুলি দর্পণ স্নায়ুকোষ নয়।
Leave a comment