প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন
ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পেতে একজন বাংলাদেশী ফেলোকে সঠিক কৌশল এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশী সুপারভাইজার প্রফেসরকে ম্যানেজ করতে হবে। বিদেশী প্রফেসরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের অধীনে কাজ করার সুযোগ পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর জন্য নিচে বিস্তারিত কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
১. প্রাসঙ্গিক গবেষণার প্রস্তুতি এবং আগ্রহের এলাকা নির্ধারণ:
প্রথমেই নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে যে কোন নির্দিষ্ট গবেষণা এলাকা বা বিষয়বস্তুতে আপনার আগ্রহ এবং দক্ষতা রয়েছে। প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ করার আগে, আপনি যে গবেষণা করতে চান সেই বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। প্রফেসরের পূর্ববর্তী গবেষণা এবং প্রকাশিত কাজ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনি যদি তার গবেষণা এলাকা সম্পর্কে অবগত থাকেন এবং সেই বিষয়ে কথা বলতে পারেন, প্রফেসরের আগ্রহ বাড়বে।
২. গবেষণাপত্র এবং রিসার্চ প্রোফাইল তৈরি:
বিদেশী প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করার আগে একটি ভালো গবেষণাপত্র বা প্রোফাইল তৈরি করা জরুরি। আপনার আগে করা যে কোনো প্রাসঙ্গিক গবেষণার কাজ, প্রজেক্ট এবং প্রবন্ধগুলো উল্লেখ করতে হবে। সিভি বা গবেষণাপত্রে আপনার প্রধান গবেষণা কার্যক্রম, দক্ষতা, এবং অর্জনগুলো যুক্ত করতে হবে যাতে প্রফেসর আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে পারেন।
৩. ইমেইলের মাধ্যমে প্রাথমিক যোগাযোগ:
ইমেইল হল বিদেশী প্রফেসরের সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। ইমেইল পাঠানোর সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে:
⊕ সুস্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত ইমেইল:
ইমেইলটি সংক্ষিপ্ত এবং পরিষ্কার হতে হবে। আপনার আগ্রহের বিষয়, আপনার দক্ষতা, এবং কেন আপনি তার তত্ত্বাবধানে কাজ করতে চান তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
⊕ ব্যক্তিগতকরণ:
প্রফেসরের নাম উল্লেখ করে শুরু করতে হবে এবং ইমেইলের প্রথম অংশে তাদের গবেষণা সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারেন যে আপনি তাদের কাজ সম্পর্কে জানেন এবং আগ্রহী।
⊕ সাহিত্যিকভাবে সাজানো ইমেইল:
ইমেইলে আপনার বর্তমান শিক্ষা ও কাজের অভিজ্ঞতা, গবেষণার ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা এবং স্কলারশিপের জন্য আপনার আগ্রহ উল্লেখ করতে হবে।
⊕ অসংখ্য ইমেইল পাঠানো থেকে বিরত থাকুন:
একজন প্রফেসরের কাছে একবার ইমেইল পাঠিয়ে অপেক্ষা করুন। যদি তিনি সাড়া না দেন, তাহলে কিছুদিন পর পুনরায় একটি অনুস্মারক ইমেইল পাঠাতে পারেন।
৪. গবেষণার সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন বা আলোচনা:
ইমেইলে প্রফেসরের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বা আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। যেমন, আপনি তার বর্তমান গবেষণা নিয়ে কীভাবে অবদান রাখতে পারেন তা উল্লেখ করতে পারেন। এতে প্রফেসরের আগ্রহ তৈরি হতে পারে এবং তিনি আপনার সাথে গবেষণা করার সুযোগ দিতে পারেন।
৫. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুতি:
প্রফেসরকে ইমেইলে আপনার সিভি, গবেষণাপত্র, এবং আপনার প্রকাশিত যেকোনো প্রবন্ধ পাঠাতে পারেন। এছাড়া, যদি কোন রিসার্চ প্রপোজাল থাকে, সেটিও সংযুক্ত করতে পারেন। রিসার্চ প্রপোজালটি নির্দিষ্ট এবং ভালোভাবে সাজানো হওয়া উচিত, যা আপনার গবেষণা পরিকল্পনা তুলে ধরবে।
৬. গবেষণার অর্থায়ন এবং স্কলারশিপের সুযোগ সম্পর্কে আলোচনা:
প্রফেসরের সাথে ইমেইল যোগাযোগে স্কলারশিপ এবং ফান্ডিং প্রসঙ্গ উল্লেখ করা যেতে পারে। আপনি যদি প্রফেসরের অধীনে কাজ করতে চান, তাহলে তার কাছে জানতে চাইতে পারেন যে তিনি কি কোন ফান্ডিং এর ব্যবস্থা করতে পারেন, অথবা আপনার পছন্দের স্কলারশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কি অর্থায়ন করা সম্ভব।
৭. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং নেটওয়ার্কিং:
LinkedIn বা ResearchGate এর মত প্ল্যাটফর্মে প্রফেসরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন। এ ধরনের নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মে আপনার প্রফাইল আপডেট রাখা উচিত এবং সেখানে আপনার গবেষণা ও আগ্রহ তুলে ধরা উচিত। এছাড়া, সম্মেলন বা ওয়ার্কশপে প্রফেসরের সাথে দেখা হলে সেই সুযোগকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।
৮. ধৈর্যশীলতা:
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রফেসররা অনেক ব্যস্ত থাকেন এবং তাদের অনেক ইমেইল আসে। তাই সাড়া পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ধৈর্যশীল হয়ে সঠিক সময়ে আবার যোগাযোগ করতে হবে।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি বিদেশী সুপারভাইজার প্রফেসরের সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন এবং স্কলারশিপসহ উচ্চতর গবেষণার সুযোগ পেতে পারেন।
এখন ইমেইল কিভাবে লিখবেন বিদেশী প্রফেসরকে তা নমুনা কপিসহ নিয়মাবলি দেওয়া হলো:
বিদেশী সুপারভাইজার প্রফেসরকে ই-মেইল করার সময় কিছু নিয়মাবলী মেনে চলা জরুরি। একটি ই-মেইল প্রফেসরের কাছে আপনার প্রথম ছাপ তৈরি করে, তাই এটি সংক্ষিপ্ত, পরিষ্কার এবং পেশাদার হওয়া উচিত। এখানে ই-মেইল লেখার নিয়মাবলি এবং একটি নমুনা দেওয়া হলো।
ই-মেইল লেখার নিয়মাবলি:
১. বিষয়বস্তু নির্বাচন:
ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনটি আকর্ষণীয় ও সঠিক হতে হবে, যাতে প্রফেসর সহজেই বুঝতে পারেন যে ইমেইলটি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, “Potential MS/PhD Supervision Opportunity in [Research Area]”।
২. আত্মপরিচয়:
ই-মেইলের শুরুতে নিজের পরিচয় দিন। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়, এবং কোন বিষয়ের ওপর কাজ করছেন তা উল্লেখ করুন।
৩. প্রফেসরের কাজের প্রতি আগ্রহ:
প্রফেসরের গবেষণার কোন নির্দিষ্ট দিক আপনাকে আকর্ষণ করেছে তা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করুন। এটি প্রমাণ করে যে আপনি তার কাজ সম্পর্কে আগ্রহী এবং সচেতন।
৪. আপনার কাজের বিবরণ:
আপনার বর্তমান গবেষণা বা আগ্রহের এলাকা সম্পর্কে লিখুন এবং কিভাবে তা প্রফেসরের গবেষণার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে তা উল্লেখ করুন। এটি প্রফেসরকে বোঝাবে আপনি তাদের সাথে গবেষণা করার জন্য উপযুক্ত।
৫. সুসংগত গবেষণা পরিকল্পনা:
যদি কোনো নির্দিষ্ট গবেষণা প্রস্তাবনা থাকে, তবে সংক্ষেপে তা উল্লেখ করুন এবং এর জন্য কোন স্কলারশিপের সুযোগ থাকতে পারে তা উল্লেখ করতে পারেন।
৬. আবেদনের শেষাংশ:
প্রফেসরের প্রতিক্রিয়া চেয়ে বিনীতভাবে শেষ করুন এবং সিভি, রিসার্চ প্রপোজাল বা প্রকাশনা সংযুক্ত করার কথা উল্লেখ করুন।
৭. পেশাদার বিন্যাস:
ইমেইলটি বিনয়ী এবং পেশাদার হতে হবে। সংক্ষিপ্ত, নির্ভুল এবং স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করুন।
নমুনা ই-মেইল:
⊕ Subject: Potential MS Supervision Opportunity in [Aquatic Biodiversity Research]
Dear Professor [Professor’s Last Name],
I hope this email finds you well. My name is [Your Full Name], and I have recently completed my Bachelor’s degree in Fisheries from [Your University Name], Bangladesh. I have developed a keen interest in aquatic biodiversity, particularly focusing on the conservation of freshwater species. Your groundbreaking research on fish population dynamics and aquatic ecosystems has greatly inspired me, and I would be honored to pursue a Master’s degree under your supervision.
I have worked on several projects during my undergraduate studies, including the “Estimation of Aquatic Biodiversity in Wetland Ecosystems of NW Bangladesh.” My work involved the assessment of fish diversity, water quality parameters, and conservation strategies. I believe my research interests align closely with your ongoing work, particularly your study on the biodiversity of riverine species, and I am confident that I can contribute meaningfully to your research team.
I am very interested in applying for the upcoming [Scholarship Program] at your university, and I would highly appreciate your guidance regarding any potential openings in your research group. I have attached my CV and a brief research proposal for your consideration.
I look forward to your positive response and would be grateful for any opportunity to discuss my application further.
Thank you for your time and consideration.
Best regards,
[Your Full Name]
[Your Email Address]
[Your Phone Number]
[LinkedIn Profile, if applicable]
সংযুক্তি:
⊕ সিভি (CV)
⊕ গবেষণার প্রস্তাবনা (যদি থাকে)
এই নমুনা এবং নির্দেশিকা অনুসরণ করে ই-মেইল করলে আপনার সুপারভাইজারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা সহজ হবে এবং বিদেশে স্কলারশিপের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–https://www.facebook.com/share/p/1Dho5hGPrQ/?mibextid=ZbWKwL
Leave a comment