লেখক আজিজুল হক
প্রবন্ধের লেখক আজিজুল হক। তিনি একজন গবেষক, যিনি লেখালেখি ও গবেষণার ক্ষেত্রে নৈতিকতা বজায় রেখে প্ল্যাজিয়ারিজম প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি সৃজনশীল লেখালেখি এবং সঠিক রেফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গবেষণার স্বচ্ছতা ও গুণগত মান উন্নয়নে উৎসাহী। বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন:
প্ল্যাজিয়ারিজম থেকে রক্ষা পেতে করণীয়:
বর্তমান সময়ে গবেষণা, লেখালেখি কিংবা সৃজনশীল কোনো কাজে প্ল্যাজিয়ারিজম বা বুদ্ধিবৃত্তিক চুরি একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। Plagiarism হল অন্যের লেখা বা ধারণা নিজের বলে দাবি করা, যা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনেই নয়, শিক্ষাজীবন এবং সৃজনশীলতার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা রক্ষা এবং সৃজনশীলতাকে সম্মান জানানোর জন্য প্ল্যাজিয়ারিজম থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অনেকই প্ল্যাজিয়ারিজম ধরা পড়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন না থাকায়, বিশেষ করে ক্যারিয়ারের শুরুতে, এটি নিয়ে সমস্যায় পড়ে। Elsevier-এর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছর প্ল্যাজিয়ারিজমের প্রায় ৫০% ঘটনা রিপোর্ট করা হয়, যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
Plagiarism-এর কয়েকটি প্রধান ধরন রয়েছে। প্রথমেই উল্লেখযোগ্য Direct Plagiarism বা Verbatim Plagiarism, যেখানে কোনো উৎস থেকে হুবহু লেখা কপি করে সেটিকে নিজের বলে দাবি করা হয়। Paraphrasing Plagiarism-এর ক্ষেত্রে মূল উৎসের ভাব বা বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখা হলেও উৎসের সঠিক উল্লেখ করা হয় না। Self-Plagiarism বা Redundant Publication-এ লেখক তার পূর্বে প্রকাশিত লেখা নতুন করে অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করেন। Mosaic Plagiarism বা Patchwork Plagiarism-এর মাধ্যমে বিভিন্ন উৎস থেকে বাক্যাংশ নিয়ে নতুন একটি লেখা তৈরি করা হয়, তবে উৎসের সঠিক উল্লেখ থাকে না। Idea Plagiarism-এ অন্যের ধারণা বা তত্ত্বকে ব্যবহার করে উৎস দেওয়া হয় না। এছাড়াও, Accidental Plagiarism হলো ভুলবশত উৎস উল্লেখ না করা বা ভুল উদ্ধৃতি দেওয়া, যা ইচ্ছাকৃত না হলেও প্ল্যাজিয়ারিজমের অন্তর্ভুক্ত।
Plagiarism এড়াতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, সবসময় সঠিকভাবে উৎস উল্লেখ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি তথ্যের জন্য Citation প্রয়োজন, এবং সরাসরি কিছু তুলে ধরলে সেটিকে Quotation চিহ্নের মধ্যে রেখে উৎস দিতে হবে। Paraphrasing করলেও মূল উৎস উল্লেখ করা প্রয়োজন। গবেষণা বা লেখালেখির সময় ব্যবহৃত উৎসগুলো নোট করে রাখা উচিত, যা পরে উৎস উল্লেখ করতে সহায়ক হয়। Plagiarism চেকার যেমন Turnitin, Grammarly, বা Copyscape ব্যবহার করে লেখা যাচাই করা যেতে পারে। এছাড়াও, APA, MLA, Chicago-এর মতো বিভিন্ন রেফারেন্স স্টাইল সম্পর্কে ধারণা নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে উৎস উল্লেখ করতে হবে।
যদি কোনো গ্রাফ বা ডায়াগ্রাম কোনো ওয়েবসাইট থেকে ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, তবে তার জন্য অনুমতি নিতে হবে। যদি এটি CC-BY লাইসেন্সের অধীনে না থাকে, তাহলে গ্রাফ বা ডায়াগ্রাম ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট মালিকের লিখিত অনুমতি প্রয়োজন। এমনকি নিজের পূর্বে প্রকাশিত কাজ থেকেও কিছু ব্যবহার করলে Self-Plagiarism এড়ানোর জন্য উৎস উল্লেখ করতে হবে, তা প্রিন্ট বা প্রি-প্রিন্ট যাই হোক না কেন।
প্ল্যাজিয়ারিজমের প্রতিরোধে লেখক, গবেষক এবং প্রকাশক সবার দায়িত্ব রয়েছে। যদি কারো কাজ অন্য কেউ Plagiarism করে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট জার্নালের সাথে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানানো উচিত। জার্নাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি পর্যালোচনা করে এবং প্ল্যাজিয়ারিজমের গুরুতরতা অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধন, সতর্কতা প্রকাশ, অথবা লেখাটি প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে পারে।
Plagiarism এড়ানো মৌলিক নৈতিক চর্চার একটি অংশ। এটি শুধু লেখকের সৃজনশীলতাকে বাড়িয়েই তোলে না, বরং সঠিক তথ্য ও মূল ধারণাকে সম্মান জানায়। সঠিক লেখার পদ্ধতি অবলম্বন এবং অন্যের কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শনই প্ল্যাজিয়ারিজম এড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। Plagiarism থেকে মুক্ত থাকার জন্য আমাদের সকলের সচেতন থাকা প্রয়োজন।
ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত: https://www.facebook.com/photo/?fbid=3355698974560204&set=a.298335153629950
Leave a comment