বিজ্ঞান বিষয়ক খবর

রহস্যময় শনির বলয়।

Share
Share

{mosimage}বহু বছর ধরে মানুষ সৌরজগতের 5 টি গ্রহের কথা জানতো,এই পাচটির মধ্যে শনি ছিল
সবার শেষে।অবশ্য পরবর্ততী বাকী গ্রহগুলো আবিস্কৃত হয়েছে।যে সব গ্রহ খালি
চোখে দেখা যায় শনি তাদের মধ্যে সবচেয়ে দুরে, বুধ ও বৃহস্পতির মধ্যে যে ফাঁক
শনি ও বৃহস্পতির মধ্যেকার ফাঁকের বিস্তৃতিও সেই পরিমান।
সৌরজগতের সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ হলো শনি,এর কারন গ্রহটিকে ঘিরে একটি বলয় আছে
যার কারনে শনি এত সুন্দর।খালি চোখে এই বলয়টি দেখা যায় না,যার কারনে অনেক
আগের জ্যেতির্বিদরা শনিকে চিনলে ও এর বলয়টির কথা জনতেন না।এই বলয়টি প্রথমে
ধরা পড়ে বিখ্যাত জ্যেতির্বিদ গ্যালিলিও’র দুরবীনে,কিন্ত তখন তিনি একে একটি
গ্রহ বলে মনে করলেন।এর 40 বছর পড়ে জ্যোতির্বিদ হিউগনেস আবিস্কার করলেন
পাতলা একটি বলয় গ্রহটিকে ঘিরে আছে (এখানে উল্লেখ্য পৃথিবী থেকে শনিকে
বিভিন্ন অবস্হানে দেখা যায় বিধায় বলয়টি সবসময় একরকম দেখা যায় না)।শনির
বলয়গুলি দেড়গুন বেশী সূর্যরশ্নি প্রতিফলিত করে।
যে যে অবস্হায় আমরা শনির বলয়গুলিকে স্পস্ট দেখি সেই অবস্হায় বলয়গুলি আমাদের
দৃস্টিপথের সন্গে সর্বচ্চো 28 ডিগ্রী কোন করে থাকে।আর তখন আমরা বলয় এবং
শনিকে উজ্জল দেখি,এবং কখনো বলয়ের উপরের দিক আবার কখনো বলয়ের নীচের দিক
দেখতে পাই, এই দুই অবস্হার মধ্যেকার পার্থক্য 15 বছরের।আবার কিছু কিছু সময়ে
বলয়গুলি দৃস্টিপথের সন্গে সর্বনিম্ন কোন করে থাকে,সেই সময়ে গ্রহের তখনকার
অবস্হার কারনে শুধু বলয়ের ধারটুকু দেখা যায়।
প্রথমে মনে করা হতো তিনটি বলয় শনিকে ঘিরে আছে।কিন্ত সর্বপ্রথম ভয়েজার
মহাকাশযান এই বলয় সম্পর্কে গুরত্বপূর্ন তথ্য দিল।তা হলো এই বলয় তিনটি নয়
আবার 50 বা 100 টিও এর সংখ্যা কয়েক লক্ষ হতে পারে।এক একটি বলয়ের চেহারাও
সুক্ষ,আবার অনেক বলয় শিকলের মত একে অন্যের সাথে জড়িয়ে আছে।শনির বলয়ের
পুরত্ব প্রায় 1কিঃমিঃ,কিন্ত চওড়া শনির পৃস্ট থেকে প্রায় 420,000 কিঃমিঃ
পর্যন্ত।
ঘনত্বের তারতম্যে শনির বলয়গুলিকে সাত ভাগে ভাগ করা যায়।এক একটি বলয়
আবিস্কারের সাথে সাথে এগুলোকে A,B,C,D,E,F ইত্যাদি অক্ষরে চিহ্নিত করা
হয়েছে।
শনির সবচেয়ে কাছের বলয়টি হলো D বলয়,এরপরে আছে C (Crepe ring) বলয়,এটি প্রায়
17,5000 কিঃমিঃ চওড়া এর সাথে আরো অনেকগুলো বলয় জড়িয়ে আছে।এর পরে B বলয় এটি
প্রায় 25,340 কিঃমিঃ চওড়া।B আর A বলয়ের মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটিকে বলে
ক্যাসিনি (Cassini Divison জ্যেতির্বিদ ক্যাসিনির নামে) ডিভিশন।
A বলয়টি প্রায় 13,900 কিঃমিঃ চঁওড়া।A বলয়ের মাঝখানের ফাকা জায়গাটিকে বলে
এন্ক (Encke Divison) ডিভিশন।এই বলয়গুলোর উজ্জলতা এক নয়,D,E,G বলয় খুব
ঝাপসা,F বলয়টি খুব উজ্জল,এবং A B C বলয়গুলি হচ্ছে সবচয়ে বেশী উজ্জল।
শনির এই বলয় গুলি বেশ রহস্যময়।যেমন-এক একটি বলয় আসলে অনেকগুলি এককেন্দ্রিক
বলয়ের সমস্টি।ক্যাসিনি ডিভিশন পকৃতপক্ষে অনেকগুলো বলয় দিয়ে তৈরী।শনির
বলয়গুলি মোটামুটি ভাবে বৃক্তাকার হলেও বেশ কয়েকটি উৎকেন্দ্রিক বলয়ের ও
সন্ধান পাওয়া গেছে।শনির বলয়ের গঠন অনেকটা খাঁজকাটা গ্রামোফোনের রেকর্ডের
মত।শনির বলয়ের উপর কিছু কিছু দাগ আছে,এই দাগগুলো শনির চুম্বক ক্ষেত্রের
সাথে সংশ্লিস্ট।সূর্যের আলো সুবিধাজনক অবস্হায় বলয়ের উপর পরলে তখন তারা
শনির চাকতির উপর ছায়ার সৃস্টি করে,সবচেয়ে বাইরের বলয়টি যে ছায়ার সৃস্টি করে
তা বেশ ঘন।
শনির চারপাশে ঘুরে বেড়ানো উপগ্রহ গুলো কখনো শনির বলয়ে ঢাকা পড়ে যায় আবার কখনো পরিপূর্ন ভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
বিখ্যাত বিন্গানী ম্যাকস্‌ওয়েলের মতে যদি এই বলয়গুলো দৃঢ হয় তবে এগুলি
স্হায়ী হবে না এবং অচিরেই ভেন্গে যাবে।অপরদিকে এগুলো যদি ছোট ছোট কনা দিয়ে
তৈরী হয় তবে এগুলি সুস্হিত অবস্হায় থাকবে,কাজেই ধারনা করা হয় যে বলয়গুলি
ধূলিকনা পাথর আর বরফের টুকরোর সংমিশ্রনে তৈরী।
শনির এই বলয়ের সৃস্টি কোন ভৌত কারনে।ফরাসী জ্যেতির্বিদ রোঁশে দেখান যে,
একটি গ্রহের মাধ্যাকর্ষন শক্তি নির্দিস্ট দুরত্বে থাকা কোন ছোট বস্তুকে
টুকরো টুকরো করে দিতে পারে।
হয়তো কোন এককালে, শনির কোন একটি উপগ্রহ ঠিক এইভাবে ভেন্গে টুকরো টুকরো হয়ে
এই বলয়ের সৃস্টি করে।এই বলয়গুলির গঠন ও সাজানোর ব্যাপারে শনির বাইরের
উপগ্রহগুলির অবদান আছে।
শনির বলয়ের বর্নালিতে ডপলার প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা গেছে যে,বলয়ের বাইরের
অংশের চেয়ে ভিতরের অংশ গ্রহটির চারিপাশে অনেক দ্রুত গতিতে ঘোড়ে।একটি উজ্জল
বলয়ের বর্হিভাগের আর্বতনকাল 14 ঘন্টা 27 মিনিট আর ভিতরের অংশের আর্বতনকাল 7
ঘন্টা 46মিনিট।
বিন্গানের অগ্রগতির সাথে সাথে খুলে যাচ্ছে রহস্যের দরজাগুলো,অদুর ভবিষ্যতে শনির আরো অনেক অজানা তথ্য আমরা জানতে পারবো।
{mosimage}

Share

4 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

মহাবিশ্বের অজানা রহস্য: ড. সৈয়দ আশরাফ উদ্দিনের গবেষণা এবং ভাবনা!

ড. সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন, একজন নিবেদিত শিক্ষক ও গবেষক, বর্তমানে University of...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

রেডিও ওভার ফাইবার: উচ্চগতির ডেটা ট্রান্সমিশনে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি ও এর সম্ভাবনা!

বর্তমানে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির যুগে, উচ্চগতির ডেটা ট্রান্সমিশন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবর

কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খ্যাতিমান বিজ্ঞানীদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ: আসতে পারে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন!

প্রফেসর ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞান...

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

উইলোকে স্বাগতম(Welcome Willow), গুগলের সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম চিপ।

গুগলের নতুন চিপ ত্রুটি সংশোধন এবং এমন পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে যা একটি...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবর

উদীয়মান গবেষক মোঃ সাইফুর রহমান: বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ!

আজ আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি এক উদীয়মান গবেষক মোঃ সাইফুর রহমানের, যিনি টেক্সাস...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.