লেখাটি যখন শুরু করেছি তখন বারবার এরিস্টটলের জীবন নিয়ে ধারনার কথা মাথায় আসছিলো তাই না লিখে পারলাম না। জীবনের স্বতঃস্ফৃর্ত বা আপনা আপনি উৎপত্তি্র ধারণা কিন্তু বহু প্রাচীন। এর প্রমাণ এরিস্টটলের লেখাগুলোতেও পাওয়া জায়। যদিও এ কথা তার জানাই ছিল যে জীব থেকেই জীবের উৎপত্তি হয়, তবুও এরিস্টটল কোন কোন ছোট প্রাণী স্বতঃস্ফৃর্তভাবে উদ্ভূত হয় বলে বিশ্বাস করতেন। তার বিখ্যাত বই প্রাণীজগতের ইতিহাস (Historia Animalium) এ ধরনের একটি বিবরন দিয়েছেনঃ
“অধিকাংশ মাছের জন্ম ডিম থেকে হয়ে থাকে। তবে এমন কিছু মাছ আছে যেগুলোর জন্ম হয় কাদা ও বালি থেকে। একবার নিডোসের কাছে একটি পুকুর শুকিয়ে যায় এবং এর কাদাও শুকিয়ে যায়। তারপর বেশ কয়েকদিন পর বৃষ্টিতে পুকুরটি ভরে যায়। এতে দেখা গেল নানা রকমের মুলেট জাতীয় ছোট মাছ। কাজেই এটি পরিষ্কার যে কিছু মাছ স্বতঃস্ফৃর্তভাবে জন্মায়। তার জন্য ডিম বা যৌন ক্রিয়ার দরকার হয় না।“
আজকের দিনের জ্ঞানের প্রেক্ষাপটে এরিস্টটলের এ বর্ণনা হয়ত হাসির খোড়াক যোগাবে।
জীবন নিয়ে আমাদের কতই না চিন্তাভাবনা যেমন-ছেলেটি একদম তার বাবার মতো হয়েছে, মেয়েটির বুদ্ধিমত্তা তার মায়ের মতো এমন কথা আমরা প্রায়ই বলতে শুনি, বাস্তবে এমনটি দেখেও থাকি। কিন্তু কেমন করে বাবা মার বৈশিষ্ট্য সন্তান এর মধ্যে স্থানান্তরিত হয়? এ প্রশ্নের জবাব বিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তার নাম বংশগতি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এইসব বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত হয় কিছু বস্তুর মাধ্যমে যেগুলোকে বলে বংশগতি বস্তু। বংশগতি বস্তুর প্রধান উপাদান হল ক্রোমোসোম। এই ক্রোমোসোম নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করা যাক। মানুষের দেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষের একটি কেন্দ্র থাকে যার নাম নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াস এর ভেতরে থাকে ক্রোমোজোম, জোড়ায় জোড়ায়। ক্রোমোসোম হল কোষস্থ নিউক্লিয়াসের ভিতর অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতাসম্পন্ন রঙ ধারনকারী নিউক্লিও প্রোটিন নিয়ে গঠিত সূএাকৃতির ক্ষুদ্রাজ্ঞ যা বংশগতির প্রভৃতি কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ক্রোমোসোম আবার নিউক্লিয়াসের বাহিরে সাইটোপ্লাজমেও থাকতে পারে। প্রত্যেক নিউক্লিয়াসে প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে। আদিকোষে কোন সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকায় তাতে কোন সুগঠিত ক্রোমোসোম থাকে না। ক্রোমোসোমকে একমাত্র কোষ বিভাজনের মেটাফেয ধাপে মাইক্রোসকপে দেখা যায়। সুগঠিত ক্রোমোসোমের ভৌত গঠনকে নিম্নলিখিত অংশে ভাগ করা যায়-
I. পেলিকল
II. ম্যাট্রিক্স
III. ক্রোমাটিড
IV. ক্রোমোনেমাটা
V. সেন্ট্রোমিয়ার
VI. সেকেন্ডারি কুঞ্চন
VII. স্যাটেলাইট এবং
VIII. টেলোমিয়ার
এই ভৌত গঠনের মধ্যে টেলোমিয়ার নিয়ে বর্তমানে গবেষনা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা টেলোমিয়ারকে নিয়ন্ত্রন করে জীবের বয়স একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির রাখা যাবে। টেলোমিয়ার ক্রোমোসোমের উভ্য় প্রান্তে অবস্থিত একমাত্র অঞ্চল যেখানে ডিএনএ একসূত্রক। স্বাভাবিক কোষে টেলোমিয়ার ছোট হয় প্রত্যেক কোষ বিভাজনে এবং টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য যখন ছোট হয়ে চরম সীমায় পৌছায় তখন কোষের মৃত্যু হয়। এই টেলোমিয়ার টেলোমেরাস এনজাইম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই এটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা খুব আশাবাদী, হয়তো এরই কল্যানে আমরা অদূর ভবিষ্যতে দেহঘড়িকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে বাধতে পারব। এবার ক্রোমোসোমের রাসায়নিক গঠন নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলা যাক, ক্রোমোসোমের রাসায়নিক উপাদানের ভিতর রয়েছে DNA, RNA, নন হিস্টোন প্রোটিন, অন্যান্য যৌগিক প্রোটিন, লিপিড, এনজাইম এবং বিবিধ আয়ন। এত সময় ধরে শুধু ক্রোমোসোমের গঠন নিয়ে বলা হল কিন্তু এর কাজ কি সেটা বলা হয় নি, ক্রোমোসোমকে বংশগতির ধারক ও বাহক বলা হয় কারন তা জীবের বৈশিষ্ট্য বহ্ন করে থাকে, কোষ বিভাজনে সহায়তা করে, জীন অনুধারন করে। এজন্যই ক্রোমোসোমকে জীবনের মূল ভিত্তি বলা হয়।
I. অ্যাডেনিন- A
II. গুয়ানিন- G
III. সাইটোসিন- C
IV. থায়মিন- T
আবার প্রত্যেক আরএনএ অনুতে থাকে চার ধরনের বেস কিন্তু এখানে থায়ামিন এর বদলে ইউরাসিল- U থাকে। থায়ামিন এবং ইউরাসিল এর মধ্যে সাদৃশ্য আছে বটে কিন্তু বৈসাদৃশ্যও কম নয়। আর জীবনের রসায়নে সামান্য তফাতের পরিমাণও বিশাল হতে পারে। আর এজন্যই একে অপরের থেকে আলাদা। ডিএনএ অনুর গঠনে আরও দুটি উপাদান যুক্ত থাকে তা হল ফসফরিক এসিড এবং ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার। এই ফসফরিক এসিড এবং ডিঅক্সিরাইবোজ সুগারকে ডিএনএ অনুর মেরুদন্ড বোলা হয় কারন এরাই ডাবল হেলিক্স গঠন করে এবং নাইট্রোজেনাস বেসগুলো এই প্যাচানো হেলিক্সের মাঝে হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে।
ধন্যবাদ অনেক সুন্দর ভাবে, ক্রোমোজম ও ডিএনএ নিয়ে পড়ানোর জন্যে। আমি http://www.doctorsgang.com ওওয়েবসাইটে নিয়মিত লিখালিখি করি, আআপনাদের ওয়েবসাইটে কি আমি লিখালিখি করতে পারবো?
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য এর জন্য। হ্যা আমাদের সাইটে আপনিও লিখতে পারেন এবং আপনি সহ সকলকেই আমন্ত্রণ জানাই লেখা প্রকাশিত করার জন্য আমােদর কাছে পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়। ধন্যবাদ বিজ্ঞানী.অর্গ টিম
ধন্যবাদ আপনার কমেন্ট এর জন্য। হ্যা আমাদের সাইটে লেখা দিতে পারবেন। [email protected] ইমেইলে আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন। আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।