টেক্সটাইল

টেক্সটাইল কলেজ এখন বিশ্ববিদ্যালয়

Share
Share

প্রথম আলো থেকে সংগ্রীহিত  

টেক্সটাইল কলেজ এখন বিশ্ববিদ্যালয়

মাহফুজ রহমান | তারিখ: ১৫-১২-২০১০

গেল সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ। ঘড়িতে তখন বিকেল চারটা সাড়ে চারটার মতো। হলের টেলিভিশন-কক্ষে তখন জমজমাট ভিড়। ভিড় থাকলেও ফিসফাস ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। কোনো এক বিশেষ কারণে দর্শকেরা সবাই মোটামুটি নির্বাক, ভেতরে ভেতরে অস্থির। তবে টেলিভিশনে হঠাৎ কী একটা শুনেই নির্বাক তরুণদের মুখে বোল ফুটল। শুধু বোল বললে ভুল হয়, শুরু হলো তুমুল শোরগোল আর জয়ধ্বনি। রাস্তায় বেরোল আনন্দ মিছিল। কেন? কারণ, জাতীয় সংসদে ওই দিন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় বিল, ২০১০ পাস হলো! ফলে সেদিন থেকে ‘কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’র জায়গায় লেখা হলো ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়’।  

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯২১ সালে, ব্রিটিশ আমলে ঢাকার নারিন্দায় একটি উইভিং স্কুুলের গোড়াপত্তন হয়েছিল। নাম রাখা হয়েছিল ‘ইস্ট বেঙ্গল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’। ১৯৫০ সালে এসে প্রতিষ্ঠানটিতে ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়, আর নাম বদলে রাখা হয় ‘ইস্ট পাকিস্তান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’। এসব কিছু চলছিল নারিন্দাতেই। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আসা হয় এখনকার ক্যাম্পাস, তেজগাঁও বাণিজ্যিক এলাকায়। এবং ১৯৭৮ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেখানে চালু হয় চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্স। সেই সঙ্গে চালু হয় নতুন নাম—কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। কালে কালে সেই নামও গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে অতীতের ঘরে চলে গেল। প্রতিষ্ঠানটি এখন পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয়।এই পরিবর্তন স্বভাবতই আনন্দ-উল্লাসের বড় উপলক্ষ হয়ে এসেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় হাজারখানেক শিক্ষার্থীর কাছে। আর সবার মতোই টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মিথুন রায়ও যারপরনাই খুশি, ‘এটা আমাদের অনেক দিনের চাওয়া ছিল। পূরণ হয়েছে, তাই আমরা অবশ্যই খুশি। আরও খুশি হব, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সুবিধা ভোগ করতে পারব। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার ফলে আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। আগে এখানে এমএসসি করা যেত না, এখন তা সম্ভব।’ পাশেই ছিলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রুহুল আমিন। বললেন তার ভালো লাগা আর চাওয়া-পাওয়ার কথা, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হলো, অনেক খুশি আমরা। এখন দেখার বিষয়, সামনের দিনগুলোতে আমরা কতটা সুযোগ-সুবিধা পাব। এখন নতুন আরও শিক্ষক আসবেন, ভিসি আসবেন। আমাদের ক্যাম্পাসটা আরও বড় হবে। বলা হয়, এখানকার গবেষণাগারগুলো শুধু দেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাই, সামনে আরও নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আসুক। সৃজনশীলতার জন্য গবেষণার বিকল্প নেই।’ রুহুলের চাওয়া-পাওয়ার তালিকায় আরও কিছু বিষয় যোগ করলেন দ্বিতীয় বর্ষের সাইদুর রহমান, ‘শিক্ষার মানের ব্যাপারে তো কথা হলোই, এখানকার তিনটি হলে (এম এ জি ওসমানী হল, শহীদ আজিজ হল এবং মহিলা হল) আমাদের জীবনযাপনের মানের ব্যাপারেও কিছু বলার থাকে। এখানে আমাদের হল চার্জ একটু বেশিই, পাশাপাশি খাবারের খরচের অঙ্কটাও কম নয়। ইন্টারনেটের সুবিধা পেলে খুব ভালো হয়। বিদ্যুৎ-পানির সমস্যা নিয়েও ভাবার আছে। কারণ কদিন আগে বিদ্যুৎ-পানির ঝামেলার কারণেই ওসমানী হলে ডাইনিং বন্ধ হয়ে যায়; ছাত্ররা বাইরে খাওয়াদাওয়া সারছে।’
অভাব-অভিযোগ তো আছেই, চতুর্থ বর্ষের রুবাইয়াত শান্তা অবশ্য বেশ আশাবাদী, ‘কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় অনেক সুযোগ-সুবিধার দুয়ার খুলে গেল। পাশাপাশি আমাদের মানসিক শক্তিও বেশ জোরদার হয়েছে। বলতে পারব, আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি! আমাদের কতগুলো ক্লাব ও সংগঠন আছে, থিয়েটার আছে, রক্তদান কর্মসূচিও নিয়মিত চলছে। তবে ডিবেটিং ক্লাবটি বাদে অন্য সংগঠনগুলো কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। আশা করি, নতুন আমেজে এখন আবার সবকিছু চাঙা হবে। মাঠে তো ছেলেরা নিয়মিত দাপিয়ে বেড়ায়, এটা খুব ভালো লাগে। আর লাইব্রেরিতে আরও বেশি বই দিলে ভালো হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নিয়মিত আয়োজন আমরা করে থাকি। কদিন আগে মঞ্চনাটক করেছি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কদিন আগে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিবেটিং ক্লাব জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে!’ 
বস্ত্র খাতকে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বললে অত্যুক্তি হয় না। এর প্রমাণ পাওয়া যায় আমাদের রপ্তানি আয়ের হিসাব থেকেই। এখন দেশের মোট রপ্তানির বেশির ভাগই হচ্ছে বস্ত্র খাতে। সন্দেহাতীতভাবে এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। কেননা, এ পর্যন্ত এখান থেকে পাস করে বেরোনো প্রায় আড়াই হাজার স্নাতক দেশের নামকরা টেক্সটাইল মিলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই টেক্সটাইল কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশের বস্ত্র খাত আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে গেল—এটা বলা যায় চোখ বন্ধ করে।
দেশের অর্থনীতিতে এত বড় ভূমিকা রাখার দক্ষ জনবল তৈরির সূতিকাগার এই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মাস্উদ আহ্মদ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে নিজের অনুভূতির কথা বললেন তিনি, ‘এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সাময়িক কিছু জটিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ঠিকভাবে এগোচ্ছে না। আমরা চাইছি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করতে। আশার কথা হলো, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আরও সমৃদ্ধ হবে, বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত হবে আরও শক্তিশালী। আমাদের অনেক নতুন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা আছে। শিগগিরই সব ঠিকঠাকভাবে হবে বলে আশা করছি।’

প্রথম আলো থেকে সংগ্রীহিত
 
 
Source: prothom-alo : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-15/news/115891
 

2010 December 15. Added from Canada, 2010 December 14. 

শফিউল ইসলাম

ইমেইল:   [email protected] :: ওয়েবঃ textek.weebly.com :: Canada :: www.linkedin.com/in/shafiul2009  

Share
Written by
Shafiul -

ড. শফিউল ইসলাম, CText FTI: ডিরেক্টর, TexTek Solutions; প্রাক্তন-প্রেসিডেন্ট, Institute of Textile Science Canada. স্পাইডার সিল্ক প্রযুক্তির উদ্ভাবক। প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক, Vision Creates Value. যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক, biggani.org. রয়াল চার্টার্ড টেক্সটাইল ফেলো, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ইন্টারন্যাশনাল, ইউকে। গ্লোবাল প্যারেন্টস, ইউনিসেফ ক্যানাডা। যুক্তরাজ্য থেকে টেক্সটাইল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর অনেক গবেষণাপত্র, বই ও প্যাটেন্ট প্রকাশ পেয়েছে। ই-মেইল: [email protected] অন্তর্জাল: https://www.linkedin.com/in/shafiul2009/

1 Comment

  • ‘…আশার কথা হলো, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আরও সমৃদ্ধ হবে, বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত হবে আরও শক্তিশালী….’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
Englishটেক্সটাইলবই আলোচনাবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

Airship Technology (উড়োজাহাজ প্রযুক্তি)

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বই পরিচিতি: Airship Technology (উড়োজাহাজ প্রযুক্তি) উড়োজাহাজ...

অন্যান্যটেক্সটাইলবিজ্ঞানীদের খবর

বরেণ্যব্যক্তিদের জীবনালেখ্য – ড. শফিউল ইসলাম

বরেণ্যব্যক্তিদের জীবনালেখ্য ড. শফিউল ইসলাম ঝিনাইদহ জেলার গুণী ও সুধীজন বরেণ্যব্যক্তিদের জীবনালেখ্য...

Englishটেক্সটাইল

Fibers & Beyond

ITS 94th Scientific Session Report: ‘Fibers & Beyond’ 94th Scientific Session ‘Fibres...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.