গুগলের নতুন চিপ ত্রুটি সংশোধন এবং এমন পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে যা একটি কার্যকরী, বৃহৎ পরিসরের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পথ প্রশস্ত করে।
গুগল তাদের সর্বশেষ কোয়ান্টাম চিপ উইলো উন্মোচন করেছে। উইলো বিভিন্ন মেট্রিক্সে অত্যাধুনিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে, যা দুটি প্রধান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
প্রথমত, উইলো আরও বেশি কিউবিট ব্যবহারের মাধ্যমে ত্রুটিগুলি সূচকীয়ভাবে হ্রাস করতে সক্ষম। এটি কোয়ান্টাম ত্রুটি সংশোধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সমাধান করেছে, যা প্রায় ৩০ বছর ধরে গবেষকরা সমাধানের চেষ্টা করে আসছেন।
দ্বিতীয়ত, উইলো একটি মানক বেঞ্চমার্ক গণনা মাত্র পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে সম্পন্ন করেছে, যা বর্তমান সময়ের দ্রুততম সুপারকম্পিউটারের জন্য করতে ১০ সেপটিলিয়ন (অর্থাৎ 1025) বছর সময় লাগবে—এটি এমন একটি সংখ্যা যা মহাবিশ্বের বয়সকেও অতিক্রম করে।
উইলো চিপ এমন একটি যাত্রায় একটি বড় পদক্ষেপ, যা ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে শুরু হয়েছিল। ২০১২ সালে গুগল কোয়ান্টাম এআই প্রতিষ্ঠার সময় লক্ষ্য ছিল একটি কার্যকরী, বৃহৎ পরিসরের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে— প্রকৃতির “অপারেটিং সিস্টেম” হিসেবে, যতটা আমরা আজ পর্যন্ত জানি—ব্যবহার করে সমাজের উপকারে আসবে, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, সহায়ক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করবে এবং সমাজের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করবে।
ইক্সপোনেনশিয়াল কোয়ান্টাম ত্রুটি(Error) সংশোধন — থ্রেশহোল্ডের নিচে!
ত্রুটি(error) কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ কিউবিট, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গণনার একক, দ্রুত তাদের পরিবেশের সাথে তথ্য বিনিময় করার প্রবণতা রাখে। এর ফলে প্রয়োজনীয় তথ্য সুরক্ষিত রাখা কঠিন হয়ে যায়। সাধারণত, যত বেশি কিউবিট ব্যবহার করা হয়, তত বেশি ত্রুটি ঘটে, এবং সিস্টেম ধীরে ধীরে ক্লাসিক্যাল হয়ে যায়।
Nature জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেল এর ফলাফল দেখায় যে উইলোতে যত বেশি কিউবিট ব্যবহার করা হয়, তত বেশি ত্রুটি হ্রাস পায়, এবং সিস্টেমটি আরও বেশি কোয়ান্টাম চরিত্র ধারণ করে। আমরা ক্রমবর্ধমান বড় আকারের কিউবিট গ্রিড পরীক্ষা করেছি—৩x৩ এনকোডেড কিউবিটের গ্রিড থেকে শুরু করে ৫x৫ এবং ৭x৭ গ্রিড পর্যন্ত। প্রতিবার, আমাদের সর্বশেষ কোয়ান্টাম ত্রুটি সংশোধন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, আমরা ত্রুটির হার অর্ধেক কমাতে সক্ষম হয়েছি। সহজ কথায়, আমরা ত্রুটির হারে সূচকীয়(exponential) হ্রাস অর্জন করেছি। এই ঐতিহাসিক অর্জনটি থ্রেশহোল্ডের নিচে থাকার নামে পরিচিত—যা ত্রুটির হার হ্রাস করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কিউবিট সংখ্যা বৃদ্ধি করে। প্রকৃত ত্রুটি সংশোধনে অগ্রগতি দেখাতে এই “থ্রেশহোল্ডের নিচে” থাকা প্রয়োজন, এবং এটি ১৯৯৫ সালে পিটার শোর কোয়ান্টাম ত্রুটি সংশোধন পদ্ধতি চালু করার পর থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ছিল।
এই ফলাফলে আরও কিছু বৈজ্ঞানিক “প্রথম অর্জন” অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এটি একটি সুপারকন্ডাক্টিং কোয়ান্টাম সিস্টেমে রিয়েল-টাইম ত্রুটি সংশোধনের প্রথম দৃষ্টান্তগুলির একটি—যা কার্যকরী গণনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ত্রুটি যথেষ্ট দ্রুত সংশোধন করতে না পারলে, তারা গণনা শেষ হওয়ার আগেই তা নষ্ট করে দেয়। এটি একটি “বিয়ন্ড ব্রেকইভেন” প্রদর্শনও, যেখানে আমাদের কিউবিট গ্রিডগুলির আয়ুষ্কাল একক শারীরিক কিউবিটের আয়ুষ্কালের চেয়েও দীর্ঘ—এটি প্রমাণ করে যে ত্রুটি সংশোধন পুরো সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করছে।
থ্রেশহোল্ডের নিচে প্রথম সিস্টেম হিসেবে, এটি আজ পর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য স্কেলযোগ্য লজিক্যাল কিউবিটের প্রোটোটাইপ। এটি প্রমাণ করে যে কার্যকরী, বৃহৎ পরিসরের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা সম্ভব। উইলো আমাদের এমন বাস্তব, বাণিজ্যিকভাবে প্রাসঙ্গিক অ্যালগরিদম চালানোর আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে, যা প্রচলিত কম্পিউটারে পুনরায় তৈরি করা সম্ভব নয়।
১০ সেপটিলিয়ন বছর বর্তমান সময়ের দ্রুততম সুপারকম্পিউটারে
উইলোর পারফরম্যান্স পরিমাপ করতে গুগল র্যান্ডম সার্কিট স্যাম্পলিং (RCS) বেঞ্চমার্ক ব্যবহার করেছে। এটি গুগলের দল উদ্ভাবন করেছে এবং এখন এটি ক্ষেত্রের একটি মানদণ্ড হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। RCS এমন একটি বেঞ্চমার্ক যা বর্তমানে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে করা সবচেয়ে কঠিন ক্লাসিক্যাল কাজ। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের একটি সূচনা পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে — এটি পরীক্ষা করে যে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার এমন কিছু করছে কি না যা একটি ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে সম্ভব নয়। যারা একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করছে, তাদের প্রথমে নিশ্চিত করা উচিত যে এটি RCS-এ ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারকে হারাতে পারে; তা না হলে আরও জটিল কোয়ান্টাম কাজ মোকাবিলা করার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের কারণ রয়েছে। আমরা প্রতিটি প্রজন্মের চিপ থেকে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত অগ্রগতি পরিমাপ করতে ধারাবাহিকভাবে এই বেঞ্চমার্কটি ব্যবহার করেছি—গুগল অক্টোবর ২০১৯-এ সাইকামোর ফলাফল এবং সাম্প্রতিক সময়ে অক্টোবর ২০২৪-এ ফলাফল রিপোর্ট করেছে।
উইলো এই বেঞ্চমার্কে বিস্ময়কর পারফরম্যান্স দেখিয়েছে: এটি মাত্র পাঁচ মিনিটের কম সময়ে একটি গণনা সম্পন্ন করেছে, যা বর্তমান সময়ের দ্রুততম সুপারকম্পিউটারের জন্য করতে ১০²⁵ বা ১০ সেপটিলিয়ন বছর সময় লাগবে। এটি সংখ্যায় লিখতে গেলে ১০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ বছর। এই অবিশ্বাস্য সংখ্যা পদার্থবিজ্ঞানের পরিচিত সময়কালকে অতিক্রম করে এবং মহাবিশ্বের বয়সের চেয়েও অনেক বেশি। এটি সেই ধারণাটিকে শক্তিশালী করে যে কোয়ান্টাম গণনা অনেক সমান্তরাল মহাবিশ্বে ঘটে, যা ডেভিড ডয়চ প্রথমে প্রস্তাব করেছিলেন যে আমরা একটি মাল্টিভার্সে বাস করছি।
উইলোর এই সাম্প্রতিক ফলাফল, যা নীচের প্লটে প্রদর্শিত হয়েছে, গুগলের এ পর্যন্ত সেরা। তবে আমরা আরও অগ্রগতি করতে থাকব।
আমাদের মূল্যায়ন যে উইলো কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাসিক্যাল সুপারকম্পিউটারগুলোর একটি, ফ্রন্টিয়ারকে ছাড়িয়ে গেছে, তা রক্ষণশীল অনুমানের ভিত্তিতে করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা ধরে নিয়েছি যে ফ্রন্টিয়ারের জন্য সম্পূর্ণ সেকেন্ডারি স্টোরেজ, যেমন হার্ড ড্রাইভ, ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, যেখানে কোনো ব্যান্ডউইথ সীমাবদ্ধতা নেই — যা ফ্রন্টিয়ারের জন্য উদার এবং অবাস্তব একটি অনুমান।
অবশ্যই, ২০১৯ সালে প্রথম “বিয়ন্ড-ক্লাসিক্যাল” গণনার ঘোষণা দেওয়ার পর যেমনটি হয়েছিল, আমরা আশা করি ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারগুলো এই বেঞ্চমার্কে উন্নতি করতে থাকবে। তবে দ্রুত বেড়ে চলা ব্যবধান দেখায় যে কোয়ান্টাম প্রসেসরগুলো দ্বিগুণ সূচকীয় হারে এগিয়ে যাচ্ছে এবং কিউবিট সংখ্যা বাড়ানোর সাথে সাথে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারগুলোর তুলনায় বিশালভাবে এগিয়ে থাকবে।
References: https://blog.google/technology/research/google-willow-quantum-chip/
Leave a comment