নতুন বছরে শুরুতে নতুন করে সব কিছু পর্যালোচনা করে দেখার সুযোগ হয়, তেমনি এই বছরে যে প্রযুক্তিগুলি আলোচিত হবে এবং ভূমিকা রাখবে তারই একটি তালিকা তৈরি করার প্রয়াস করলাম। প্রযুক্তিক্ষেত্রে কর্মরত লোকজনের সাথে আলাপ আলোচনায় যে পাঁচটি প্রযুক্তিগুলোর কথা ঘুরে ফিরে এসেছে এবং সবথেকে বেশী আলোচিত হয়েছে, সেগুলো একটু সহজ ভাষায় লেখার চেষ্টা করলাম। নতুন বছরের শুরুতে সিট বেল্টটি শক্ত করে আটকে নিন, চলুন প্রযুক্তির জগতে একটু ড্রাইভ দিয়ে আসি।
১. ক্লাউড কম্পিউটিং
প্রথমেই যে প্রযুক্তির কথা না বললেই নয়, তা হল ক্লাউড কম্পিউটিং। আমরা এক দশক ধরে দেখে আসছি যে কম্পিউটারের সব কিছুই ধীরে ধীরে ডেস্কটপ থেকে ক্লাউডে চলে যাচ্ছে। আমরা আগে ইউএসবি তে করে যে ফাইল নিয়ে ঘোরাঘুরি করতাম, তা ড্রপবক্স, ওয়ানড্রাইভ, গুগল ড্রাইভ সহ অন্যান্য ক্লাউড ভিত্তিক ফাইল সার্ভারে পরিবর্তিত হয়েছে। শুধু ক্লাউডে হোস্টিং নয়, আমরা এখন বলছি ক্লাউড কম্পিউটিং, অর্থাৎ ক্লাউডেই কম্পিউটারের প্রসেস ব্যবহার করে তথ্য প্রসেস বা হিসাব-নিকাশের ব্যাপারগুলিও ক্লাউডে হচ্ছে। আগে আমরা যে এক্সেল সহ অন্যান্য হিসাব নিকাশের সফটওয়্যার ব্যবহার করতাম তা থেকে শুরু করে ERP (Enterprise resource planning) সহ সব কিছুই এখন ক্লাউডে চলে এসেছে। সবকিছুর হিসেব থেকে জটিল এনালাইসিস সব কিছু দ্রুততার সাথে হবে এই ক্লাইড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে। ২০২০ থেকে ক্লাউড প্রযুক্তিতে যে নতুন প্রযুক্তি এর প্রয়োগ হবে তা হল Edge Computing। এর অর্থ হল শুধু মাত্র ক্লাউডের উপরই নয় প্রান্তিক পর্যায় বা Edge পর্যন্ত কম্পিউটিং হবে। এর ফলে ক্লাউডভিত্তিক সলিউশনগুলি আরো ভালো মতন ও দ্রুততার সাথে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ২০১৮ থেকে ২০১৯ এ ক্লাউডের ব্যবহার বেড়েছে ২৪%। বৃদ্ধির হার হিসাবে সংখ্যাটি কিন্তু কম নয়। সারা বিশ্ব এখন ক্লাউডে খরচ করছে প্রায় ২১০ বিলিয়ন ডলার। গতবছর বাংলাদেশের মোট বাজেট হল ৬১ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ সারা বিশ্বের ক্লাউডের পিছনে যে টাকা খরচ করেছে তা দিয়ে বাংলাদেশ ৩ বছর চলতে পারবে। অবিশ্বাস্য ! ভাবা যায় কি পরিমান টাকা আমরা ক্লাউডেই খরচ করছি। (তথ্যসূত্র)
২. তথ্য, তথ্য ও তথ্য
ক্লাউডের পরে ডাটা বা তথ্য-কে আমরা বলছি সব কিছুর “রাজা“। আগে যেখানে বলা হত যে দেশে সোনায় সমৃদ্ধ, সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী; এখন সেই কথাটি উল্টে সোনার পরিবর্তে তথ্য -তে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন যে দেশ কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছে যত বেশী তথ্য আছে- তাদের দামই সবথেকে বেশী। ফেসবুক কিংবা গুগল এরা সবাই এখন তথ্যকে কেন্দ্র করেই সবথেকে ধনী প্রতিষ্ঠান। ২০২০ তে এই তথ্য ভিত্তিক অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্ণিং, ডিপ লার্ণিং সহ অন্যান্য প্রযুক্তিগুলি। এই প্রযুক্তিগুলি একটু কাঠখোট্টা শোনালেও সহজ ভাষায় যদি বলি তবে বলব, কম্পিউটার নিজে নিজেই শিখতে পারবে, তথ্য থেকে কম্পিউটার প্যাটার্ণ বের করে পর্যালোচনা করতে পারবে, সেখান থেকেই সে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করে উবার, ফুডপান্ডা সহ অন্যান্য তথ্য ভিত্তিক সার্ভিস আমরা কয়েক বছর ধরে দেখছি। এই বছর অন্যান্য ক্ষেত্রেগুলোতে এই তথ্যের ব্যবসা আরো বাড়বে।
৩. স্বয়ংক্রিয় গাড়ি
ঠিক সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আমরা ২০২০ সনে হয়তো আশা নাও করতে পারি, তবে পর্যায়ক্রমে আমরা এইরকম গাড়ি দেখতে পারবো। বাণিজ্যিকভাবে ইতিমধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন এই স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো বাজারে ছেড়েছে। cars.com এ আপনারা এই স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলোর একটি তালিকা পাবেন। এই বছর আমরা আরো স্বয়ংক্রিয় গাড়ির বিস্তার দেখতে পারবো। এই সংক্রিয় গাড়ির উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটিং প্রযুক্তি।
৪. ক্রিপটোকারেন্সি
আমাদের চেনাজানা ব্যাংকিং সেক্টরে এক মহা বিপ্লব হয়ে যাচ্ছে এই নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগে। আমরা এই নতুন মুদ্রাকে বলছি ক্রিপটোকারেন্সি। ক্রিপটোকারেন্সি এক ধরনের সাংকেতিক মুদ্রা যেখানে ব্লকচেইন নামে নতুন এক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ক্রিপটোকারেন্সিতে তৃতীয় পক্ষের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তাই কে কার কাছে এই ডিজিটাল মুদ্রা বিনিময় করছে তা অন্য কেউ জানতে পারে না, আবার পরিচয় গোপন রেখেও এটা দিয়ে লেনদেন করা যায়। সনাতন মুদ্রার মতন ক্রিপটোকারেন্সি মূল্যমান বা ভ্যালুর উপর কোন দেশের সরকাররেই হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা নেই। তাই পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ডিজিটাল মুদ্রার উপর সে দেশের সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাস্তবে এই মুদ্রার কোনো অস্তিত্ব নেই এবং অনলাইনের মাধ্যমে এই মুদ্রা লেনদেনের পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়। আর এই ধরনের মুদ্রা বিনিময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ক্রিপ্টোগ্রাফি নামক একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে এমন ভাষা বা সংকেত ব্যবহার করে কোড লেখা হয়, তা লেনদেনকারী দুই পক্ষ ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে সক্ষম হয় না, অর্থাৎ গোপনীয় থেকে যাবে। এই বছর আমরা এই ক্রিপটোকারেন্সির প্রয়োগ দেখবো।
৫. ড্রোন ডেলিভারি
ছেলেবেলায় রোমোট গাড়ি নিয়ে কে না বাইনা করেছে। তবে গাড়ি নয়, ছোট হেলিকপ্টার বা ড্রোন দিয়ে এখন অনেকেই হয়তো ছবি তুলেছেন। কিন্তু এই ড্রোন শুধু মাত্র শখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তা প্রয়োগ করা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। নদী ও সমুদ্রে বিপদে পড়া মানুষদের উদ্ধার থেকে শুরু করে অগ্নিনির্বাপণ সহ অনেক কিছুতেই। তবে ২০২০ সনে সবথেকে বেশী প্রয়োগ করা হবে পণ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে। আপনার কুরিয়ার সার্ভিসটি পৌঁছে যাবে আপনার দোরগোড়ায় এই ড্রোনের মাধ্যমে।
আজকে শুধু মাত্র এই পাঁচটি প্রযুক্তি এর সাথে পরিচয় করে দিলাম। তবে শুধুমাত্র এইগুলিই নয় এই লিস্টটি অনেক বড়। সেই জন্য নিয়মিত পড়ুন প্রযুক্তির পত্রিকাগুলো। আমরা বিজ্ঞানী.অর্গ ২০০৬ সনে যাত্রা শুরু করে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের সংবাদ দিয়ে আসছি বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য। নিয়মিত আপডেট পেতে আপনার ইমেইলটি সাবস্ক্রিপশন করে নিন।
It’s a nice post. I agree on you. But also one more technology can make easier one’s life such as smart wifi switch.You can review smart wifi switch from below-
https://bgrabs.com/product/smart-wi-fi-switch-energy-monitoring/
Nice post indeed. I have learned many things from this article.
লেখাটা পড়ে চমতকৃত হলাম। প্রযুক্তি যে এত এগিয়েছে তা আমি জানতাম না। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিশ্বের সাথে কতটা তাল মিলিয়ে চলতে পারবো সেটাই বিষয় । গুরুত্বপূর্ণ তত্ব্য তলে ধরেছেন । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
অনেক দিন থেকেই শুধু শূনেই যাচ্ছি। কই কোন নতুন প্রযুক্তি তো বাংলাদেশে পাইলাম না
এই সব প্রযুক্তিগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
Very informative post. I personally feel this post is going to be helpful to me for my future posts. Thanks for sharing.
nice
ধন্যবাদ বিজ্ঞান ও প্রজুক্তি নিয়ে আপনাদের এতো সুন্দর একটা আর্টিকেল লেখার জন্য
অসাধারণ