কোন একটি সিস্টেমের কোড যদি ওপেনসোর্স বা উন্মক্ত হয়, তবে ব্যবহারকারীরা সেই সলিউশন ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দবোধ বোধ করেন। তার একটি কারণ উন্মুক্ত কোডগুলিতে সিকিউরিটির সমস্যাগুলি কম হয়, কিংবা হলেও তা সহজেই কোডাররা সমাধান করে ফেলেন। অন্যদিকে যে সমস্ত সফটওয়্যার সলিউশন এর কোড উন্মুক্ত নয়, সেটি কিভাবে কাজ করছে- তা ব্যবহারকারীর পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
প্রযুক্তি জগতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলি এই ওপেন সোর্স ফিলোসফি নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত। ফায়ারফক্স, রেডহাট, কিংবা উবুন্তু এবং অনেক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলে ওপেন সোর্স ভিত্তিতে কাজ করে। অপরদিকে মাইক্রোসফট এবং অ্যাপেল প্রতিষ্ঠান মূলত ক্লোজড সোর্স বা তাদের সোর্ড গুলি উন্মুক্ত নয় সেভাবে কাজ করে।
তবে ব্যবহারকারীদের ওপেন সোর্স সচেতনতার কারণে বর্তমানের ক্লোজ সোর্স প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে তাদের সলিউশন গুলোকে ওপেন বা উন্মুক্ত করছে। মাইক্রোসফট তার বেশ কিছু সলিউশন ওপেন সোর্স এ নিয়ে এনেছে। তবে এই দিক থেকে একেবারেই বিপরীত চিত্র আমরা দেখতে পাই অ্যাপল এর ক্ষেত্রে। কেননা তার সমস্ত সলিউশনই তার নিজস্ব হার্ডওয়ার এবং নিজস্ব সফটওয়্যারের ওপর ভিত্তি করে।। বলা যেতে পারে অ্যাপেল তার কোন কিছুই উন্মুক্ত করে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ওপেনসোর্স
এবার দেখা যাক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। ব্যবহারকারীর কাছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিটি পৌঁছে দিতে পেরেছে যে প্রতিষ্ঠানটি তার নাম হল ওপেনএএই (OpenAI)। নামটিতে “ওপেন” শব্দটি থাকার কারণে হয়তোবা আপনারা ভাবছেন যে এর সলিউশনটি উন্মুক্ত। না, আদৌ ব্যাপারটা সে রকম নয়। তাদের কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার কোড গুলি কিংবা ল্যাঙ্গুয়েজমডেল (যে ইঞ্জিনের উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজ করে) এখনো উন্মুক্ত নয়। তাদের এই অদ্ভুত নামকরণের সাথে ওপেন সোর্সের ফিলোসফি মিল খায় না বলে সবার কাছে বেশ সমালোচিত হয় এ অদ্ভুত নামের কারণে।
ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল কী?
ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল হলো একটি ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল যা ভাষা বুঝতে এবং উৎপাদন করতে সক্ষম। এটি প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (NLP) প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলি বড় ডেটাসেটে প্রশিক্ষিত হয় এবং তারা বাক্য, শব্দ এবং বাক্যাংশের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। এর ফলে, তারা পাঠ্য বিশ্লেষণ, অনুবাদ, সারাংশ তৈরি, এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের ধরন
- N-গ্রাম মডেল: এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। এখানে একটি বাক্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক (N) শব্দের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী শব্দের সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি N=2 হয়, তাহলে এটি বিগ্রাম মডেল হিসেবে পরিচিত।
- মার্কভ মডেল: এই মডেলটি বর্তমান অবস্থার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ অবস্থার সম্ভাবনা নির্ধারণ করে। এটি সাধারণত N-গ্রাম মডেলের একটি সম্প্রসারিত সংস্করণ।
- গভীর শিক্ষণ (Deep Learning) মডেল: এই মডেলগুলি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভাষা প্রক্রিয়াকরণ করে। বিশেষ করে, ট্রান্সফর্মার আর্কিটেকচার এবং LSTM (Long Short-Term Memory) মডেলগুলি আধুনিক ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলিংয়ে ব্যবহৃত হয়।
ওপেনসোর্স এবং ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল
তবে আশার কথা হল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলিকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ওপেন সোর্স নিয়ে এনেছে। সেই রকমই একটা প্রতিষ্ঠান হল আমাদের সবার চেনাজানা ফেসবুকের প্রতিষ্ঠান- মেটা। লামা নামে একটা ওপেন সোর্সের ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তারা উন্মুক্ত করেছে যেটা প্রযুক্তিবিদদের কাছে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করতে চান তারা এই লামা টি ব্যবহার করে খুব সহজেই সেটি তৈরি করতে পারবেন।
লামা এর নতুন ভার্সন টি ৩.১। এটি বর্তমানে ৪০৫ বিলিয়ন প্যারামিটার দিয়ে তৈরি করা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর কোন সলিউশন তৈরি করতে গেলে এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল প্রয়োজন হয়। তাই ওপেন সোর্সের সেরকম ভালো কোন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল যদি পাওয়া যায় তাহলে তা প্রযুক্তিবিদদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করবে। আর ওপেন সোর্স হওয়ার কারণে তার ভিতরে খুঁটিনাটি সম্বন্ধে আমরা আরও ভালোমতো জানতে পারবো, যার ফলে সেটি সম্বন্ধে আমাদের জানার ব্যাপারটা আরো ভালো হবে।।
প্রযুক্তিবিদরা সবাই মেটা’র এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাই জুকারবার্গ কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা। আমরা সবাই আশা করছি যে মেটা আরো ভালো ওপেন সোর্সের বিভিন্ন সলিউশন নিয়ে আসবে যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরো ভালো কাজে এবং মানুষের উন্নতির জন্য ব্যবহৃত করতে পারব।
Leave a comment