বাংলাদেশে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সমস্যায় সমাধান করতে পারছিনা, তা নিয়ে হিমশিম খেলেও অন্যদিকে বিশ্বের প্রায় সব দেশই বেশ চিন্তার মধ্যে আছে যে অদূর ভবিষ্যতে এই শক্তির কি হবে। বর্তমানে বিশ্বের শক্তির সিংহভাগই আসে খনিজ তেল থেকে। কিন্তু শক্তির এই ভাণ্ডার অসীম নয়। বড়জোর ৫০ কিংবা একশো বছর চলতে পারে। বা আরও হাজার বছর চলতে পারবে কিন্তু তারপরে কি হবে? একদিন না একদিন এই ভাণ্ডার শেষ হয়ে যাবে। তাই সবাই জোর গবেষণা চালাচ্ছে অন্যান্য শক্তিগুলি নিয়ে।
সবথেকে বেশী শঙ্কার বিষয় হল, মানব জাতি ভালো কোন শক্তির উৎসের সন্ধান না পেলে এর মধ্যেই যদি জ্বালানী তেলের ভাণ্ডার শেষ হয়ে যায় তবে কি হবে। ধারণা করা হচ্ছে তখন জ্বালানী শক্তি নিয়ে যুদ্ধ বেধে যাবে। মনে করা যাক, হটাত মানুষ জানতে পারলো যে মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল এর প্রায় তলানি দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ প্রায় শেষ হতে চলছে। তখন দেখা যাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি তাদের তেল উৎপাদন কমিয়ে দিবে। আর তখনই বিশ্বে একটি বিপর্যয় দেখা যাবে। অবশিষ্ট খনিজ তেল নিয়ে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতি বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতি বিশাল হুমকি হতে পারে। বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা নড়বড়ে কিংবা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যেতে পারে।
জ্বালানী তেলের সরবরাহ কমার কারণে জ্বালানী তেলের দাম হুহু করে বেড়ে যাবে। মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যাবে জ্বালানী তেল। মানবজাতির বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে কোনও না কোনোভাবে যুক্ত এই জ্বালানী তেল। গাড়ি-বাস চলবে না, অফিস আদালত, স্কুল, হাসপাতাল সবই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। খাদ্যের সরবরাহ কমে যাবে বিধায় খাদ্য ঘাটতি কিংবা মহামারি হতে পারে।
অবশিষ্ট খনিজ তেলগুলি প্রচণ্ড দামে বিক্রি করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি লাভ করার চেষ্টা করলেও অন্যান্য দেশগুলির হামলা থেকে রক্ষা নাও হতে পারে। ফলে একটি বিশ্বযুদ্ধ হবার সম্ভাবনা হতে পারে। তবে এইরকম একটি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপকৃত হবে খাদ্য সমৃদ্ধ দেশগুলি, যারা কৃষিকাজ করে। পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেলেও কৃষিকাজে অগ্রগামী দেশগুলিতে তেমন প্রভাব দেখা দেবেনা। তবে সার, কীটনাশক, কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির কারণে তারা প্রথমে কিছু সমস্যায় পড়লেও তারা প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থাতে ফিরে যাবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলি তাদের ভোল পাল্টে কৃষিতে জোর দিবে। কৃষি পদার্থ নির্ভর জ্বালানী শক্তি তৈরিতে মানুষ মনযোগী হবে। যেমন, ভুট্টা থেকে ইথানল এখনই মানুষ তৈরি করে তা দিয়ে গাড়ি চালানোর কাজ চলছে। এই জাতিও আবিষ্কারের দিকে মানুষ বেশী শক্তি প্রয়োগ করবে। এর মধ্যে যদি বিশ্বযুদ্ধ বেধে যায় তবে হয়তো আরও একশো বছরের জন্য মানুষের জীবনযাত্রা থমকে যাবে।
তারপরে যে বিশ্ব দেখা যাবে, তা হয়তো কৃষি নির্ভর বিশ্ব। অনেক দেশে এখন যেমন সামরিক শিক্ষা কয়েকবছরের জন্য নিতে হয়, তেমন দেখা যাবে কৃষি কাজ করার অভিজ্ঞতা নিতে হবে। চাকরির ভাইবাতে পরীক্ষা নেয়া হবে, কৃষি জ্ঞান। হাস্যকর হলেও আমরা যে তেমন একটি বিশ্ব পেতে পারি, তা হলেও হতে পারে। আর এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছি আমরা মানুষেরই। খুব বেশি জ্বালানি শক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছি আমরা।
তবে আশার কথা হলও, তেমন পরিস্থিতিতে যেন পড়তে না হয়, সেজন্য খুব দ্রুত অন্যান্য শক্তির সন্ধানে বিজ্ঞানীরা উঠে পড়ে লেগেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণার বিষয়গুলি দেখলে আমরা দেখতে পাবো সেখানে শক্তি জাতীয় বিষয়গুলি রয়েছে।
পরিশেষে বলবো, আমাদেরও একটু ফিরে তাকাবার সময় এসেছে কৃষিকে আবারও গুরুত্ব দেবার জন্য।
লেখাটি টেকনোলজি টুডে তে ২০১০ এ প্রকাশিত
Leave a comment