গবেষণায় হাতে খড়ি

থিসিস থেকে জার্নাল আর্টিকেল লেখার পদ্ধতি

Share
Share

অতিথি লেখক:
আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।

অনেক শিক্ষার্থী থিসিস লেখা শেষ করার পর সেই থিসিসকে জার্নাল আর্টিকেলে রূপান্তর করতে চায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ থিসিস সাধারণত একাডেমিক কমিটির জন্য লেখা হয়, কিন্তু জার্নাল আর্টিকেল পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষক এবং বিজ্ঞানী সমাজের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি করে। থিসিস একটি বিশাল গবেষণাপত্র, যেখানে দীর্ঘ আলোচনা এবং বিশ্লেষণ থাকে, কিন্তু জার্নাল আর্টিকেল তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত এবং নির্দিষ্ট কাঠামোয় লেখা হয়। সুতরাং, থিসিস থেকে জার্নাল আর্টিকেল তৈরি করার প্রক্রিয়া অনেক সময় জটিল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তবে সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করলে এটি করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় কিছু মৌলিক পদক্ষেপ অনুসরণ করলে একটি সফল জার্নাল আর্টিকেল লেখা সম্ভব।

থিসিসের বৈশিষ্ট্য

থিসিস সাধারণত একটি বিস্তারিত একাডেমিক ডকুমেন্ট, যা অনেক বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও সমালোচনার ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়। এতে একাধিক অধ্যায় থাকে, যেমন introduction, literature review, methods, results, discussion ইত্যাদি। থিসিসে সাধারণত শব্দের কোন সীমাবদ্ধতা থাকে না এবং এটি একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হয়। এতে গবেষণার সকল তথ্য এবং বিশ্লেষণ সন্নিবেশিত থাকে, এবং এর মধ্যে বিস্তারিত IRB approval, tools used, data collection methods ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়।

জার্নাল আর্টিকেলের বৈশিষ্ট্য

অন্যদিকে, জার্নাল আর্টিকেল সংক্ষিপ্ত এবং নির্দিষ্ট কাঠামোয় লেখা হয়, যা গবেষণার প্রধান ফলাফল এবং বিশ্লেষণ তুলে ধরে। এটি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। থিসিসের তুলনায় জার্নাল আর্টিকেল সংক্ষিপ্ত এবং নির্দিষ্ট জার্নালের কাঠামো ও স্টাইল অনুসরণ করা হয়। সাধারণত, জার্নাল আর্টিকেলে গবেষণার মূল ফলাফল উপস্থাপন করা হয়, এবং আলোচনায় ব্যাখ্যা করা হয় যে, কীভাবে এই ফলাফল বর্তমান জ্ঞান বা গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে।

থিসিসকে জার্নাল আর্টিকেলে রূপান্তর করার ধাপ:

১. সঠিক জার্নাল নির্বাচন:


থিসিস থেকে আর্টিকেল লেখার প্রথম ধাপ হলো সঠিক জার্নাল নির্বাচন। গবেষণার উদ্দেশ্য এবং পরিসরের সাথে মিলিয়ে জার্নাল নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি জার্নালের নির্দিষ্ট কাঠামো, সিলেকশন প্রক্রিয়া, এবং রেফারেন্স স্টাইল অনুসরণ করা জরুরি। এছাড়া, acceptance rate, peer review প্রক্রিয়া, impact factor এবং বিষয়ভিত্তিক প্রকাশনা সম্পর্কে জানাও গুরুত্বপূর্ণ।

২. থিসিসের দৈর্ঘ্য কমানো:

থিসিসের মধ্যে বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়, কিন্তু একটি জার্নাল আর্টিকেল লেখার জন্য শুধুমাত্র মূল এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে। থিসিসের অতিরিক্ত তথ্য, ব্যাখ্যা এবং উপপাদ্যগুলো আর্টিকেলে স্থান পায় না। তাই, শুধুমাত্র অপরিহার্য অংশগুলো নির্বাচন করে বাকী অংশ বাদ দিতে হবে, যাতে গবেষণার মূল দিকগুলো স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা যায়।

৩. Introduction অংশে পরিবর্তন:

থিসিসের introduction সাধারণত দীর্ঘ হয়, তবে জার্নাল আর্টিকেলে এটি সংক্ষিপ্ত এবং সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। থিসিসের উদ্দেশ্য এবং প্রধান প্রশ্ন সংক্ষেপে তুলে ধরুন, পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক পূর্ববর্তী গবেষণার তথ্য খুব সংক্ষেপে উল্লেখ করুন, যাতে পাঠকরা গবেষণার গুরুত্ব বুঝতে পারে। এছাড়া, বর্তমান গবেষণায় যে বিদ্যমান গ্যাপ রয়েছে তা কীভাবে পূর্ণ হবে, সেটিও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরুন।

৪. গবেষণার প্রশ্নে ফোকাস:

থিসিসে একাধিক গবেষণার প্রশ্ন থাকলে, জার্নাল আর্টিকেলে একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন বা hypothesis-এ ফোকাস করতে হবে। থিসিসে যেসব উপ-প্রশ্ন থাকে, তা জার্নাল আর্টিকেলে উপস্থাপন করা কঠিন। তাই, মূল প্রশ্নটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা উচিত, যাতে পাঠক বুঝতে পারে গবেষণার সীমা এবং পদ্ধতি।

৫. পদ্ধতিগত অংশে সংক্ষিপ্ততা:

থিসিসে গবেষণার পদ্ধতি বা Methods অংশে বিস্তারিত তথ্য থাকতে পারে, তবে জার্নাল আর্টিকেলে এটি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা উচিত। গবেষণার সঠিক পদ্ধতি ও উপকরণ নির্বাচন করতে হবে, কিন্তু অতিরিক্ত বিশদ এড়িয়ে মূল তথ্য এবং ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করা উচিত।

৬. ফলাফল উপস্থাপন:

Results অংশে শুধুমাত্র প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো তুলে ধরুন। থিসিসে যেখানে বিস্তারিত ফলাফল টেবিল বা চিত্রে উপস্থাপন করা হয়, জার্নাল আর্টিকেলে সেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক টেবিল বা চিত্রে উপস্থাপন করুন। গবেষণার মুখ্য ফলাফলগুলো স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করুন, এবং অন্যান্য বিষয়গুলো শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী উল্লেখ করুন।

৭. আলোচনাতে স্পষ্টতা আনা:

ফলাফল নিয়ে আলোচনাতে (Discussion) শুধুমাত্র মূল শিক্ষা বা গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো ব্যাখ্যা করুন। অন্যান্য ফলাফল পুনরায় আলোচনা করা এড়ান। তার পরিবর্তে, ফলাফলের গুরুত্ব, অন্যান্য গবেষণার সাথে সম্পর্ক, গবেষণার সীমাবদ্ধতা, ভবিষ্যত গবেষণা এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা করুন।

৮. রেফারেন্স সংখ্যা সীমিত করা:

জার্নাল আর্টিকেলে রেফারেন্স সংখ্যা সাধারণত সীমিত থাকে, তাই শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক ও সাম্প্রতিক রেফারেন্সগুলো উল্লেখ করুন। থিসিসে অনেক সময় প্রাচীন বা অতিরিক্ত রেফারেন্স থাকে, যা জার্নালে ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই শুধুমাত্র সেই গবেষণাগুলি উল্লেখ করুন যা আপনার গবেষণার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত এবং সাম্প্রতিক রিভিউ বা প্রাথমিক গবেষণার রেফারেন্সগুলোকে গুরুত্ব দিন।

থিসিস থেকে জার্নাল আর্টিকেল লেখার প্রক্রিয়ায় সঠিক পরিকল্পনা ও ধৈর্য প্রয়োজন। গবেষণার মূল উপাদানগুলো সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।


বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–

https://www.facebook.com/share/p/15fa7ccFbC

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

গবেষণাপত্র খুঁজে পাওয়ার ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক টুল

গবেষণাপত্রগুলি সহজেই খুঁজে পেতে, পড়তে এবং বুঝতে সাহায্য করার জন্য 3টি শক্তিশালী...

কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: i-motif: ডিএনএ-এর নতুন কাঠামো

সম্প্রতি মানব কোষে আবিষ্কৃত রহস্যময় আই-মোটিফ ডিএনএ গঠন আবিষ্কার করুন। জেনে নিন...

গবেষণায় হাতে খড়িজেনেটিকস

ওমিক্স ডেটা (Omics Data)

জিনোমিক্স থেকে প্রোটিওমিক্স পর্যন্ত - ওমিক্স ডেটা কীভাবে জীববিজ্ঞান এবং চিকিৎসায় বিপ্লব...

কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: সাইটেশন নয়, মানই আসল: গবেষক মূল্যায়নে নতুন ভাবনা

শুধু উদ্ধৃতি গণনা কি একজন ভালো গবেষককে সংজ্ঞায়িত করতে পারে? বাংলাদেশের বাস্তব...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

ORCID: গবেষকদের পরিচয় নিশ্চিত করার আধুনিক প্ল্যাটফর্ম

ORCID ID কীভাবে গবেষকদের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি নিশ্চিত করে, নাম বিভ্রান্তি রোধ...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.