নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি রজত দাশগুপ্ত এর। তিনি বর্তমানে সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্নল্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজি ও বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স বিভাগে একজন গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই এপিডেমিওলজিতে পিএইচডি করছেন। এপিডেমিওলজি বা সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত বিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা রোগের বিস্তার, কারণ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা করে; এবং বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স হলো জীববিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবার তথ্য পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করার পদ্ধতি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি. গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথে একজন অ্যাডজাঙ্ক্ট ফ্যাকাল্টি (adjunct faculty) মেম্বার হিসেবে কাজ করছেন।
বিজ্ঞানী অর্গ টিম যখন সাক্ষাৎকার নেবার জন্য তার গুগল স্কলারের প্রোফাইলটি দেখছিল, তখন তার গবেষণা প্রবন্ধের সাইটেশন দেখে হতবাক হবার যোগাড়। গবেষণাপত্রের সাইটেশন বা উদ্ধৃতি হলো এমন একটি সংখ্যা যার মাধ্যমে বোঝায় সেই বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বা পেপারটি কতবার অন্যান্য গবেষকরা রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ যে পেপারে এই সাইটেশন সংখ্যাটি বেশি, তার অর্থ হল সেই পেপারটি গবেষকদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার সকল পেপারগুলির সাইটেশনের সংখ্যা হল প্রায় ৫৮ হাজার। একজন বাংলাদেশি গবেষক বিশ্বের গবেষনাক্ষেত্রে কিরকম ভূমিকা রাখছে তা এই সংখ্যাটি প্রকাশ করে। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই
আমার নাম রজত দাস গুপ্ত, এবং আমি পেশায় একজন চিকিৎসক। আমি ২০১৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছি। এরপর ২০১৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক বছরের ইন্টার্নশিপ করেছি।
পরবর্তীতে, আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি. গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথে (ব্র্যাক JPGSPH) একজন রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে যোগদান করি। ২০১৬ সালে, আমি একই প্রতিষ্ঠানে এমপিএইচ প্রোগ্রামে ভর্তি হই। এমপিএইচ বা মাস্টার অফ পাবলিক হেলথ হলো জনস্বাস্থ্যের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। সেখানে আমি প্রথম ব্যাচের সদস্য হিসেবে ডব্লিউএইচও TDR পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনিং স্কলারশিপ পাই, যা আমাকে পুরো প্রোগ্রাম জুড়ে সম্পূর্ণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই বৃত্তি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে প্রদান করা হয় এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্য গবেষণাকে উন্নীত করতে সহায়তা করে।
আমি ২০১৭ সালে এমপিএইচ প্রোগ্রাম থেকে সর্বোচ্চ একাডেমিক সম্মান নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সময়কালে, আমি উপাচার্যের স্বর্ণপদক, সর্বোচ্চ একাডেমিক সম্মান, এবং অ্যালান রোজেনফিল্ড শ্রেষ্ঠ একাডেমিক পারফরম্যান্স পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছি। এই পুরস্কারগুলি আমি এমপিএইচ প্রোগ্রামের ১২তম ব্যাচে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনের জন্য পেয়েছি। সিজিপিএ বা কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ হলো একজন শিক্ষার্থীর সকল সেমিস্টারের গড় গ্রেড।
আমি স্যার ফজলে হাসান আবেদ লিডারশিপ পুরস্কারও পেয়েছি। এই পুরস্কার নেতৃত্বগুণের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়। এছাড়া, আমি ‘স্বাস্থ্যের জন্য মানবসম্পদ’ থিমে শ্রেষ্ঠ এসএলপি গ্রুপ পোস্টারের জন্য রিচার্ড ক্যাশ পুরস্কারও অর্জন করেছি। এসএলপি বা স্ট্র্যাটেজিক লার্নিং প্রোগ্রাম হলো একটি গ্রুপ ভিত্তিক প্রকল্প, যেখানে শিক্ষার্থীরা বাস্তব সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করে।
ব্র্যাক জেমস পি. গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথে পুনরায় যোগদানের পরে, আমি সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর দ্য সায়েন্স অব ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যান্ড স্কেল-আপ-এ কাজ করেছি। এই কেন্দ্রটি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম কীভাবে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণ করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করে।
২০১৯ সালে, আমি এপিডেমিওলজিতে পিএইচডি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। এপিডেমিওলজি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা রোগের বিস্তার, কারণ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা করে। সেখানে আমার সময়কালে, আমি আমার একাডেমিক এবং গবেষণা কৃতিত্বের জন্য বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছি।
এর মধ্যে আছে আর্নল্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে ডক্টরাল স্টুডেন্ট অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০২৪), যা পিএইচডি শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের জন্য দেওয়া হয়। গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে আউটস্ট্যান্ডিং রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড (২০২৩) পেয়েছি, যা গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি দেয়। এছাড়া, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে ডাইভারসিটিতে এক্সেলেন্সের জন্য আউটস্ট্যান্ডিং গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০২৩) পেয়েছি, যা বিভিন্নতা ও অন্তর্ভুক্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য প্রদান করা হয়।
আমি আর্নল্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে গবেষণা বা প্র্যাকটিসে ডাইভারসিটি, ইকুইটি এবং ইনক্লুশনে এক্সেলেন্সের জন্য গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০২২) এবং জর্জ এম. রিভস গ্র্যাজুয়েট ফেলোশিপ (২০২২) পেয়েছি। এই ফেলোশিপ উচ্চতর গবেষণা ও একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য প্রদান করা হয়।
গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা আমি সামগ্রিকভাবে ডক্টরাল স্টুডেন্ট অ্যাচিভার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছি (২০২২), এবং ২০২২ ও ২০২১ সালে আউটস্ট্যান্ডিং গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড জয় করেছি। সেবামূলক কাজের জন্য আমি এক্সেমপ্লারি গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০২১) পেয়েছি। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট অ্যান্ড ভায়োলেন্স ইন্টারভেনশন ও প্রিভেনশন অফিস থেকে গেমককস স্ট্যান্ড আপ হিরো অ্যাওয়ার্ড (২০২১) পেয়েছি, যা যৌন হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়।
আমি ফ্যাল ২০১৯ স্পিরিচুয়ালিটি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ স্টুডেন্ট এসে কন্টেস্ট-এর প্রথম পুরস্কার জিতেছি (২০২০), যেখানে শিক্ষার্থীরা আধ্যাত্মিকতা এবং জনস্বাস্থ্যের উপর প্রবন্ধ লেখে। এছাড়া, আমি সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে মর্যাদাপূর্ণ প্রেসিডেন্সিয়াল ফেলোশিপ পেয়েছি (২০১৯), যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রদান করা সর্বোচ্চ ফেলোশিপ।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র জনস্বাস্থ্য এবং এপিডেমিওলজি, বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের (NCD) এপিডেমিওলজি নিয়ে। এপিডেমিওলজি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা জনসংখ্যায় রোগের বিস্তার, কারণ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা করে। অসংক্রামক রোগ এমন রোগ যা এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে সরাসরি ছড়ায় না, যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং পুষ্টি সম্পর্কিত রোগ।
আমার কাজের লক্ষ্য হলো এই রোগগুলোর বণ্টন এবং কারণসমূহ বোঝা, যা উচ্চ-আয়ের দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তিমুর-লেসটে প্রযোজ্য। আমি উন্নত এপিডেমিওলজিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করে অনিশ্চিত ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানগুলো পুনর্মূল্যায়ন করি, যেমন ফুসফুসের ক্যান্সারে বডি মাস ইনডেক্স (BMI) এর ভূমিকা। বডি মাস ইনডেক্স হলো ওজন ও উচ্চতার অনুপাত, যা শরীরের ওজনের স্বাস্থ্যকর মাত্রা নির্ধারণে সাহায্য করে।
এছাড়াও, আমি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়ে গবেষণা করি, যেখানে এই দেশগুলো ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের চাপ সামলাতে বিশেষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।
অসংক্রামক রোগ নিয়ে আমার কাজের পাশাপাশি, আমি বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা এবং ইমপ্লিমেন্টেশন সায়েন্সে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছি। ইমপ্লিমেন্টেশন সায়েন্স হলো এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হয়। সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ফ্যামিলিস ইন সোসাইটিতে বর্তমানে কাজের অংশ হিসেবে, আমি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য এবং অসংক্রামক রোগের এপিডেমিওলজির সংযোগস্থলে আগ্রহী হয়েছি।
বিশেষ করে, আমি ইনশিওরেন্স ক্লেইমস ডেটা এবং অন্যান্য বিগ ডেটা ব্যবহার করে গবেষণা করি। ইনশিওরেন্স ক্লেইমস ডেটা হলো বীমা দাবির তথ্য, যা রোগীর চিকিৎসা সেবা গ্রহণের বিবরণ সরবরাহ করে। বিগ ডেটা বলতে এমন বড় এবং জটিল তথ্যের সমষ্টি বোঝায়, যা প্রচলিত ডেটা প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা কঠিন।
এর মাধ্যমে, আমি দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলো কীভাবে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলে এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কীভাবে এই পরিবর্তিত চাহিদার সাথে মানিয়ে নিতে পারে তা অনুসন্ধান করতে পারি।
আমি গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (GBD) প্রকল্পের একজন সহযোগী হিসেবেও কাজ করি, যেখানে আমি বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের প্রতিনিধিত্ব করি। GBD প্রকল্পটি ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (IHME)-এ ভিত্তিক এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়িত। এটি একটি ব্যাপক বৈশ্বিক গবেষণা উদ্যোগ, যা বিশ্বের প্রধান রোগ, আঘাত এবং ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান থেকে মৃত্যুহার এবং অক্ষমতা মূল্যায়ন করে।
আমার প্রাথমিক কাজ, যা আমি আমার মাস্টার অব পাবলিক হেলথ (MPH) থিসিসের সময় করেছি, সেটি ছিল “বাংলাদেশে চিকিৎসা পেশায় নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি: এর কারণসমূহ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিণতি”। এই মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা (mixed-methods study) নারীদের চিকিৎসা পেশায় প্রবেশের প্রেরণা, তাদের ক্যারিয়ার পছন্দ এবং বাস্তব জীবনে তারা যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় তা অনুসন্ধান করেছে। মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা মানে এমন গবেষণা যেখানে গুণগত (qualitative) এবং পরিমাণগত (quantitative) উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও, এই গবেষণায় বাংলাদেশে নারীবহুল চিকিৎসক কর্মীবাহিনীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে, যা স্বাস্থ্যসেবায় লিঙ্গগত গতিশীলতা সম্পর্কে জ্ঞানগত ফাঁক পূরণ করেছে।
আমার ক্যারিয়ারের সময়কালে, আমি পিয়ার-রিভিউড জার্নাল-এ ১২০টি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছি এবং দুটি বইয়ের অধ্যায় রচনা করেছি। পিয়ার-রিভিউড জার্নাল হলো সেইসব একাডেমিক প্রকাশনা যেখানে বিশেষজ্ঞরা প্রবন্ধগুলো পর্যালোচনা করে এবং মান যাচাই করেন।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?
১. আমার গবেষণা জনস্বাস্থ্যে অবদান রাখে অসংক্রামক রোগ (NCDs) যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের মাধ্যমে। এই রোগগুলো উচ্চ-আয়ের দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে বিদ্যমান। আমি এই রোগগুলোর বণ্টন (distribution) এবং নির্ধারক কারণসমূহ (determinants) অধ্যয়ন করি এবং অনিশ্চিত ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানগুলো মূল্যায়ন করি। এর মাধ্যমে, আমি হস্তক্ষেপ এবং নীতি উন্নয়নের মূল ক্ষেত্রগুলো সনাক্ত করতে সহায়তা করি, যা শেষ পর্যন্ত উন্নত স্বাস্থ্য ফলাফলের দিকে নিয়ে যায়।
২. এছাড়াও, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়ে আমার কাজ এই দেশগুলো কীভাবে তাদের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো উন্নত করতে পারে তা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে, যাতে তারা ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের চাপের মোকাবিলা করতে পারে। বিশেষ করে, ইনশিওরেন্স ক্লেইমস ডেটা এবং অন্যান্য বিগ ডেটা ব্যবহার করে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য এবং অসংক্রামক রোগের সংযোগস্থলে আমার গবেষণা দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলো কীভাবে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলে তা আমাদের বোঝার উন্নতি করে।
- ইনশিওরেন্স ক্লেইমস ডেটা হলো বীমা দাবির তথ্য, যা রোগীর চিকিৎসা সেবা গ্রহণের বিবরণ সরবরাহ করে।
- বিগ ডেটা বলতে বড় এবং জটিল তথ্যের সমষ্টি বোঝায়, যা প্রচলিত ডেটা বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে পরিচালনা করা কঠিন।
৩. তদুপরি, গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (GBD) প্রকল্পের মতো বৈশ্বিক উদ্যোগে আমার অংশগ্রহণ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নীতি এবং কৌশল গঠনে অবদান রাখে। এই যৌথ কাজটি এমন প্রমাণ-ভিত্তিক হস্তক্ষেপের উন্নয়নকে সমর্থন করে যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহার এবং অক্ষমতার হার কমাতে পারে।
- গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (GBD) প্রকল্প হলো একটি বিশ্বব্যাপী গবেষণা উদ্যোগ, যা সারা বিশ্বের প্রধান রোগ, আঘাত এবং ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান থেকে মৃত্যুহার এবং অক্ষমতা মূল্যায়ন করে।
৪. অসংক্রামক রোগ নিয়ে আমার কাজের পাশাপাশি, বাংলাদেশে চিকিৎসা পেশায় নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি (ফেমিনাইজেশন) নিয়ে আমার গবেষণা স্বাস্থ্য নীতি গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসা পেশায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নারীর প্রবেশের প্রেরণা, ক্যারিয়ারের চ্যালেঞ্জ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিণতি অনুসন্ধান করে, এই গবেষণা নারী চিকিৎসকদের জন্য প্রধান বাধা এবং সুযোগগুলো চিহ্নিত করে।
- ফেমিনাইজেশন বলতে কোনো পেশায় নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া বোঝায়।
- ক্যারিয়ার চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকতে পারে কাজ-জীবনের ভারসাম্য, পদোন্নতির সুযোগ এবং লিঙ্গগত পক্ষপাত।
এই কাজটি এমন নীতিমালা বিকাশে অবদান রাখতে পারে যা স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে নারীদের আরও ভালোভাবে সহায়তা ও সমর্থন করে, নিশ্চিত করে যে তারা ক্যারিয়ার অগ্রগতি এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায়। নারী চিকিৎসকদের মুখোমুখি অনন্য চ্যালেঞ্জ যেমন কাজ-জীবনের সমন্বয় (work-life balance), ক্যারিয়ার অগ্রগতি এবং লিঙ্গগত পক্ষপাত (gender biases) মোকাবিলা করে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কার্যকরী হতে পারে। শেষ পর্যন্ত, এই গবেষণা একটি শক্তিশালী, আরও ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যা রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের উভয়ের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
একজন বিজ্ঞানীর উচিত বিনয় এবং নম্রতা মত গুণাবলী ধারণ করা, কারণ এই বৈশিষ্ট্যগুলি তাকে নতুন জিনিস শেখার জন্য সবসময় উন্মুক্ত রাখে। তার জিজ্ঞাসু মনের অধিকারী হওয়া উচিত এবং অধ্যবসায় বজায় রেখে ব্যর্থতা গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো ধৈর্য সহকারে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষমতা এবং জ্ঞান অনুসন্ধানে কখনো হাল না ছাড়া।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য যারা বিজ্ঞান, বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞান (medical science) অনুসরণ করতে চান, আমার এই বার্তা:
চিকিৎসা গবেষণা একটি বিশাল এবং সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যা বাংলাদেশে এখনও অনেকাংশে অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
অনেক এমবিবিএস এবং বিডিএস স্নাতক মূলত ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস বা রোগী দেখাশোনায় মনোযোগ দেন। তবে, গবেষণায় প্রচুর সুযোগ রয়েছে যা যুগান্তকারী আবিষ্কার এবং উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
যদি আপনি এর প্রতি আগ্রহী হন, আপনার হৃদয় বা মন -এর কথা শুনুন এবং গবেষণায় ঝাঁপিয়ে পড়ুন—এখানে এত সম্ভাবনা রয়েছে যা আবিষ্কারের অপেক্ষায় আছে।
আপনার যোগাযোগের তথ্য:
rajat89.dasgupta@ জিমেইল.com
আপনার লিংকডইন সাইটের ওয়েবএড্রেস
https://www.linkedin.com/in/rajat-das-gupta-831b6b72
https://scholar.google.com/citations?user=EFPg54oAAAAJ&hl=en
আমরা রজত দাশগুপ্ত এর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি। সাক্ষাৎকারটি কোঅর্ডিনেট করেছেন ড. মশিউর রহমান।
Leave a comment