১। পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারঃ
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন জন হপফিল্ড (John Hopfield) এবং জিওফ্রে হিন্টন (Geoffrey Hinton)। তাঁরা কৃত্রিম স্নায়ুকোষিক নেটওয়ার্ক (artificial neural networks) নিয়ে গবেষণার জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেছেন। হপফিল্ড অ্যাসোসিয়েটিভ মেমোরি মডেল তৈরি করেন, যা সিস্টেমগুলিকে ডেটা পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে। হিন্টন বোল্টজমান মেশিনের বিকাশ করেন, যা মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তাঁদের গবেষণা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং পদার্থবিজ্ঞানের নতুন প্রয়োগে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
তাঁদের কাজ আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি এবং পদার্থবিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
২। রসায়নে নোবেল পুরস্কারঃ
- রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ডেভিড বেকার (David Baker), ডেমিস হাসাবিস (Demis Hassabis), এবং জন জাম্পার (John Jumper)। তাঁরা প্রোটিনের কাঠামো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ডেভিড বেকার প্রোটিন ডিজাইনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন, যেখানে তিনি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরি করেছেন। ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে প্রোটিনের কাঠামো পূর্বানুমান করার একটি মডেল তৈরি করেছেন, যা প্রোটিনের গঠন বোঝার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।
৩। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারঃ
- চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ভিক্টর অ্যামব্রোস(Victor Ambros) এবং গ্যারি রুভকুন (Gary Ruvkun)। তাঁরা ক্ষুদ্র আকারের RNA, বিশেষত মাইক্রো RNA (microRNA), আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পান। এই RNA অণুগুলি কীভাবে জীবের বিকাশ এবং কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে, এবং কখনো কখনো কীভাবে এটি ত্রুটি ঘটায়, তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই গবেষণার মাধ্যমে জীববিজ্ঞানের একটি নতুন মাত্রা উন্মোচিত হয়, যা জিন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
৪। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারঃ
- সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং (Han Kang)। তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে তার “তীব্র কাব্যিক গদ্যের জন্য, যা ঐতিহাসিক ট্রমা মোকাবিলা করে এবং মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে উন্মোচন করে।” হান কাং-এর লেখার মধ্যে মানুষের অভিজ্ঞতার গভীর এবং সংবেদনশীল বর্ণনা উঠে এসেছে, যা তাকে বিশ্ব সাহিত্যের জগতে অসামান্য মর্যাদা এনে দিয়েছে।
৫। শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারঃ
- শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার জিতেছে নিহন হিদানকিয়ো (Nihon Hidankyo) নামে একটি জাপানি সংস্থা। এটি হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার আক্রমণে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সংগঠন। এই সংস্থা পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারকে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নিহন হিদানকিয়ো তাদের সদস্যদের সাক্ষ্য এবং প্রচারের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্রের মানবিক বিপর্যয়ের দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে “নিউক্লিয়ার ট্যাবু” ধারণাটি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে। সংস্থার লক্ষ্য হল এমন একটি বিশ্ব গড়ে তোলা যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র আর কখনও ব্যবহার করা হবে না।
এই পুরস্কারটি তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মনোভাব তৈরি করেছে
৬। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারঃ
- অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দারন অ্যাসিমোগ্লু (Daron Acemoglu), সাইমন জনসন (Simon Johnson), এবং জেমস রোবিনসন (James Robinson)। তাঁরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গঠন এবং তা কীভাবে দেশের সমৃদ্ধি প্রভাবিত করে, সে সম্পর্কে তাঁদের গবেষণার জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেছেন। তাঁদের কাজ বোঝাতে সহায়ক যে, কেনো কিছু দেশ ধনী হয় এবং অন্যরা দরিদ্র থাকে, এবং কীভাবে প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকতে পারে।
Leave a comment