#০৫২ যুক্তরাষ্ট্রে ফার্মাসিউটিকাল গবেষণায় বাংলাদেশের মুখ—মনজুরুল আমিন রনি

👨‍🔬 গবেষকের প্রোফাইল:

ড. মনজুরুল আমিন রনি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত হ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্সেস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্স ও নিউরোফার্মাকোলজি বিষয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত।
তিনি ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগদান করেন এবং সাউথ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অধ্যাপক শফিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালে ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্সে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণা থেকে ছয়টি প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসিতে বি.ফার্ম (২০০৩) ও এম.ফার্ম (২০০৪) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
তাঁর গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র হলো ড্রাগ ডেলিভারি, নিউরোফার্মাকোলজি ও সাইকোফার্মাকোলজি। তিনি Neuroscience Lettersসহ একাধিক আন্তর্জাতিক জার্নালের রিভিউয়ার ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য।

💬 প্রশ্নোত্তর পর্ব:

প্রশ্ন: প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।
উত্তর: আমি বিগত দশ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা ও শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে হ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্সেস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি। অধ্যাপনার স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “Professor of the Year” ও “Academic Excellence Award” পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে আমি প্রথম আসি ২০০৯ সালে, সাউথ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে। সেখান থেকে পাঁচ বছর পর ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্সে ডিগ্রি সম্পন্ন করি। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ফার্ম ও এম.ফার্ম শেষ করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে কাজ করেছি।

প্রশ্ন: আপনি মূলত একজন ফার্মাসিস্ট, কিন্তু গবেষণার প্রতি আপনার আগ্রহ কীভাবে তৈরি হলো?
উত্তর: ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মজীবনের শুরুতেই গবেষণাকে বেছে নিয়েছিলাম নতুন কিছু জানার অদম্য আগ্রহ থেকে। বাংলাদেশে একটি ওষুধ কোম্পানির ফর্মুলেশন ডেভেলপমেন্ট বিভাগে কাজের সময় “extended release drug delivery” এবং “drug stability” বিষয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা পাই, যা আমার মাস্টার্স থিসিসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণার প্রতি আগ্রহ, শিক্ষকদের সহযোগিতা এবং পরিবারের সমর্থনই আমাকে এই পথে অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রশ্ন: Pharmacology বিষয়টি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলুন।
উত্তর: ফার্মাকোলজি ফার্মেসির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যা ওষুধের কার্যপ্রণালি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ব্যবহার ও নিষেধাজ্ঞা, ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশন এবং দেহে ওষুধের গতিবিধি (pharmacokinetics) সম্পর্কে ধারণা দেয়। এটি স্বাস্থ্যপেশাজীবীদের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়।

প্রশ্ন: আপনি নিউরোসায়েন্স ক্ষেত্রে কী ধরনের গবেষণা করছেন?
উত্তর: আমি নিউরোসায়েন্সের ফলিত শাখা, অর্থাৎ নিউরোফার্মাকোলজি ও সাইকোফার্মাকোলজি নিয়ে গবেষণা করেছি।

প্রশ্ন: ড্রাগ ডেলিভারি নিয়ে আপনার গবেষণা সম্পর্কে বলুন।
উত্তর: আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো কম দ্রবণীয় (poorly soluble) ওষুধের দ্রাব্যতা বৃদ্ধি করা। কারণ, পানিতে কম দ্রবীভূত ওষুধ দেহে শোষিত হতে পারে না, ফলে কার্যকারিতা কমে যায়। আমরা “self-emulsification” ও “solid dispersion” পদ্ধতি ব্যবহার করে কিছু ওষুধের দ্রাব্যতা বৃদ্ধি করতে সফল হয়েছি, যা তাদের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে।

প্রশ্ন: Psychopharmacology বিষয়ক আপনার গবেষণা সম্পর্কে বলুন।
উত্তর: সাইকোফার্মাকোলজির মূল লক্ষ্য হলো বিষণ্নতা ও আসক্তির মতো মানসিক রোগের চিকিৎসায় অধিক কার্যকর ওষুধ উদ্ভাবন। বর্তমানে ব্যবহৃত ওষুধগুলোর কার্যকারিতা সীমিত এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলক বেশি। আমরা এমন এক পরীক্ষামূলক ওষুধ তৈরি করেছি যা প্রাণী মডেলে বিষণ্নতা ও অ্যালকোহল-আসক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। মানবদেহে প্রয়োগের আগে মস্তিষ্কে এর কার্যপদ্ধতি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

প্রশ্ন: আপনি Elsevier Outstanding Reviewer সম্মাননা পেয়েছেন—এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর: ২০১৭ সালে Neuroscience Letters জার্নালে রিভিউয়ার হিসেবে অবদানের জন্য আমি Elsevier Outstanding Reviewer সম্মাননা পাই। নিউরোফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি ওই জার্নালের পাশাপাশি আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালের সম্পাদকীয় ও রিভিউয়ার দায়িত্ব পালন করছি।

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে আপনার গবেষণার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: বর্তমান গবেষণার পাশাপাশি আমি চাই বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিউরোসায়েন্স ও ফার্মাকোলজির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হোক। এজন্য আমি বাংলাদেশ নিউরোসায়েন্স সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি এবং pharmacoloz.com নামের একটি শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রশ্ন: তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর: বিজ্ঞান শেখার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বুঝে শেখা, মুখস্থ নয়। প্রতিটি বিষয়ের ‘কেন’ ও ‘কিভাবে’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। বিজ্ঞানী হতে হলে দরকার আগ্রহ, বিনয় ও পরিশ্রম। বাংলাদেশের তরুণরা অত্যন্ত মেধাবী, শুধু সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুযোগের প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পরামর্শ দেব।

প্রশ্ন: আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ গবেষকদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে কি?
উত্তর: হ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন বিষয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু আছে। আগ্রহীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট কলেজ ওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানতে পারেন। ভর্তি হতে TOEFL এবং GRE পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।

ড. মনজুরুল আমিন রনি যুক্তরাষ্ট্রে ফার্মাসিউটিকাল ও নিউরোসায়েন্স গবেষণায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁর গবেষণা বিষণ্নতা ও আসক্তির চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পাশাপাশি তরুণ শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চায় অনুপ্রাণিত করার উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
বিজ্ঞানী.অর্গ টিম তাঁর গবেষণার ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছে এবং আশা করছে, তাঁর অবদান বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

Representing Bangladesh in U.S. Pharmaceutical Research — Dr. Manjurul Amin Rony

Dr. Manjurul Amin Rony is an Assistant Professor in the Department of Pharmaceutical Sciences at Hampton University, Virginia, USA. For over a decade, he has been engaged in teaching and research in pharmaceutical sciences and neuropharmacology.

He came to the United States in 2009 to pursue his Ph.D. at South Dakota State University, where he completed his doctorate in Pharmaceutical Sciences under the supervision of Professor Shafiqur Rahman. His doctoral work resulted in the publication of six peer-reviewed research papers.

Before moving abroad, Dr. Rony earned his B.Pharm (2003) and M.Pharm (2004) degrees from the University of Dhaka, Bangladesh, and served as a lecturer in a private university. His primary research interests include drug delivery systems, neuropharmacology, and psychopharmacology.

Dr. Rony has served as a reviewer for more than a dozen international journals, including Neuroscience Letters, and received the Elsevier Outstanding Reviewer Award (2017) for his contributions.

💬 Interview:

Question: Please tell us a bit about yourself.
Answer: I have been engaged in teaching and research in the United States for the past ten years. Currently, I am working as an Assistant Professor in the Department of Pharmaceutical Sciences at Hampton University. In recognition of my academic work, I received the “Professor of the Year” and “Academic Excellence Award.” I came to the U.S. in 2009 to pursue a Ph.D. at South Dakota State University and completed my degree in Pharmaceutical Sciences five years later. Before that, I completed my B.Pharm and M.Pharm at the University of Dhaka and worked as a lecturer at a private university in Bangladesh.

Question: You started as a pharmacist. What inspired you to pursue research?
Answer: From the beginning of my career, I chose research out of an unending curiosity to learn new things. While working in the formulation development department of a leading pharmaceutical company in Bangladesh, I had the opportunity to study extended-release drug delivery and drug stability, which later became central to my master’s thesis. My teachers, family support, and a genuine desire to explore the unknown have been the key inspirations behind my research career.

Question: Could you explain what Pharmacology is?
Answer: Pharmacology is one of the core branches of pharmacy. It deals with how drugs act on the body, their mechanisms of action, side effects, indications and contraindications, drug interactions, and how the body metabolizes and eliminates them. It provides essential knowledge for pharmacists and health professionals.

Question: What kind of neuroscience research are you involved in?
Answer: I work in the applied area of neuroscience, particularly in neuropharmacology and psychopharmacology.

Question: You have done extensive work on drug delivery systems. Could you elaborate?
Answer: Our main research goal has been to enhance the dissolution of poorly soluble drugs. Most newly discovered drugs are poorly water-soluble, which limits their absorption and effectiveness. Using techniques like self-emulsification and solid dispersion, we have successfully improved the solubility of certain drugs, which could make them more therapeutically effective.

Question: Tell us about your work in psychopharmacology.
Answer: The aim of psychopharmacology research is to develop more effective medications for mental disorders like depression. Current antidepressants have significant limitations—they take 6–8 weeks to work and often cause side effects. We have developed a novel experimental drug that has shown positive results in animal models by reducing both alcohol addiction and alcohol-induced depression. More studies are needed to fully understand its effects on the brain before it can be considered for human use.

Question: You received the Elsevier Outstanding Reviewer Award. What was that recognition for?
Answer: In 2017, I received the Elsevier Outstanding Reviewer Award from Neuroscience Letters for my contributions as a peer reviewer. As a neuropharmacology specialist, I have been invited to review many manuscripts and provide detailed scientific feedback. I also serve on the editorial boards of several other international journals.

Question: What are your future research and academic plans?
Answer: In addition to my ongoing research, I hope to promote neuroscience and pharmacology among young Bangladeshi students. The United States offers numerous funded opportunities for graduate research. To connect students with these opportunities, I am serving as the General Secretary of the Bangladesh Neuroscience Society (BNSS) and have initiated a website for students interested in pharmacology education — pharmacoloz.com.

Question: What advice would you give to young students aspiring to become scientists?
Answer: Learn science in a way that allows you to teach it to others. Focus on understanding concepts rather than memorizing them. Always ask “why” and “how.” To become a scientist, curiosity, humility, and hard work are far more important than innate intelligence. Bangladeshi students are highly talented — they just need the right guidance and opportunities. For advanced training, I encourage them to pursue graduate studies abroad.

Question: Are there opportunities for graduate students to join your university?
Answer: Yes, Hampton University offers both master’s and Ph.D. programs in various fields. Interested students can find details on the university’s Graduate College website (http://www.hamptonu.edu/academics/schools/gradcol.cfm). Applicants generally need to take the TOEFL and GRE exams for admission.

Dr. Manjurul Amin Rony represents Bangladesh in cutting-edge pharmaceutical and neuroscience research in the United States. His work on drug delivery and psychopharmacology opens new possibilities for treating depression and addiction. His dedication to mentoring young scientists and promoting neuroscience education in Bangladesh is equally commendable.

The biggani.org team wishes Dr. Rony continued success in his scientific journey and hopes his work inspires aspiring researchers across Bangladesh.