GenZকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকোয়ান্টাম কম্পিউটিংসাক্ষাৎকার

GenZ গবেষক মোহাম্মদ জুনায়েদ হাসান

Share
Share

নবীন বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকার পর্বে আমরা এইবার কথা বলেছি জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ জুনায়েদ হাসান এর। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে গবষণা করেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায় কিভাবে এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে তিনি কাজ করছেন। নিম্নে তার সাক্ষাতকারটি পড়ুন:

আপনার সম্বন্ধে আমাদেরকে একটু বলুন।

আমি মোহাম্মদ জুনায়েদ হাসান, সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে Johns Hopkins বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করছি। আমার গবেষণার মূল ক্ষেত্র হলো স্বাস্থ্যসেবায় মেশিন লার্নিং এর প্রয়োগ, প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। আমি একজন উদীয়মান গবেষক হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মানব কল্যাণে অবদান রাখতে আগ্রহী।

আপনার গবেষনার বিষয় কি?

আমার মূল গবেষণার বিষয় হলো স্বাস্থ্যসেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং এর প্রয়োগ। আমি বিশেষভাবে ক্লিনিকাল (অসুখ সম্পর্কিত) সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করার জন্য উন্নত ভাষা মডেল (language model) ব্যবহার করছি। এইগুলির মধ্যে রয়েছে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত নোট (admission note or prescription) থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করা, রোগীর অবস্থার পূর্বাভাস দেওয়া, এবং চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা। আমি এই মডেলগুলিকে আরও দক্ষ ও দ্রুত করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন নলেজ ডিস্টিলেশন, প্রুনিং ও কোয়ান্টাইজেশন ব্যবহার করছি। আমার লক্ষ্য হলো এমন প্রযুক্তি তৈরি করা যা চিকিৎসকদের কাজকে সহজ করবে এবং রোগীদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।

আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?

প্রথমত, স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করছে, যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মান উন্নত করছে। দ্বিতীয়ত, ক্লিনিকাল নোট বিশ্লেষণের মাধ্যমে রোগীর অবস্থার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, যা জটিলতা প্রতিরোধে সহায়ক। তৃতীয়ত, মেশিন লার্নিং মডেলগুলোকে আরও দক্ষ করার গবেষণা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কম সময়ে ও কম সম্পদে বেশি রোগীকে সেবা দিতে সাহায্য করছে। সর্বোপরি, এই গবেষণা কাজগুলি স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদান রাখছে।

গবেষনা কাজের কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?

একদিন আমি এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। আমি তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষের হাসি বিশ্লেষণ করছিলাম – সত্যিকারের হাসি নাকি কৃত্রিম। হঠাৎ করে আমার মনে হলো, এই গবেষণা শুধু রোবটদের জন্য নয়, এটি মানুষের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
মনে করুন, একজন মনোবিজ্ঞানী বা অপরাধ বিশেষজ্ঞ যদি নির্ভুলভাবে বুঝতে পারেন কে সত্যি হাসছে আর কে অভিনয় করছে! আমি উত্তেজিত হয়ে পড়লাম। দিনরাত কাজ করে, ট্রান্সফরমার নেটওয়ার্ক এবং মুখের সূক্ষ্ম অঙ্গভঙ্গি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি মডেল তৈরি করলাম।
যখন মডেলটি সফলভাবে বিভিন্ন ডাটাবেসে পরীক্ষা করলাম, তখন বুঝলাম যে আমরা শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং একটি সেতু তৈরি করেছি – যা মানুষের আবেগ ও যুক্তির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে, প্রযুক্তি শুধু সংখ্যা নয়, এটি মানবতার গভীরে প্রবেশ করতে পারে, যদি আমরা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করি।

একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?

একজন বিজ্ঞানীকে আমি একটি বহুমুখী বৃক্ষের সাথে তুলনা করতে চাই। এই বৃক্ষের শিকড় হল কৌতূহল – যা বিজ্ঞানীকে নতুন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এবং অজানাকে জানার জন্য অনুপ্রাণিত করে। এর কাণ্ড হল ধৈর্য – যা দীর্ঘ গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় অটল থাকতে সাহায্য করে। পাতাগুলো হল নমনীয় চিন্তাভাবনা – যা নতুন ধারণা এবং পদ্ধতিগুলোকে আলিঙ্গন করতে সক্ষম করে। ফুলগুলো হল সৃজনশীলতা – যা নতুন তত্ত্ব এবং আবিষ্কারের জন্ম দেয়। ফলগুলো হল বিশ্লেষণী দক্ষতা – যা তথ্য থেকে অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্ত বের করতে সাহায্য করে। এই বৃক্ষের ছায়া হল নৈতিকতা – যা বিজ্ঞানীকে তার কাজের সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন রাখে। আর সবশেষে, এই বৃক্ষ যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে, তা হল সহযোগিতার মনোভাব – কারণ কোনো বিজ্ঞানীই একা সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী নন।
একজন সফল বিজ্ঞানী এই সকল গুণের সমন্বয়ে শুধু নিজের জ্ঞানের সীমানা প্রসারিত করেন না, বরং সমগ্র মানবজাতির জ্ঞানের ক্ষেত্রকেও সমৃদ্ধ করেন।

বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?

প্রিয় বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞান অনুরাগী,
তোমরা হচ্ছো আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীরা – যারা আগামীকাল বাংলাদেশকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত করবে। তোমাদের প্রতি আমার বার্তা হলো:
প্রথমত, তোমাদের কৌতূহলকে জাগ্রত রাখো। প্রশ্ন করতে ভয় পেয়ো না, কারণ প্রতিটি প্রশ্নই জ্ঞানের নতুন দরজা খুলে দেয়।
দ্বিতীয়ত, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যর্থতাকে ভয় পেয়ো না। মনে রেখো, প্রতিটি ব্যর্থতা তোমাকে সফলতার একধাপ কাছে নিয়ে যায়।
তৃতীয়ত, শুধু বইয়ের জ্ঞানে সীমাবদ্ধ থেকো না। প্রকৃতিকে তোমার ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহার করো, তোমার চারপাশের জগৎকে প্রশ্ন করো।
চতুর্থত, সহযোগিতার গুরুত্ব বুঝো। একসাথে কাজ করলে আমরা অনেক দূর এগোতে পারি।
সর্বোপরি, তোমাদের স্বপ্নকে বড় করো। মনে রেখো, আজ যা অসম্ভব মনে হচ্ছে, কালকের বিজ্ঞান তা সম্ভব করে তুলবে। তোমরাই সেই ‘অসম্ভব’কে ‘সম্ভব’ করার নায়ক।
বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানকে কাজে লাগাও। তোমাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আগামী দিনের নোবেল বিজয়ী।
বিজ্ঞানের পথে তোমাদের যাত্রা মঙ্গলময় হোক।

আপনার সাথে যোগাযোগের তথ্য:

junayedhasan100 @ জিমেইল.com

আপনার গবেষনাকাজের লিংক

https://scholar.google.com/citations?user=QwIfzvgAAAAJ&hl=en&oi=ao

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

আল-সাকিব খান পাঠান

এবারের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি আল-সাকিব খান পাঠান এর। বর্তমানে তিনি...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

তানভীর ইসলাম রাজীব

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি তানভীর ইসলাম রাজীব এর।...

জেনেটিকসপরিবেশ ও পৃথিবীবায়োটেকনলজিসাক্ষাৎকার

প্রোফেসর ড. আবিদুর রহমান: উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং পরিবেশবান্ধব গবেষণার পথিকৃৎ

অধ্যাপক আবিদুর রহমান বর্তমানে জাপানের ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের...

সাক্ষাৎকার

মাশরাফি বিন মোবারক

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি মাশরাফি বিন মোবারক এর।...

গবেষণায় হাতে খড়িসাক্ষাৎকার

সাদিয়া ফাতেমা মওলা

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি সাদিয়া ফাতেমা মওলা এর।তিনি...

Three Columns Layout

বাংলাদেশি গবেষকদের কমিউনিটি বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org), যা বাংলা ভাষায় গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য ও সাক্ষাৎকার শেয়ার করে নতুনদের গবেষণায় প্রেরণা দেয়।

যোগাযোগ

[email protected]

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.