ইতিহাসের এই দিনেকলাম

কলাম: আল তুসো: ইতিহাসের গভীর থেকে আধুনিক আলোচনার অগ্রভাগে

Share
Share

এক সন্ধ্যার গল্প—অনেক দিন আগের কথা। পুরনো ঢাকার সরু গলিতে দাঁড়িয়ে এক কিশোর বিস্ময়ভরে তাকিয়ে দেখে অদ্ভুত এক প্রদর্শনী। রং-বেরঙের আলো আর কুশলী ভাস্কর্যের ছায়া-প্রক্ষেপে যেন পরিণত হয় এক স্বপ্নপুরীতে। সময়ের আবর্তে সেই কিশোর বড় হয়, কিন্তু তার স্মৃতিতে গেঁথে থাকে একটিই নাম: আল তুসো। তখনো জানত না, এ ছিল পরবর্তীকালের এক উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্যের ক্ষুদ্র সূচনা—যে ঐতিহ্যে মিশে আছে সৃষ্টির নান্দনিকতা, ইতিহাসের রেখাপাত এবং মানুষের বিস্ময়কাতর অনুসন্ধিৎসা।

একসময় শোনা গেল, আল তুসো নাকি শুধু চিত্র কিংবা ভাস্কর্য নয়, এটি নীরবে বেড়ে ওঠা এক শিল্প-আন্দোলনের নাম, যার শেকড় বিস্তার করেছে দেশের নানা প্রান্তে। ঢাকার বিখ্যাত সাংস্কৃতিক গবেষক অধ্যাপক নূর উল্লাহ বলছিলেন, “আল তুসো আসলে শুধু শিল্পকলারই প্রতিনিধিত্ব করে না, এটি আমাদের ঐতিহ্যও বহন করে। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি শিল্পকর্ম কেবলমাত্র রূপ নয়, বরং আমাদের সমাজের গল্প বলার এক শক্তিশালী মাধ্যম।”

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আল তুসো মূর্ত ধারণা থেকে পরিণত হয় এক বিস্তৃত বিস্ময়ে। নগরজীবনের ব্যস্ততার মধ্যে নতুন প্রজন্মের কাছে বিষয়টি হয়ে ওঠে রোমাঞ্চের একটি ধারা, যেখানে ঐতিহ্যের ছোঁয়া আর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার একাকার হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এসে ভিড় করেন ঢাকার কলাবাগানের ছোট্ট স্টুডিও-গ্যালারিতে, যেখানে প্রদর্শিত হয় বিভিন্ন ধরনের আল তুসো-ভিত্তিক ভাস্কর্য আর চিত্রকলা।

নবীন দর্শনার্থী আফসানা রহমান বলেন, “আমি আগে শুনেছি আল তুসো মূলত বিদেশি এক ঐতিহ্য। কিন্তু এখানে এসে বুঝতে পারছি, আমাদের দেশীয় শিল্পীরাও কী সুন্দরভাবে বিষয়টিকে গ্রহণ ও রূপান্তর করে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। প্রত্যেকটি ভাস্কর্যের পেছনে যেন একটা গল্প আছে, একটা প্রাণ আছে।” তার কথায় স্পষ্ট—আল তুসো আর শুধু সংগ্রহশালার দেয়ালে আটকে নেই, বরং এটি তরুণদের উদ্দেশ্যে তৈরি এক ‘উন্মুক্ত পাঠশালা,’ যেখানে তারা শেখে সৃজনশীলতা ও ইতিহাসের মেলবন্ধন।

শিল্পবোদ্ধাদের মতে, আল তুসো ধীরে ধীরে বাংলাদেশের আর্ট বাজারে বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ‘ওয়্যাক্স স্ট্যাচু’ বা ভাস্কর্যের ধারণা থেকে আক্ষরিক অর্থেই অনুপ্রাণিত হয়েছে এই উদ্যোগ। কিন্তু স্থানীয় সংস্কৃতি ও গল্পের সঙ্গে মিশে এটি হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন কিছু। বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক সায়েদ কাদির বলেন, “এই আল তুসেো সংগ্রহশালায় আমাদের লোকজ উপাদানগুলোর আধিক্য চোখে পড়ার মতো। শুধুমাত্র পুতুল বা ভাস্কর্য নয়, বরং প্রতিটি কাজই যেন ‘বাংলার ঐতিহ্যকে’ ধারণ করছে।”

তবে আশার পাশাপাশি আছে চ্যালেঞ্জও। স্থানীয় নির্মাতারা বলছেন, উচ্চমূল্যের কাঁচামাল, সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থাপনার সীমাবদ্ধতা এখনো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আল তুসো শিল্পী জানান, “এখনো আমাদের অনেক কাঁচামাল বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে খরচ বেড়ে যায়। তাছাড়া এই শিল্প নিয়ে কাজ করবার মত বিশেষ প্রশিক্ষিত কর্মীও হাতে গোনা। একটু বাণিজ্যিক সহায়তা পেলে আমরা এ শিল্পকে আরও পরিচিত ও প্রসারিত করতে পারতাম।”

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি নানা সংস্থাও এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক শিল্পমেলায় আল তুসেো-ভিত্তিক নতুন প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়, যা দারুণ সাড়া ফেলেছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য—সরকারি ও বেসরকারি সমন্বয়ে আল তুসোকে আন্তর্জাতিক শিল্পমঞ্চে তুলে ধরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা সাবিহা জলিল, যিনি উল্লেখ করেন, “আমরা চাই, আল তুসেো আমাদের দেশের গর্ব হয়ে উঠুক। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”

ইতিমধ্যেই কিছু বিদেশি পর্যটক আল তুসোর অনন্যতার খবর শুনে ঢাকার এই গ্যালারিতে এসে মুগ্ধ হয়েছেন। পর্যটক জেমস হাওয়ার্ড বলছিলেন, “আমার ধারণা ছিল, এশিয়ার এই অংশে হয়তো ইউরোপ-আমেরিকার মতো ‘মাদাম তুসো’ অনুরূপ কোনো কালচারাল ইনস্টলেশন নেই। কিন্তু এখানে এসে দেখি, গল্পটি ভিন্ন। স্থানীয় সংস্কৃতিকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।”

সাম্প্রতিককালের শিল্প আলোচনা ও প্রদর্শনীগুলোতে ক্রমবর্ধমান ভাবে উঠে আসছে আল তুসোর ইতিবৃত্ত ও সম্ভাবনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শিল্পকর্মের বিকাশ শুধু শিল্প মহলকে সমৃদ্ধ করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে আরও প্রতিষ্ঠিত করবে। তবে সেই পথ মসৃণ নয়। টেকসই উন্নয়ন, গবেষণায় বিনিয়োগ এবং দক্ষ জনবল তৈরি—এই তিনটি ক্ষেত্রকে প্রাধান্য না দিলে আল তুসোর বিকাশ হয়তো তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছবে না।

অবশ্য নানান সংকটের মাঝেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তরুণ প্রজন্মের সৃজনশীল উদ্যম, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্ভাব্য সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ—সব মিলে আল তুসো আজ শুধু অতীতের এক গল্পে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রতীক। অনেকের বিশ্বাস, সঠিক পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আল তুসেো শীঘ্রই আরো ব্যাপক পরিসরে বিস্তার ঘটাবে, যেখানে দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে তৈরি হবে এক মহাউৎসব—বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভুবনের এক অনন্য সংযোজন।

লেখক: সংবাদ প্রতিনিধি, ঢাকা

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: গবেষণার গতি বৃদ্ধিতে AI প্রযুক্তি

কীভাবে AI প্রযুক্তি, বিশেষ করে Paperguide, গবেষকদের তাদের কাজের গতি এবং নির্ভুলতা...

কলামকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কলাম: এআইকে “ধন্যবাদ” বলার খরচ: ভদ্রতায় বাড়ছে বিদ্যুৎ বিল!

AI-কে "দয়া করে" বা "ধন্যবাদ" বলা ভদ্রতা বোধ করে—কিন্তু আপনি কি জানেন...

কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: i-motif: ডিএনএ-এর নতুন কাঠামো

সম্প্রতি মানব কোষে আবিষ্কৃত রহস্যময় আই-মোটিফ ডিএনএ গঠন আবিষ্কার করুন। জেনে নিন...

কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: সাইটেশন নয়, মানই আসল: গবেষক মূল্যায়নে নতুন ভাবনা

শুধু উদ্ধৃতি গণনা কি একজন ভালো গবেষককে সংজ্ঞায়িত করতে পারে? বাংলাদেশের বাস্তব...

কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: গবেষকদের জন্য AI-ভিত্তিক আকর্ষণীয় এক অ্যাকাডেমিক টুল

গবেষক এবং স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত AI-চালিত টুল, আনারা আবিষ্কার করুন।...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.