কম্পিউটার বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে পরিচিত টুরিং পুরস্কারের চলতি বছরের বিজয়ী রিচার্ড সাটন ও অ্যান্ড্রু বার্তো সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এটি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এআই গবেষণায় রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং-এর জনক হিসেবে পরিচিত এই দুই বিজ্ঞানীর এই উদ্বেগ প্রযুক্তি জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং হচ্ছে এআই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে গুগলের AlphaGo থেকে শুরু করে OpenAI-এর ChatGPT-র মতো যুগান্তকারী প্রযুক্তির পেছনে কাজ করছে এই পদ্ধতি। সম্প্রতি কম্পিউটিংয়ের নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত টুরিং পুরস্কার অর্জনের সময় তারা এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন।
পুরস্কার গ্রহণের সময় অ্যান্ড্রু বার্তো বলেন, “এআই প্রযুক্তি এমন গতিতে এগোচ্ছে যে নিরাপত্তার বিষয়টি পিছিয়ে পড়ছে। যখনই জনগণের নিরাপত্তার চেয়ে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তখনই আমাদের ভাবতে হবে নতুন করে।”
সহবিজয়ী রিচার্ড সাটনও একই সুরে বলেন, “প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সাথে তাল মিলিয়ে নিরাপত্তাকে গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”
তাদের এই বক্তব্যের সাথে একমত অন্য এআই বিশেষজ্ঞরাও। টুরিং পুরস্কার বিজয়ী জিওফ্রে হিন্টন পূর্বেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এআই এমন এক ব্যবস্থা, যার আচরণ আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। এটা মানুষের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যেও এই উদ্বেগ ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন যে, এআই প্রযুক্তির বিকাশের গতি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।
বিখ্যাত এআই গবেষক ইয়োশুয়া বেনজিওও এ নিয়ে বলেন, “এখনই সময় এসেছে এআই প্রযুক্তিতে নৈতিক বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার। শুধু ব্যবসায়িক সফলতা নয়, প্রযুক্তির নৈতিক ও সামাজিক দিক নিয়েও সমানভাবে ভাবতে হবে।”
এআই কোম্পানিগুলো এখন এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশেষজ্ঞদের এই উদ্বেগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা: এআই উন্নয়নে গতি নয়, বরং নিরাপত্তা, নৈতিকতা, ও সতর্কতাকেই দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
Leave a comment