নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
[email protected]
চীনে দৈনিক কোটি কোটি মানুষ লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে কেনাকাটা করেন। ইনফ্লুয়েন্সাররা পণ্যের সরাসরি প্রদর্শন করেন এবং দর্শকদের সঙ্গে লাইভ কথোপকথনে যুক্ত হন। এতে মুহূর্তেই পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হন দর্শকেরা। এই পদ্ধতিতে গত বছর চীনে ৭৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বেচাকেনা হয়েছে। তবে এবার লাইভস্ট্রিমে ঘটে গেলো নতুন এক বিপ্লব। দুই বিখ্যাত চীনা ইনফ্লুয়েন্সার নিজে লাইভে না গিয়েই রেকর্ড আয় করলেন, তাও আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের মাধ্যমে।
সম্প্রতি চীনের জনপ্রিয় লাইভস্ট্রিম ইনফ্লুয়েন্সার লুও ইয়ংহাও এবং শিয়াও মুর ডিজিটাল ভার্সন বা এআই অবতার লাইভস্ট্রিমে হাজির হয়। এসব অবতার দেখতে, শুনতে এবং কথা বলতে আসল মানুষদের মতোই ছিল। চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি বাইডুর তৈরি এই জেনারেটিভ এআই অবতার দুটি সাত ঘণ্টার একটি লাইভস্ট্রিম পরিচালনা করে। এ সময় তারা দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেছে, হাস্যরস ছড়িয়েছে এবং বিভিন্ন পণ্য, যেমন স্মার্টফোন, খাবারসহ বিভিন্ন গ্যাজেট প্রদর্শন করেছে।
লাইভস্ট্রিমে উপস্থিত দর্শকরা সরাসরি এআই অবতারদের সঙ্গে কথোপকথনে যুক্ত হতে পেরেছেন, যা ছিল সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিজ্ঞতা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সাত ঘণ্টার এই লাইভে মোট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭৬ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ লাখ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে এই ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সাররা।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই আয় লুও ইয়ংহাও এবং শিয়াও মু যখন স্বশরীরে লাইভস্ট্রিম করতেন, তার চেয়েও বেশি। তাদের পূর্ববর্তী বাস্তব উপস্থিতিতে পরিচালিত লাইভস্ট্রিমের চেয়ে এই এআই অবতারের আয় আরও বেশি হওয়ায় বিশ্বজুড়েই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
চীনে বর্তমানে লাইভস্ট্রিম শপিংয়ের ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ৭৬ কোটি ৫০ লাখ। এমন বিশাল সংখ্যক ব্যবহারকারীর কারণে এই শিল্পের সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর ঠিক এখানেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগমন একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। যেখানে আগে হোস্ট, ক্যামেরা ক্রু এবং কঠোর শিডিউল মেনে লাইভস্ট্রিম পরিচালনা করা হতো, সেখানে এখন পুরো প্রক্রিয়াটি এআই অবতার দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব।
লাইভস্ট্রিমের এই নতুন পদ্ধতি শুধু মানবিক ক্লান্তি এবং সীমাবদ্ধতা দূর করবে না, বরং এটি একটানা ২৪ ঘণ্টা পরিচালনার সক্ষমতাও রাখে। এর ফলে কমে যাবে পরিচালনা খরচ, বাড়বে কার্যকারিতা এবং গ্রাহকদের সঙ্গে আরও নিবিড় ও দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হবে।
এই ধরনের এআই-চালিত লাইভস্ট্রিমের ফলে যে ধরনের সুবিধা আসছে তা নজিরবিহীন। একদিকে যেমন বাড়বে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের গতি, অন্যদিকে কমবে খরচ, যা উদ্যোক্তা ও ভোক্তা উভয়ের জন্যই ইতিবাচক হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের এই ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক কার্যক্রমে এআইয়ের একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর সম্ভাবনা রয়েছে অনেক বেশি। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে ডিজিটাল বিপ্লব ক্রমেই এগিয়ে চলেছে, সেখানে এ ধরনের প্রযুক্তি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হতে পারে।
তবে এআইয়ের মাধ্যমে লাইভস্ট্রিমিংয়ের প্রচলন বৃদ্ধির সঙ্গে কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও সামনে আসতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চাকরি হারানোর আশঙ্কা। যে সমস্ত হোস্ট ও ক্রুরা এই লাইভস্ট্রিমিংয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করাও ভবিষ্যতের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তাই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতেও মনোযোগ দিতে হবে। এআই অবতার চালিত লাইভস্ট্রিমিংকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে এর সুবিধা নিতে চাইলে, প্রশিক্ষণ ও নতুন দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্ব এখন এআইয়ের যুগে প্রবেশ করেছে, আর এই ধরনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আমাদের জীবনযাত্রাকে করে তুলছে আরও সহজ ও আধুনিক। আগামী দিনগুলোতে এআইয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও দ্রুত ও সুলভ হতে চলেছে, যার উদাহরণ এই চীনা লাইভস্ট্রিম। এই নতুন প্রযুক্তি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে বলে আশা করা যায়।
Leave a comment