“দশভুজা” অর্থাৎ দশটি ভুজ বা হাত যে নারীর। আমরা সবাই জানি যে দেবী দুর্গা এই নামে পরিচিত। কিন্তু একটা চিন্তা মাথা চাড়া দেয় – বাস্তবে দশ হাত বিশিষ্ট নারী কি সত্যই সম্ভব ? একথা ঠিক যে সভ্যতার ইতিহাসে দশ হাত বিশিষ্ট মানুষ জন্মেছে এমন কখনও জানা যায় নি, তবে মনুষ্যের এই দশ হাতের ভাবনা বা কল্পনার কি সত্যিই কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে ? আছে বই কি ! এসো সহজ করে বোঝাই।
মাতৃ-জঠরে ডিম্বাণু শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার পর সেই ডিম্বাণু প্রধানত তিনটি দশার মধ্য দিয়ে ক্রমে পরিবর্তিত হয়ে শিশুর জন্ম হয়।
নিষেকের পর প্রথম সপ্তাহটা সেই ডিম্বাণু “জাইগোট” নামে পরিচিত হয়। এরপর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অষ্টম সপ্তাহ পর্যন্ত এর নাম “এমব্রিয়ো” যাকে অষ্টম সপ্তাহের পর থেকে “ফিটাস্” বলে।
নিষিক্ত ডিম্বাণুর “এমব্রিয়ো” দশার শুরুর দিকেই অর্থাৎ নিষেকের আট থেকে বারো দিনের মধ্যেই সাধারণত ডিম্বাণুটি থেকে অজাত শিশুটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি তৈরি হতে শুরু করে দেয়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এমন দেখা যায় যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি তৈরি হতে শুরু করার অব্যবহিত পূর্বেই নিষিক্ত ডিম্বাণুটি দুই বা তারও বেশী খন্ডে বিভক্ত হয়ে গেল। এক্ষেত্রে ডিম্বাণুর খন্ডগুলো একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে পরিবর্তিত হতে থাকে এবং এক একটি খন্ড থেকে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহ এক একটি শিশু জন্মায়। ফলে একটির বদলে একাধিক শিশু একই সাথে জন্মগ্রহণ করতে দেখা যায় যাদের লিঙ্গ একই এবং অন্যান্য বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলোও প্রায় একই রকম। ধরো যদি এমন দুটি শিশু জন্মায় তাদেরকে বলা হয় “আইডেন্টিকাল ট্যুইন্স”, একইভাবে পাঁচটি শিশু জন্মালে তাদেরকে আমরা বলি “আইডেন্টিকাল কুইন্টিউপ্লিট্স”।
বিরল হলেও কখনও কখনও এমন ঘটনাও ঘটে যে নিষিক্ত ডিম্বাণুর খন্ডে বিভক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ দেরি করে শুরু হয় অর্থাৎ প্রক্রিয়াটি যখন সবে শুরু হয়, ডিম্বাণুটি থেকে ইতিমধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় ডিম্বাণুটির খন্ডিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ডিম্বাণুর খন্ডগুলো একে অপরের সাথে আংশিকভাবে লেগে থেকেই ক্রমে পরিবর্তিত হতে থাকে এবং লেগে থাকার জন্য একটি খন্ডের পরিবর্তন আরেকটি খন্ডের পরিবর্তনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে – যেমন কখনও কখনও একটি খন্ডের স্বাভাবিক ক্রম-পরিবর্তন আরেকটি খন্ডের স্বাভাবিক ক্রম-পরিবর্তনে বাধা সৃষ্টি করে। পরিশেষে যখন শিশুর জন্ম হয়, তা সকলের বিস্ময়ের কারণ হয়ে ওঠে কারণ এক্ষেত্রে একাধিক শিশু একে অপরের সাথে জুড়ে থাকা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। এদেরকে “কনজয়েন্ড বেবিস্” বলে। এই বিস্ময়ের মাত্রা আরেক কাঠি বেড়ে যায় যদি দেখা যায় যে জুড়ে থাকা শিশুগুলির মধ্যে কেউ কেউ পূর্ণাঙ্গই হয়নি। “কনজয়েন্ড বেবিস্” জন্মানোর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বেশ কয়েকবার সামনে এসেছে যে জুড়ে থাকা শিশুগুলির মধ্যে একটি মাত্র শিশু পূর্ণাঙ্গ আর বাকি শিশুগুলির ধড় বা মাথা কিছুই তৈরি হয়নি, শুধু তাদের হাত বা পা-গুলি তৈরি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই ধরনের শিশুদের “অ্যাসিমেট্রিক কনজয়েন্ড বেবিস্” বলে।
এখন একটা কথা ভেবে দেখো যে, কখনও যদি এমন পাঁচটি জুড়ে থাকা স্ত্রীলিঙ্গের শিশু জন্ম নেয় যাদের মধ্যে একজন মাত্র পূর্ণাঙ্গ আর বাকি চারজনের শুধু দুটি করে হাত তৈরি হয়েছে। তাহলে হিসাবটা যা দাঁড়ায় তা হলো – দশ হাত বিশিষ্ট এক কন্যা অর্থাৎ “দশভুজা” যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা বলতে পারি “অ্যাসিমেট্রিক কনজয়েন্ড কুইন্টিউপ্লিট্স”।
Leave a comment