কলাম

সৌরবিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা নিতে হবে সরকারকে

Share
Share

সৌরবিদ্যুৎ বাংলাদেশে অমিত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে
এখনই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া দরকার। দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার
অর্ধেক মেটানো সম্ভব শুধু কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সৌরশক্তি সংগ্রহের
মাধ্যমে। বিকল্প শক্তি হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র,
ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, ইংল্যান্ড, চীন, ভারতসহ বেশ কিছু দেশ।

জার্মানি ২০৪০ সালের মধ্যে সৌরবিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েছে। নেপালের ৬০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। বাকি ৪০ শতাংশের অর্ধেক জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে এবং অন্যরা সৌর বা জলবিদ্যুৎ থেকে চাহিদা মেটাচ্ছে। সেখানে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। চীনের বেইজিং বা সাংহাই শহরের বাড়ির ছাদগুলোয় চোখে পড়ে সারি সারি সোলার প্যানেল। সেখানে শীত মৌসুমে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয় ওয়াটার হিটার হিসেবে। চীন ঘোষণা করেছিল, ২০১১ সালে ৭০ শতাংশ গ্রামে সোলার প্যানেল বসাতে ৫০ শতাংশ ভর্তুতি দেবে।
ভারত ২০২২ সালের মধ্যে ২২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল সোলার মিশন নামে নিলামের মাধ্যমে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের মধ্যে উৎপাদন করবে ২০১৩ মেগাওয়াট, ২০১৭ সালের ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সৌরশক্তি নিয়ে ভারতের জাতীয় গ্রিড তৈরি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রতিটি রাজ্যের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে জুড়ে দেওয়া হবে। ভারতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারিভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। সে দেশের মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে, বছরে এক কোটি সৌর বাল্ব প্রায় ৫০ কোটি লিটার কেরোসিন তেল বাঁচাতে পারে। এর ফলে সরকারের দুই হাজার কোটি রুপি ভর্তুকি বেঁচে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের আবাসিক এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে সোলার প্যানেল সিস্টেম। এ প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের সাহায্যে প্রেসিডেন্ট ওবামার পরিবারের জন্য পানি গরম করার ব্যবস্থা করা হবে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অন্যান্য কাজে লাগানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের জন্য দুটি কম্পানিকে ২০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। জানা গেছে, অ্যাবেনোগা কম্পানি অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে এক হাজার ৯০০ একর জায়গায় ২৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৭০ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ উপযোগী একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে।
সারা দেশে তিন লাখের বেশি গ্রাহক সোলার ব্যবহার করছে। যার মধ্যে দুই লাখ ৪০ হাজার প্যানেল স্থাপন করেছে গ্রামীণ শক্তি। এ ছাড়া আরো ১৫টি সংস্থা এ সোলার প্যানেল স্থাপনে কাজ করছে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ৪৬৫টি উপজেলায় ৪০ হাজারেরও বেশি গ্রাম এবং ১৬টি দ্বীপাঞ্চলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ সৌরবিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছেন। এসব প্যানেল থেকে প্রতিদিন ৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ১৩০ ওয়াটের হিসাবে খরচ হয় ৬৮ হাজার টাকা। গ্রামীণ শক্তি ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের অর্ধেক লোকের কাছে সৌরবিদ্যুৎ পেঁৗছে দিতে কাজ করেছে। পাশাপাশি তারা ৫০ হাজার বায়োগ্যাস এবং এক কোটি উন্নত চুলা বসানোর লক্ষ্যমাত্র ঠিক করছে।
সব ব্যাংক ও শাখায় সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ছাদে এবং বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে সব ব্যাংকের নির্বাহীদের জানিয়েছে, এনজিও ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য এ খাতে ঋণ হোলসেলিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১০০ কিলোয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের বৃহত্তম সোলার মাইক্রো গ্রিড পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। এ প্লান্ট থেকে প্রাথমিকভাবে ৪০০ পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। জাপানি প্রযুক্তিতে নির্মিত এই প্যানেলে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান পূরবী গ্রিন এনার্জি সূত্রে জানা গেছে, এখানে ডিজেলচালিত জেনারেটরের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছিল, তার ইউনিটপ্রতি খরচ ৬৫ টাকা। এখন সোলার শক্তিতে প্রতি ইউনিট ৩০ টাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ আলীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার ভবনগুলোর ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল বসিয়ে অন্তত ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ভবনের মালিকেরা তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২৫ বছর পর্যন্ত মাসে পাঁচ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। প্যানেল স্থাপনের মতো রয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার বাড়ি। এখান থেকে মোট এক হাজার ৪৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
বোরো মৌসুমে দেশে প্রায় ২০ লাখ একর চাষযোগ্য জমিতে ১৬ লাখ ৩০ হাজার সেচ পাম্প ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ১৬ লাখ একর জমি চাষে ব্যবহার হয় ১০ লাখ ৮০ হাজার বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প। বাকি ১১ লাখ ৫৮ হাজার সেচ পাম্প ব্যবহৃত হয় ডিজেলে। সারা দেশে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচ পাম্পগুলোকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হলে বছরে ৭৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ও ৮০ কোটি লিটার ডিজেল সাশ্রয় হবে। ফলে ডিজেল ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সরকারের ৮৫৩ কোটি টাকার ভর্তুকি বেঁচে যাবে। সরকার যদি এখনই আইন করে বাধ্যতামূলকভাবে সকল প্রকার বিল বার্ডে সোলার প্যানেল সংযোজন এবং এসব জ্বালানোর সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়, তবে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

2 Comments

  • আমি ব্যাংক থেকে ঋণ পেলে,২মেগা ওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট দিতাম, আমার কিছু জমি গ্যিড়িট লাইনের পাশে এবং বেশ কিছু টাকাও আছে, কিন্তু সোলার প্যানেল প্লান্ট স্থাপনের অনেক টাকার প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কলাম

শর্টকাট নয়, পরিশ্রমেই সফলতার সত্যিকারের চাবিকাঠি

আজকের যুগে আমরা সবাই দ্রুত সফলতা অর্জন করতে চাই। এই তাড়াহুড়োর মধ্যে...

কলামকিভাবে কাজ করে?

অগ্নি নির্বপক যন্ত্র সমন্ধে কিছু তথ্য

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন। [mc4wp_form...

কলামচিকিৎসা বিদ্যাজেনেটিকস

“দ্যা সিক্রেট অফ লাইফ”

লেখাটি যখন শুরু করেছি তখন বারবার এরিস্টটলের জীবন নিয়ে ধারনার কথা মাথায়...

দেশ-বিদেশের গবেষক, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের একটি অলাভজনক প্লাটফর্ম। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বাংলাকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আমাদের নিবেদন বিজ্ঞানী.org

যোগাযোগ

biggani.org [@]জিমেইল.com

Copyright 2024 biggani.org