অতিথি লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আজকাল বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী এমন অনেক শিক্ষার্থীর কমন প্রশ্ন: বিদেশে গিয়ে ডিগ্রি শেষ করার পর কী করব? আমি কি চাকরি পাব? আমাকে কি স্টাডি শেষে দেশে ফিরে আসতে হবে?
এই প্রশ্নগুলোর পেছনে যে অনিশ্চয়তা ও দ্বিধা থাকে তা খুবই স্বাভাবিক। তবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে আগে জানতে হবে আপনি কেন বিদেশে যাচ্ছেন। যদি আপনার প্রধান উদ্দেশ্য হয় শুধু ভিসা পাওয়া বা কাজ করে অর্থ উপার্জন করা, তাহলে পড়াশোনা আপনার কাছে অগ্রাধিকার নয়। অনেকেই ভাবেন কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাবে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় একসময় কাজটাই মূল হয়ে ওঠে এবং পড়াশোনাটা আস্তে আস্তে গুরুত্ব হারায়।
যারা সত্যিকারের আগ্রহ এবং একাগ্রতা নিয়ে নিজ উদ্যোগে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যান, যারা ল্যাবের কাজ ও গবেষণাকে গুরুত্ব দেন, তারা সাধারণত সফল হন। গবেষণার কাজ সহজ নয়, কিন্তু এটিকে যদি আপনি বিরক্তিকর মনে করেন কিংবা মনে করেন সুপারভাইজার কিছুই বোঝেন না, তাহলে সমস্যাটা শুরু হয় সেখানেই। অনেকেই শুধু আয়ের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসেন, দিনের বড় অংশই কাজ করে কাটান, আর পড়াশোনা গৌণ হয়ে যায়। এমন মনোভাব থাকলে ডিগ্রি শেষ করেও হতাশা এড়ানো কঠিন।
আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় আমি এখনও কাউকে দেখিনি যিনি নিজের যোগ্যতা, সততা ও পরিশ্রমে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে ভালো কিছু করতে পারেননি। যদি আপনি এমন কারও কথা শুনে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনি গল্পের শুধু একপাশটাই শুনেছেন। আপনার লক্ষ্য যদি হয় সত্যিকারের গবেষণা করা, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা শুধু হতাশার গল্প শোনায় তাদের এড়িয়ে চলুন। এরা প্রায়শই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এমন গল্প বলে। সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন, নিজেকে গড়ে তুলুন। হতাশ মানুষদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ তারা নিজের হতাশা অন্যদের মধ্যেও ছড়াতে চায়।
অনেকেই আগে থেকেই ভাবেন, কোন দেশে স্টুডেন্ট ভিসায় কাজের সুযোগ বেশি। এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, কিন্তু যদি সেটিই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সেটি আর শিক্ষার জন্য নয়। যদি আপনার গবেষণায় মান ও দক্ষতা থাকে এবং আপনি আন্তরিকভাবে শিখতে আগ্রহী হন, তাহলে আপনি বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে পড়েও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জায়গা করে নিতে পারবেন। দেশ নয়, আপনার মানই আপনার ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেয়।
স্মরণ রাখবেন, উচ্চশিক্ষা কেবল সার্টিফিকেট পাওয়া নয়। এটি আত্মগঠনের, দক্ষতা বৃদ্ধির এবং নিজের মূল্য আন্তর্জাতিক স্তরে প্রমাণ করার এক সুযোগ।
Leave a comment