আমরা প্রতিদিন স্মার্টফোন ব্যবহার করি, ইলেকট্রিক গাড়ি দেখি, রোবটের অগ্রগতি নিয়ে শুনি। কিন্তু এই আধুনিক প্রযুক্তির নীরব চালিকাশক্তি—দুর্লভ খনিজ উপাদান বা rare earth minerals—সম্বন্ধে আমরা খুব কমই ভাবি।
এ ধরনের খনিজ উপাদানগুলোর দরকার পড়ে হাই-পারফরম্যান্স ম্যাগনেট তৈরিতে, যেগুলো ব্যবহৃত হয় স্মার্টফোন, উইন্ড টারবাইন, স্যাটেলাইট, জেট ইঞ্জিন এবং টেসলার হিউমানয়েড রোবট অপ্টিমাস-এর মতো যন্ত্রে। সম্প্রতি এলন মাস্ক জানিয়েছেন, অপ্টিমাস-এর উৎপাদন বিলম্বিত হচ্ছে। কারণ? চীন কড়া রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে এই খনিজ-ভিত্তিক ম্যাগনেটের উপর।
বিশ্বে মোট দুর্লভ খনিজের প্রায় ৭০% উৎপাদন চীনের দখলে। এর পাশাপাশি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ম্যাগনেট উৎপাদনের প্রযুক্তিও প্রায় সম্পূর্ণরূপে তাদের হাতে। ফলে, চীন যখন এই খাতে কোনও নীতিগত পরিবর্তন আনে, তখন তার প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক শিল্প ও প্রযুক্তিতে—বিশেষত রোবোটিকস, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে।
চীনের এই একাধিকার ভাঙতে অন্যান্য দেশও তৎপর হয়েছে। নতুন সম্ভাবনাময় উৎস হিসেবে উঠে এসেছে গ্রিনল্যান্ড, যার বরফের নিচে রয়েছে অন্যতম ধনী দুর্লভ খনিজের মজুত। যদিও এই খনন নিয়ে পরিবেশবিদদের উদ্বেগ রয়েছে—কারণ এটি একটি সংবেদনশীল পরিবেশগত অঞ্চল।
শুধু রোবোটিকস নয়, টেসলার ইলেকট্রিক গাড়ির মোটরেও ব্যবহৃত হয় এই খনিজভিত্তিক শক্তিশালী ম্যাগনেট, যা গাড়ির কার্যক্ষমতা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন সম্প্রতি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে ইউক্রেনের দুর্লভ খনিজ মজুত উন্নয়নে কাজ হবে। অনুমান করা হয়, ইউক্রেনের ভূগর্ভস্থ সম্পদ বিশ্ব সরবরাহের প্রায় ৫% প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
এই বাস্তবতা স্পষ্ট করে দেয়—দুর্লভ খনিজ এখন শুধু একটি খনিজসম্পদ নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে আধুনিক প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দু এবং বৈশ্বিক ভূরাজনীতির নতুন অস্ত্র।
Leave a comment