মো. ইয়াছিন পাবেল
রসায়ন বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই?
বিজ্ঞানী.অর্গকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানী.অর্গ-এর সকল পাঠককে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আমি মো. ইয়াছিন পাবেল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডায় রসায়ন (পিএইচডি) বিভাগে অধ্যয়নরত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে আমি ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। আমার গবেষণার সূচনা হয় MCRL ল্যাবে অধ্যাপক ড. মো. মমিনুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে, যেখানে আমি ব্যাচেলর প্রজেক্ট এবং মাস্টার্স থিসিস সম্পন্ন করি। এর পরে, বিসিএসআইআরে (BCSIR) রিসার্চ ফেলো হিসেবে ড. মো. হুমায়ুন কবির এবং ড. সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম।
আপনার গবেষণার বিষয় কি?
আমার প্রধান আগ্রহ তড়িৎ-অনুঘটন (ইলেকট্রোক্যাটালাইসিস) প্রক্রিয়ায়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন, পানি, কার্বনডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যৌগ তৈরি করা সম্ভব। এজন্য একটি ভালো অনুঘটক (ক্যাটালিস্ট) প্রয়োজন। একটি কার্যকর ক্যাটালিস্টে একাধিক বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি, যেমন উচ্চ কার্যকারিতা, সিলেক্টিভিটি, পুনঃব্যবহারযোগ্যতা এবং পাশাপাশি এটি সাশ্রয়ী এবং টেকসই হতে হবে। মূলত ক্যাটালিস্ট ডিজাইন করে ইলেকট্রোক্যাটালাইসিস প্রক্রিয়ার অনুসন্ধানে আমি আগ্রহী।
আপনার গবেষণার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে কিংবা করবে?
গবেষণা নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মূল ভিত্তি, যা উদ্ভাবন ও উন্নয়নকে চালিত করে। যদিও গবেষণার ফলাফল সবসময় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারিক হয় না, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আমার গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো কার্যকর অনুঘটক তৈরি করা। একটি দক্ষ অনুঘটক আবিষ্কার বিপ্লবী পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিতে পারে। এর একটি সুপরিচিত উদাহরণ হলো হ্যাবার-বস নাইট্রোজেন-স্থিতিকরণ (নাইট্রোজেন-ফিক্সেশন) বিক্রিয়া, যা একটি আয়রন-ভিত্তিক অনুঘটক ব্যবহার করে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন থেকে অ্যামোনিয়া এবং অন্যান্য নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ তৈরি করে। এ বিক্রিয়ার ফলে রাসায়নিক সারের মাধ্যমে বৈশ্বিক কৃষিতে মোট নাইট্রোজেনের প্রায় অর্ধেক সরবরাহ হয়, বাকি অর্ধেক আসে ডালজাতীয় গাছপালায় জীবজ নাইট্রোজেন-স্থিতিকরণের (বায়োলজিক্যাল নাইট্রোজেন-ফিক্সেশন) মাধ্যমে। এর মানে, একজন মানুষের শরীরে থাকা নাইট্রোজেন পরমাণুগুলোর প্রায় অর্ধেক কখনো না কখনো একটি রাসায়নিক কারখানার মধ্য দিয়ে গিয়েছে এবং হ্যাবার-বস বিক্রিয়ায় নাইট্রোজেন অ্যামোনিয়াতে রূপান্তরিত হয়েছে। হ্যাবার-বস রসায়নের মতো এত বড় প্রভাব মানবজীনে আর কোনো উদ্ভাবন ফেলতে পারেনি।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
ভালো গবেষক হতে হলে কিছু অপরিহার্য গুণাবলী থাকা আবশ্যক। একজন গবেষকের প্রধান দায়িত্ব হলো তথ্য এবং প্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এর জন্য, তাকে অবশ্যই নৈতিক এবং সৎ হতে হবে, এবং এই নৈতিকতা তার ব্যক্তিগত জীবন থেকে পেশাগত জীবনেও প্রতিফলিত হওয়া উচিত। কারণ, সত্যিকার অর্থে ভালো মানুষ না হলে একজন ভালো গবেষক হওয়া সম্ভব নয়।
গবেষকের মূল কাজ হলো সত্যের অনুসন্ধান, এবং এজন্য তার চিন্তা-ভাবনা সহজ ও সুস্পষ্ট থাকতে হবে। সৃজনশীল এবং ফলপ্রসূ চিন্তাভাবনা করার পাশাপাশি, তা উদ্দেশ্যপূর্ণ হতে হবে। যেমন ফরাসি দার্শনিক রেনি দেকার্ত বলেন, “আমি চিন্তা করি, ফলে আমি আছি।”
গবেষণার অগ্রগতির জন্য সহযোগিতা (কোলাবোরেশান) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ভালো যোগাযোগ দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। গবেষণার জগতে মানসিক চাপ সাধারণ বিষয়, তাই একজন ভালো গবেষককে তার সহকর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সহমর্মী হতে হবে। তাকে চাপ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করতে হবে। সর্বোপরি, একজন ভালো গবেষককে সত্যনিষ্ঠ, সৃজনশীল, সহযোগিতামূলক এবং মানবিক গুণাবলীতে পরিপূর্ণ হতে হবে।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
আমি নিজেই একজন তরুণ গবেষক! তবে আমার মাস্টার্স সুপারভাইজার আমাদের নানা সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেগুলোর কিছু শেয়ার করতে চাই।
একজন তরুণ গবেষকের জন্য গবেষণার প্রতি গভীর আগ্রহ থাকা অত্যন্ত জরুরি। নিজের কাজ উপভোগ করতে হবে এবং নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী হতে হবে, যা অনেক সময় ও পরিশ্রম দাবি করে। সময়ানুবর্তিতা গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য, তাই সময়মতো কাজ সম্পন্ন করার দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। একাডেমিক পড়াশোনা এবং গবেষণার কাজ একসাথে সামলানো কঠিন হতে পারে, তাই কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং মাল্টিটাস্কিং দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা একক প্রচেষ্টায় শেখা যায় না। তাই শুরুতেই একজন দক্ষ সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে নিজেকে গড়ে তোলা প্রয়োজন। গবেষণায় অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনেক ক্ষেত্রে জ্ঞান থেকে বেশি কার্যকর। তাই সুপারভাইজার বা সিনিয়রদের পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত, এবং যদি কোনো পরামর্শ অস্পষ্ট মনে হয়, তা নিয়ে আলোচনা করে স্পষ্ট করা উচিত।
গবেষণার ক্ষেত্রে নিজের স্বকীয়তা বিকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে শুরুর দিকে সুপারভাইজারের চিন্তা ও কাজের ধরন অনুকরণ করতে হবে। পাশাপাশি, নিজের চিন্তা ও কাজের ধরন গড়ে তোলার জন্য নিয়মিত গবেষণাপত্র পড়া জরুরি, কারণ এটি জ্ঞান বৃদ্ধি, লেখার মান উন্নয়ন এবং নতুন ধারণার সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
নিয়মিত কনফারেন্স এবং সেমিনারে অংশগ্রহণও অপরিহার্য। এগুলি নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি, গবেষণার নতুন দিক সম্পর্কে জানা এবং নিজেকে আপডেট রাখার সুযোগ করে দেয়।
গবেষণার শুরুতে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানো উচিত নয়। গবেষণা কোনো পেশা নয়, এটি একধরনের নেশা। তবে, বাস্তবতা উপেক্ষা করা যায় না। একজন তরুণ গবেষকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আর্থিক স্থিতিশীলতা, বিশেষ করে যখন পিএইচডির প্রস্তুতি নিতে হয়। এ সময় অনেক অর্থের প্রয়োজন হয় এবং পরিবারের ও সমাজের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এই ক্ষেত্রে প্রথম পরামর্শ হলো ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যাওয়া। একইসাথে, বিভিন্ন স্কলারশিপ ও ফেলোশিপের খোঁজ রাখতে হবে এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের সার্কুলার সম্পর্কে আপডেট থাকতে হবে। যারা দেশে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োজনে, আর্থিক বিষয়ে সুপারভাইজারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা যেতে পারে, কারণ অনেক সময় সুপারভাইজারই ফেলোশিপের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।
অবশেষে, উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি শুধু IELTS/TOEFL বা GRE-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে, গবেষণাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনও গুরুত্বপূর্ণ।
মো. ইয়াছিন পাবেল-এর অনুপ্রেরণামূলক যাত্রার গল্পটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। তাঁর অসাধারণ সাফল্যের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভকামনা। বিজ্ঞান ও গবেষণার জগতে তাঁর অবদান আরও সুদূরপ্রসারী হয়ে উঠুক, এবং তাঁর পথচলা আরও অনেক তরুণ মনকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের দিকে আকৃষ্ট করুক। মো. ইয়াছিন পাবেল-এর জন্য রইল হৃদয়ের গভীর থেকে শুভ কামনা।
Potential in electrocatalyst design: Researcher Md. Yasin Pabel!
Md. Yasin Pabel
Department of Chemistry, University of Florida, USA
First of all, we would like to know about you:
Thank you to Biggani.org for inviting me, and warm greetings to all the readers of Biggani.org.
I am Md. Yeasin Pabel, currently pursuing a Ph.D. in the Department of Chemistry at the University of Florida in the United States.
I completed my Bachelor’s and Master’s degrees from the Department of Chemistry at the University of Dhaka. My research journey began in the MCRL lab under the supervision of Professor Dr. Md. Mominul Islam, where I completed my Bachelor project and Master’s thesis. Afterwards, I was involved in research activities as a Research Fellow at BCSIR (Bangladesh Council of Scientific and Industrial Research) with Dr. Md. Humayun Kabir and Dr. Sabina Yasmin.
What is your area of research?
My primary interest lies in electrocatalysis processes. Through this process, various important compounds can be synthesized from oxygen, water, carbon dioxide, nitrogen, etc. For this, a good catalyst is necessary. An effective catalyst must have multiple properties, such as high efficiency, selectivity, reusability, and it should also be cost-effective and sustainable. I am mainly interested in exploring electrocatalysis processes by designing catalysts.
How are your research works benefiting or will benefit us?
Research is the foundation for creating new knowledge, which drives innovation and development. Although research results are not always immediately practical, they play a crucial role in building a sustainable future in the long term.
My main goal is to develop effective catalysts. Discovering an efficient catalyst can open up opportunities for revolutionary changes. A well-known example is the Haber-Bosch nitrogen fixation reaction, which uses an iron-based catalyst to produce ammonia and other nitrogen-containing compounds from nitrogen and hydrogen. This reaction supplies about half of the total nitrogen used in global agriculture through chemical fertilizers; the other half comes from biological nitrogen fixation in leguminous plants. This means that about half of the nitrogen atoms in a human body have at some point passed through a chemical factory and been converted from nitrogen to ammonia via the Haber-Bosch process. No other innovation has had such a significant impact on human life as Haber-Bosch chemistry.
What qualities do you think a scientist should possess?
To become a good researcher, certain essential qualities are necessary. A researcher’s primary responsibility is to make accurate decisions based on data and evidence. For this, one must be ethical and honest, and this integrity should be reflected both in personal and professional life. Because, without being a truly good person, one cannot become a good researcher.
The main task of a researcher is to seek the truth, and for that, their thinking must be straightforward and clear. Alongside creative and productive thinking, it must be purposeful. As French philosopher René Descartes said, “I think, therefore I am.”
Collaboration is extremely important for the advancement of research. For this, good communication skills and commitment are necessary. Mental stress is common in the world of research, so a good researcher must be compassionate and empathetic towards their colleagues. They need to develop the mental resilience to overcome stress and move forward. Above all, a good researcher should be truthful, creative, collaborative, and full of human qualities.
Do you have any message or advice for young students in Bangladesh who want to work in science?
I am myself a young researcher! However, my Master’s supervisor gave us important advice from time to time, and I would like to share some of those.
For a young researcher, having a deep interest in research is extremely important. One must enjoy their work and be eager to learn new things, which often demands a lot of time and effort. Time management is essential in research, so developing the skill to complete tasks on time is necessary. Balancing academic studies and research work together can be challenging, so prioritizing tasks and developing multitasking skills are very important.
Research cannot be learned through solitary efforts. Therefore, from the beginning, one needs to develop themselves under the guidance of a skilled supervisor. In research, experience is often more effective than knowledge. So, advice from supervisors or seniors should be taken seriously, and if any advice seems unclear, it should be discussed to clarify.
Developing one’s own uniqueness in research is very important, but in the beginning, one should imitate the thinking and working style of the supervisor. In addition, regularly reading research papers is necessary to develop one’s own thinking and working style, as it helps to increase knowledge, improve writing quality, and generate new ideas.
Regular participation in conferences and seminars is also essential. These provide opportunities for networking, learning about new aspects of research, and keeping oneself updated.
At the beginning of research, one should not focus on balancing gains and losses. Research is not just a profession; it is a kind of passion. However, reality cannot be ignored. The biggest challenge for a young researcher is financial stability, especially when preparing for a Ph.D. At this time, a lot of money is needed, and one faces various questions from family and society. In this case, the first advice is to move forward with patience. At the same time, one should keep an eye out for various scholarships and fellowships and stay updated on announcements from scientific institutions. Those who want to build a career in the country need to prepare themselves for these institutions. If necessary, one can have open discussions with the supervisor about financial matters, as often the supervisor can arrange fellowships.
Finally, preparation for higher education should not be limited to IELTS/TOEFL or GRE; acquiring skills and knowledge in various research-related areas is also important.
Leave a comment