নতুন প্রযুক্তিবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

১৬ বছর অন্ধ থাকার পর—মস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে ফিরে পেলেন দৃষ্টিশক্তি!

Share
Share

নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
📧 [email protected]

একজন বিজ্ঞান শিক্ষিকার জীবনে কীভাবে বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত আবিষ্কার নতুন আলো এনে দিল—এই গল্প যেন কল্পকাহিনির মতোই! কিন্তু এটি একেবারেই বাস্তব, আর সেই বাস্তবতাই আমাদের বিজ্ঞানচর্চার সম্ভাবনা নতুন করে চিনিয়ে দিচ্ছে।

আজকের গল্পের নাম বার্না গোমেজ। একসময় ক্লাসে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের চোখে চোখ রেখে বলতেন, “তোমাদের চোখ দিয়েই তো আমি বিজ্ঞান দেখি।” কিন্তু একটা সময় তার সেই চোখগুলো আর কিছুই দেখতে পেত না। ১৬ বছর ধরে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধ ছিলেন। কিন্তু আজ তিনি হাসিমুখে বসে আছেন এক পরীক্ষাগারে, চোখে রয়েছে একজোড়া বিশেষ চশমা—যার মধ্যে লাগানো রয়েছে একটি ক্যামেরা, আর মাথার ভেতরে বসানো হয়েছে ছোট্ট একটি চিপ। আর এই যুগলবন্দিই তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে আলো দেখার অনুভব!

🔍 কীভাবে সম্ভব হলো এটা?

গল্পটা শুরু হয় “Utah Electrode Array” নামের একটি মাইক্রোচিপ দিয়ে। এটি এমন এক প্রযুক্তি যা আমাদের মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স—মানে, চোখ থেকে আসা আলো ও ছবির তথ্য প্রক্রিয়াকরণ হয় যেখানে—সেই অংশে বসানো হয়।

🧠 মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযোগ কেমন করে?

চলো, একটুখানি কল্পনা করি। ধরো, তুমি একটা সিনেমা দেখছো। চোখ দিয়ে আলো ঢুকে তোমার মস্তিষ্কে ছবির একটা ছাপ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বার্নার চোখ আর কাজ করছিল না। বিজ্ঞানীরা ঠিক করলেন—চোখকে বাইপাস করে সরাসরি মস্তিষ্কে ছবির তথ্য পাঠাবেন।

তাঁরা একটি ইলেকট্রোড অ্যারে মস্তিষ্কে স্থাপন করলেন, যেটি ছোট ছোট বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পাঠিয়ে চোখ ছাড়াই মস্তিষ্কে ছবি তৈরি করতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি ক্যামেরা যুক্ত চশমা। ক্যামেরাটি যা দেখে, তা রূপান্তরিত হয় সংকেতে—যা সরাসরি মস্তিষ্কে গিয়ে ছবির ছায়া তৈরি করে।

🔡 অক্ষর দেখা, আবার?

হ্যাঁ! বার্না গোমেজ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে I, L, O এর মতো কিছু সহজ অক্ষর শনাক্ত করতে পেরেছেন। এটা এমন নয় যে তিনি আমাদের মতো পুরোপুরি স্পষ্ট দেখতে পান—কিন্তু একরকম আলো-ছায়ার মাধ্যমে সেই অক্ষরগুলো বোঝা সম্ভব হয়েছে। এটি এক দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার প্রথম ধাপ

📷 এই ক্যামেরা চশমা ঠিক কীভাবে কাজ করে?

একটা সহজ উদাহরণ দিই। ধরো তুমি মোবাইলে ছবি তুলছো। সেই মোবাইল তোমার হাতে নেই—তুমি পরেছো একজোড়া চশমা, যাতে একটি ক্যামেরা বসানো। ক্যামেরা যা দেখে, সেই ছবির সিগনাল চলে যায় একটা কম্পিউটারে। আর সেই কম্পিউটার সেটা রূপান্তর করে মস্তিষ্কের ভাষায়—ইলেকট্রিক সিগনালে। তারপর সেই সিগনাল মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে গিয়ে ছোট ছোট আলোর বিন্দুর মতো অনুভূতি তৈরি করে। এতে করে মস্তিষ্ক বুঝে নিতে পারে—কোনো আকার সামনে আছে।

🧪 এই আবিষ্কারের পেছনের বিজ্ঞান

এটি শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি স্নায়ুবিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী প্রয়োগ। আমরা জানি, মস্তিষ্কে লক্ষ লক্ষ নিউরন রয়েছে, যেগুলো একে অপরের সঙ্গে বৈদ্যুতিক সংকেত আদান-প্রদান করে কাজ করে। Utah Electrode Array ঠিক এই নিউরনগুলোকেই আলতো করে বৈদ্যুতিক স্পন্দন দিয়ে ‘দেখার অনুভূতি’ তৈরি করছে।

🏥 কেন এই গবেষণা এত গুরুত্বপূর্ণ?

এই গবেষণা যদি সফলভাবে আরও বহু মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে অনেক অন্ধ মানুষ আংশিক হলেও দৃষ্টি ফিরে পেতে পারেন। এটি বায়োনিক ভিশন নামের একটি নতুন শাখার জন্ম দিচ্ছে, যেখানে মানুষের দেহের সীমাবদ্ধতা প্রযুক্তির মাধ্যমে কাটিয়ে তোলা হচ্ছে।

📚 শেষ কথা: বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকেও হার মানায়

একসময় যেসব বিষয়কে অসম্ভব মনে হতো—আজ সেগুলো বাস্তব হয়ে উঠছে। ১৬ বছর অন্ধ থেকে হঠাৎ অক্ষর চিনে ফেলা কোনো যাদু নয়—এটি বিজ্ঞান, মানুষের ধৈর্য আর গবেষণার ফল।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, এই গল্প শুধু চোখের আলো ফিরে পাওয়া নয়—এটা একটি আশার আলো। বিজ্ঞানকে ভালোবাসো, শেখো, প্রশ্ন করো। কারণ হয়তো আগামী দিনে এমন কোনো প্রযুক্তি তৈরি হবে তোমার হাত ধরেই—যা অন্ধ নয়, বরং পুরো পৃথিবীকেই নতুন আলো দেখাবে।


🖋 লেখক: নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
📮 যোগাযোগ: [email protected]

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
নতুন প্রযুক্তিপদার্থবিদ্যা

নিউক্লিয়ার ফিউশন: পরিচ্ছন্ন শক্তির এক নতুন ভোরের দ্বারপ্রান্তে আমরা?

নিউক্লিয়ার ফিউশন কীভাবে একটি পরিষ্কার, কার্যত সীমাহীন শক্তির ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয় তা...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানতুন প্রযুক্তি

ডলফিনের ভাষা বুঝবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!

উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডলফিনের ভাষা ডিকোড করে ডলফিনগেমা এআই প্রকল্প কীভাবে...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরমহাকাশ

নাসার সংকট: ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে নাসা গভীর অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, যার মধ্যে বিশাল...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরমহাকাশ

সূর্য কি সুপারফ্লেয়ার এর মতন বিস্ফোরিত হতে পারে?

আমাদের সূর্য কি কোনও ধ্বংসাত্মক সুপারফ্লেয়ার সৃষ্টি করতে পারে? সৌর সুপারফ্লেয়ার সম্পর্কে...

গল্পে গল্পে বিজ্ঞানবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

একটি রঙ, যা আপনি দেখতে পারেন না!

"ওলো" এর বৈজ্ঞানিক রহস্য আবিষ্কার করুন, একটি অসম্ভব রঙ যা মানুষ নিখুঁত...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.