নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ |
যোগাযোগ: [email protected]
পটভূমি: বায়োলজিক্যাল কম্পিউটিং কী?
আমরা কম্পিউটার বলতে বুঝি সিলিকন চিপে গঠিত সেই যন্ত্র যা নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ করে। আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) গঠিত হয়েছে এই ডিজিটাল কম্পিউটারগুলোকে ভিত্তি করে। কিন্তু জীববিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা – বায়োলজিক্যাল কম্পিউটিং (Biological Computing) – এমন এক ধারণা, যেখানে কম্পিউটিং-এর কাজ করা হয় জীবন্ত কোষ বা জৈব উপাদান ব্যবহার করে।
এর মূল ধারণা হলো: যেহেতু মানুষের মস্তিষ্ক আশ্চর্যজনক দক্ষতায় চিন্তা ও শেখার কাজ করে, তাহলে কেন না সেই মস্তিষ্কের কোষ (নিউরন) ব্যবহার করেই কম্পিউটার তৈরি করা যায়? এর ফলে তৈরি হবে এমন এক বুদ্ধিমত্তা, যা শুধু ডেটা প্রক্রিয়াকরণই নয়, বরং শেখার ও অভিযোজিত হবার ক্ষমতাও রাখবে।
বায়োলজিক্যাল কম্পিউটার CL1 – এক বৈপ্লবিক উদ্ভাবন
২০২৫ সালের ২ মার্চ, স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস-এ অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান Cortical Labs আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করল বিশ্বের প্রথম বায়োলজিক্যাল কম্পিউটার CL1।
এই যন্ত্রটি “Synthetic Biological Intelligence (SBI)” ধারণার ভিত্তিতে তৈরি – অর্থাৎ এটি মানুষের ল্যাব-নির্মিত নিউরন (মস্তিষ্ক কোষ) এবং সিলিকন চিপস একত্র করে এমন একটি কম্পিউটিং সিস্টেম গড়ে তুলেছে, যা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে।

CL1 এর বিশেষত্ব কী?
- জীবন্ত নিউরন ব্যবহার: CL1-এ প্রায় ১ মিলিয়ন নিউরন ব্যবহৃত হয়েছে, যা গবেষণাগারে মানুষের স্টেম সেল থেকে তৈরি।
- শেখার ক্ষমতা: এই নিউরনগুলো আগে “Pong” গেম খেলে শেখার প্রক্রিয়া দেখিয়েছে, আর এখন গবেষণার পরিধি বিস্তৃত হচ্ছে মেডিকেল রিসার্চ ও রোবটিক্স পর্যন্ত।
- শক্তি সাশ্রয়ী: সাধারণ AI চিপের তুলনায় CL1 প্রায় ১০ লক্ষ গুণ কম শক্তি খরচ করে।
- সাশ্রয়ী মূল্য: CL1-এর দাম প্রায় $৩৫,০০০ মার্কিন ডলার যা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।
- Wetware-as-a-Service (WaaS): Cortical Labs রিমোট ক্লাউডের মাধ্যমে গবেষকদের এই কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে, যাতে করে যে কেউ সারা বিশ্ব থেকে এটিকে ব্যবহার করতে পারেন।
কীভাবে কাজ করে CL1?
CL1 মূলত নিউরনকে ট্রেনিং দিয়ে এমনভাবে শেখায় যেন তারা ইনপুট সিগন্যাল অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি যান্ত্রিক কম্পিউটারের মতো নির্দিষ্ট লজিক অনুসরণ করে না, বরং বাস্তব মানুষের মস্তিষ্কের মতো নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে শেখে।

প্রযুক্তির ভবিষ্যত কী?
বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার ২০২৪ সালে ছিল ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং অনুমান করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে বায়োলজিক্যাল কম্পিউটিং একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে, যেখানে কেবল মেশিন নয়, জীববিজ্ঞানের জ্ঞানও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও মানবিক করে তুলবে।
গবেষকরা এখন চেষ্টা করছেন একটি Minimal Viable Brain বা ক্ষুদ্রতম কার্যকর মস্তিষ্ক তৈরি করতে, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার মৌলিক রূপ বুঝতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্ব
স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এখন থেকেই এই ধরণের গবেষণা ও প্রযুক্তির বিষয়ে জানলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক গবেষণায় অংশগ্রহণ সহজ হবে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউরোসায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স ও AI – এই বিষয়গুলোতে দক্ষতা গড়ে তোলা গেলে, একদিন বাংলাদেশের ছাত্ররাও CL1-এর মতো উদ্ভাবনের অংশ হতে পারে।
উপসংহার
CL1 প্রমাণ করছে, আমরা এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করছি যেখানে প্রযুক্তি আর জীববিজ্ঞান একে অপরের হাত ধরছে। ভবিষ্যতের কম্পিউটার হয়তো কেবল কোড নয়, রক্ত-মাংসের কোষ দিয়েই গঠিত হবে। স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য এখনই সময় — নতুন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হবার, গবেষণার পথে পা বাড়ানোর।
Leave a comment