উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগকলাম

কলাম: আমরা ক্লাসে শিক্ষককে প্রশ্ন করতে কেন ভয় পাই?

Share
Share

অতিথি লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আমরা যারা বিভিন্ন দেশের ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছি বা ক্লাস নিয়েছি, তারা নিশ্চয়ই দেখেছি যে সেখানে শিক্ষার্থীরা যেকোনো কিছু না বুঝলে সহজেই শিক্ষককে প্রশ্ন করে। শিক্ষকরাও ধৈর্য সহকারে সব প্রশ্নের উত্তর দেন। অনেক সময় অনেক শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়টি পুরোপুরি না বুঝা পর্যন্ত বারবার প্রশ্ন করে। যদি শিক্ষক কোনো প্রশ্নের উত্তর সঙ্গে সঙ্গে না দিতে পারেন, তাহলে নিঃসঙ্কোচে বলে দেন এটি এখন আমার জানা নেই, জেনে নিয়ে পরে জানাব। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।

কিন্তু আমরা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এই জায়গাটিতে অনেক পিছিয়ে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনো প্রশ্ন করার সংস্কৃতি পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে কিছু না বুঝলেও চুপ করে বসে থাকে, প্রশ্ন করতে সংকোচবোধ করে। কারণ অনেকের মনেই একটা অদৃশ্য ভয় কাজ করে আমি যদি প্রশ্ন করি, অন্যরা ভাববে আমি সহজ বিষয়ও বুঝি না। এমনকি অনেকে বিদেশে পড়তে এসেও প্রফেসরকে প্রশ্ন করতে দ্বিধাবোধ করে। সবসময় মনে করে প্রফেসর কী ভাববেন? রেগে যাবেন নাকি? যদি মনে করেন এত সহজ বিষয়ও আমি বুঝিনি! অথচ এই ভয়টাই শেখার পথে সবচেয়ে বড় বাধা।

বিদেশি শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্ন করাকে সবসময় উৎসাহিত করা হয়। শিক্ষার্থীরা শুধু প্রশ্নই করে না, অনেক সময় নিজেদের মতামত বা ভিন্নমতও শ্রদ্ধার সঙ্গে তুলে ধরে। শিক্ষকও তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও প্রশ্ন করাকে বেয়াদবি, অযথা স্মার্ট দেখানোর চেষ্টা কিংবা অতিরিক্ত উৎসাহের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। প্রশ্ন করলে অনেক সময় সহপাঠীরা ঠাট্টা করে, এমনকি কিছু শিক্ষক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান। ফলে ওই শিক্ষার্থীর মনোবল নষ্ট হয় এবং বাকিদের মাঝেও প্রশ্ন করার আগ্রহ কমে যায়।

এই সংস্কৃতি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়, পরিবারেও দেখা যায়। ছোট শিশুরা যখন কৌতূহলবশত নানা প্রশ্ন করে, অনেক সময় বড়রা বিরক্ত হয়ে বা অজান্তেই বলে এত জানার দরকার নেই বা এত প্রশ্ন করা বন্ধ করো। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া শিশুর মনে নেতিবাচক বার্তা দেয় এবং তারা মনে করে প্রশ্ন করা ঠিক নয়। এর ফলে শিশুর কৌতূহল দমিয়ে দেওয়া হয়, যা তার মেধা বিকাশের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি।

প্রশ্ন করা শুধু শেখার একটি কৌশল নয় বরং এটি চিন্তার গভীরতা, বিশ্লেষণক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। একজন শিক্ষার্থী যখন প্রশ্ন করে সে শুধু নিজে শিখছে না, বরং অন্য শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হচ্ছে। কারণ যে প্রশ্ন একজন করছে সেটি অনেকের মনেও ছিল কিন্তু তারা জিজ্ঞাসা করার সাহস পায়নি।

শিক্ষকের উচিত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে প্রশ্ন করতে পারে। শিক্ষক যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানেন তবে তা স্বীকার করাও শিক্ষার অংশ। শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীদের শেখান, তেমনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন শিক্ষককেও চিন্তা করতে শেখায়।

একটি জাতির চিন্তার বিকাশ নির্ভর করে তাদের জানার আগ্রহ এবং প্রশ্ন করার ক্ষমতার ওপর। এই সাহস গড়ে তুলতে হবে ছোটবেলা থেকেই। পরিবারে, স্কুলে এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে প্রশ্ন করাকে জ্ঞানের বিকাশের পথ হিসেবে উৎসাহ দেওয়া হবে।

শিক্ষা মানে শুধু মুখস্থ বিদ্যা নয় বরং বোঝার চেষ্টা, বিশ্লেষণ এবং প্রয়োগ। আর এই বোঝার যাত্রা শুরু হয় প্রশ্ন থেকেই।


বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org