উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর (Impact Factor) এবং সাইটস্কোর (CiteScore)

Share
Share

অতিথি লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।

একাডেমিক জার্নালের গুণগত মান, গ্রহণযোগ্যতা এবং impact বোঝার ক্ষেত্রে গবেষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এবং পাঠকরা সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট সূচকের ওপর নির্ভর করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ দুটি সূচক হলো ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর (Impact Factor) এবং সাইটস্কোর (CiteScore)। এই সূচকদ্বয়ের মাধ্যমে বোঝা যায়, একটি নির্দিষ্ট সময়কালে উক্ত জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রসমূহ অন্য গবেষণায় কতবার সাইটেশন (citation) পেয়েছে। অর্থাৎ এই মেট্রিকগুলো একদিকে যেমন গবেষণাপত্রের প্রাসঙ্গিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরে, তেমনি অন্যদিকে একটি জার্নালের একাডেমিক অবস্থান ও মান নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর (Impact Factor)

ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর (Impact Factor) হল এক ধরনের পরিমাপ যা বিজ্ঞান এবং একাডেমিক জার্নালের গবেষণার গুণগত মান ও গুরুত্ব নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এই ধারণাটি প্রথম ১৯৬০-এর দশকে ড. ইউজিন গারফিল্ড (Dr. Eugene Garfield) প্রবর্তন করেন। তিনি গবেষণার প্রভাব এবং জার্নালের বৈজ্ঞানিক মান পরিমাপের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে ইনস্টিটিউট ফর সাইন্টিফিক ইনফরমেশন (ISI) প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে ক্লারিভেট (Clarivate) নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে, এই ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর পরিমাপটি ক্লারিভেট অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে জার্নাল সাইটেশন রিপোর্টস (JCR) এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং বৈজ্ঞানিক জার্নালের মানের অন্যতম প্রধান সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়।

কোনো জার্নালের ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর নির্ধারণ করা হয় গত দুই বছরে ওই জার্নালে প্রকাশিত রিসার্চ পেপারগুলোর মোট সাইটেশন সংখ্যা এবং সেই একই সময়কালে প্রকাশিত রিসার্চ পেপারের মোট সংখ্যা থেকে অনুপাত হিসাব করে। এই হিসাবের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র research articles) এবং review articles বিবেচনায় নেওয়া হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন কোনো জার্নালে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে প্রকাশিত সমস্ত রিসার্চ পেপারের মোট সাইটেশন সংখ্যা ৮৫০ এবং ওই দুই বছরের মধ্যে প্রকাশিত মোট রিসার্চ পেপারের সংখ্যা ১১৫।

তাহলে ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর = (২০২৩ এবং ২০২৪ সালে প্রকাশিত রিসার্চ পেপারের মোট সাইটেশন সংখ্যা) / (২০২৩ এবং ২০২৪ সালে প্রকাশিত

মোট রিসার্চ পেপারের সংখ্যা)

= ৮৫০/১১৫ = ৭.৩৯

অর্থাৎ, ওই জার্নালের ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ৭.৩৯।

সাইটস্কোর (CiteScore)

ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টরের তুলনায় সাইটস্কোর তুলনামূলকভাবে নতুন এবং আধুনিক গাণিতিক মেট্রিক, যা ২০১৬ সালে এলসেভিয়ার (Elsevier) কর্তৃক প্রবর্তিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল গবেষণার দীর্ঘমেয়াদী impact আরও বিস্তৃত ও স্বচ্ছভাবে পরিমাপ করার জন্য একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করা। এই সূচকটি এলসেভিয়ারের স্কোপাস (Scopus) ডাটাবেসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়। ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টরের তুলনায় সাইটস্কোরে আরও বিস্তৃত ডকুমেন্ট বিবেচনায় নেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে গবেষণাপত্র, রিভিউ আর্টিকেল, কনফারেন্স পেপার, বইয়ের অধ্যায়, ডাটা পেপার ইত্যাদি।

সাইটস্কোর নির্ধারণ করা হয় মূলত কোনো জার্নালে সর্বশেষ তিন বছরের মধ্যে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের মোট সাইটেশন সংখ্যা এবং সেই সময়কালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের মোট সংখ্যার অনুপাত হিসেবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো জার্নালে ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে প্রকাশিত পেপারের মোট সাইটেশন সংখ্যা হয় ১০৭০ এবং ওই তিন বছরে প্রকাশিত মোট পেপারের সংখ্যা হয় ১৫৫, তাহলে সাইটস্কোর হবে:

সাইটস্কোর = ১০৭০ / ১৫৫ = ৬.৯০

অর্থাৎ, ওই জার্নালের সাইটস্কোর ৬.৯০।


বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগকলাম

কলাম: আবিষ্কার-উদ্ভাবনে আমরা কেন পিছিয়ে

গবেষণা ও উদ্ভাবনে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে? এই বিশদ প্রবন্ধে দুর্বল শিক্ষা সংস্কৃতি...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগরসায়নবিদ্যা

রাসায়নিক বিক্রিয়া: সহজ পাঠ – ২

অতিথি লেখক: রউফুল আলমলেখক ও গবেষকইমেইল: [email protected] 🔗রাসায়নিক বিক্রিয়া সহজ পাঠ রাসায়নিক বিক্রিয়া,...

গবেষণায় হাতে খড়ি

প্রিডেটরি জার্নালের ফাঁদ

নতুন গবেষকদের জন্য লুণ্ঠনমূলক জার্নালগুলি ক্রমবর্ধমান হুমকি। জাল জার্নালগুলি কীভাবে সনাক্ত করতে...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

ভালো গবেষণাপত্র তৈরির টিপস ও কৌশল: সম্পাদকরা কী চান?

সম্পাদকদের পছন্দের উচ্চমানের গবেষণাপত্র লেখার জন্য সেরা ১০টি ব্যবহারিক টিপস শিখুন। কাঠামো...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগকলাম

ভারত ও চীনের মতো মেধাবী তরুণদের দেশে ফেরাতে আমরা কী করছি

বাংলাদেশ কি ভারত ও চীনের মতো তার প্রতিভাবান তরুণদের ফিরিয়ে আনতে পারে?...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.