অতিথি লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমান গবেষণা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রিডেটরি বা ভুয়া জার্নালের ব্যাপক প্রসার। প্রতিদিনই গবেষকরা শত শত ইমেইল পান বিভিন্ন নামসর্বস্ব জার্নাল থেকে, যেখানে দেওয়া হয় আকর্ষণীয় অফার যেমন এপিসি ওয়েভার, দ্রুত প্রকাশনার সুযোগ, সাবমিশনের আমন্ত্রণ ইত্যাদি। এই প্রলোভনগুলো এতটাই চটকদার হয় যে নবীন গবেষকরা সহজেই ফাঁদে পড়ে যান এবং তাদের মূল্যবান গবেষণা এসব ভুয়া জার্নালে প্রকাশ করেন যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রিডেটরি জার্নালগুলোর একটি সাধারণ কৌশল হলো তারা অনলাইনে খুঁজে পাওয়া ইমেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করে এবং বিশাল সংখ্যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমেইল পাঠায়। এই ধরনের ইমেইল যে প্রিডেটরি জার্নালের তা অনেক অভিজ্ঞ গবেষক এক নজরেই বুঝে ফেলেন। কিন্তু নবীন গবেষক বা যারা এখনো এই প্রতারণাগুলো ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেননি, তাদের অনেকে সহজেই এই ফাঁদে পা দেন। বেশিরভাগ প্রিডেটরি জার্নাল নিজেরাই নিজেদের জন্য ভুয়া ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর তৈরি করে।
আজকাল অনেকেই প্রিডেটরি জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন, তখন অনেকে না জেনেই বাহবা দেয়, অভিনন্দন জানায়। এতে ওই গবেষক মনে করেন তিনি কিছু একটা ভালো করেছেন। বাস্তবে তিনি হয়তো নিজের ভবিষ্যৎ গবেষণা জীবনের সুনাম নষ্ট করে ফেলেছেন।
এছাড়া অনেকে এই ধরনের জার্নালের রিভিউয়ার বা এডিটোরিয়াল বোর্ডের সদস্যপদ গ্রহণ করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে নিজেকে বড় গবেষক হিসেবে উপস্থাপন করেন। এতে নবীনরা বিভ্রান্ত হয় এবং প্রিডেটরি জার্নালের দিকে আকৃষ্ট হয়। তবে আসলে এই সদস্যপদ কোনো বৈজ্ঞানিক সম্মান নয়, বরং মূল্যহীনতার প্রতীক।
নতুন গবেষকদের জন্য প্রিডেটরি জার্নাল একটি মারাত্মক ফাঁদ। আজকে যদি কেউ ভুল করে এ ধরনের জার্নালে প্রকাশ করেন, তাহলে কাল তার গবেষণা জীবনের জন্য বড় সংকট তৈরি হতে পারে। তাই সর্বদা সঠিক তথ্য যাচাই করুন, সাবধান থাকুন এবং গ্রহণযোগ্য জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করুন।
Leave a comment