প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন
ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের জন্য বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে এমএস বা পিএইচডি করার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে একটি ধাপে ধাপে নির্দেশিকা দেওয়া হলো:
১. লক্ষ্য নির্ধারণ এবং প্রাথমিক গবেষণা:
লক্ষ্য নির্ধারণ:
প্রথমেই, কোন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান এবং কেন করতে চান তা পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্কলারশিপের ক্ষেত্রে লক্ষ্যকে প্রভাবিত করে।
দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই:
বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য বিশেষ সুযোগ রয়েছে কি না তা খুঁজে বের করুন। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং এশিয়ার অনেক দেশের স্কলারশিপ প্রোগ্রাম রয়েছে।
পাঠ্যক্রম এবং গবেষণা সুযোগ:
যেখানে পড়তে চান সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও গবেষণা ল্যাব সম্পর্কে জানতে হবে এবং গবেষণার ক্ষেত্রের সঙ্গে শিক্ষকদের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করতে হবে।
২. একাডেমিক প্রস্তুতি:
ভাল একাডেমিক রেজাল্ট:
স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য ভালো একাডেমিক রেজাল্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্যাচেলর বা অনার্সে ভাল ফলাফলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করুন।
গবেষণা অভিজ্ঞতা অর্জন:
আপনার বিষয়ের উপর নির্ভর করে ছোট প্রকল্প বা গবেষণায় অংশগ্রহণ করুন। এটি আপনার স্কলারশিপ প্রোফাইলকে শক্তিশালী করে।
প্রকাশনা (Publication):
প্রাসঙ্গিক জার্নালে বা কনফারেন্সে গবেষণাপত্র প্রকাশের চেষ্টা করুন। এটি গবেষণা দক্ষতার প্রমাণ দেয় এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ।
৩. ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি:
ইংরেজি দক্ষতা:
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি দক্ষতা মূল্যায়ন করতে IELTS বা TOEFL স্কোর চায়। এ জন্যে দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
লিখিত ও মৌখিক দক্ষতা:
একাডেমিক লেখালেখি এবং স্পোকেন ইংলিশ উন্নত করার চেষ্টা করুন, কারণ স্কলারশিপের জন্য আবেদন লেখার পাশাপাশি ইন্টারভিউতেও এটি প্রয়োজনীয়।
৪. স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এবং ফান্ডিং সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ:
স্কলারশিপ প্রোগ্রাম:
বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপ, ফুলব্রাইট, কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, চীনের CSC, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডেড স্কলারশিপ প্রোগ্রাম ইত্যাদি সম্পর্কে জানুন।
ফান্ডিং অপশনস:
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বা পূর্ণ স্কলারশিপ প্রদান করে। আপনার পছন্দের দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে স্কলারশিপের তথ্য অনুসন্ধান করুন।
৫. শক্তিশালী আবেদন প্রস্তুত করা:
স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (SOP):
আপনার লক্ষ্য, আগ্রহ, গবেষণা অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে SOP-তে উল্লেখ করুন। এটি একাডেমিক কমিটির মনোযোগ আকর্ষণ করে।
সুপারিশপত্র (Recommendation Letter):
প্রফেসর বা গবেষণার ক্ষেত্রে যারা আপনাকে জানেন তাদের কাছ থেকে সুপারিশপত্র সংগ্রহ করুন। এটি আপনার দক্ষতা এবং আগ্রহের প্রতি সমর্থন দেয়।
সিভি (CV):
আপনার একাডেমিক, গবেষণার অভিজ্ঞতা, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলি সাজিয়ে সঠিকভাবে সিভি তৈরি করুন।
৬. গবেষণার ক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া:
গবেষণার প্রস্তাবনা (Research Proposal):
এমএস বা পিএইচডির জন্যে বিশেষ করে প্রস্তাবনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাসঙ্গিক গবেষণার প্রস্তাবনা লিখে প্রমাণ দিন যে আপনি স্বাধীনভাবে গবেষণা করতে প্রস্তুত।
গবেষণার ক্ষেত্রের যোগাযোগ বৃদ্ধি:
যেসব প্রফেসর বা গবেষক আপনার ক্ষেত্রে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন। যোগাযোগের মাধ্যমে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
৭. মানসিক প্রস্তুতি এবং অধ্যাবসায়:
ধৈর্যশীলতা:
স্কলারশিপ পাওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে।
ব্যর্থতা মোকাবেলা:
যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাখ্যাত হন, তবে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং কোথায় উন্নতি করা যেতে পারে তা খুঁজে বের করুন।
৮. পরিবারের সমর্থন এবং নেটওয়ার্কিং:
পারিবারিক সহায়তা:
পরিবারকে আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত করুন, কারণ এটি আবেদনের প্রক্রিয়ায় মানসিক শক্তি যোগাবে।
অ্যালুমনাই এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ:
যারা ইতিমধ্যে বিদেশে অধ্যয়নরত আছেন তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। তাঁদের অভিজ্ঞতা আপনার প্রস্তুতিকে সমৃদ্ধ করবে।
এই নির্দেশিকা মেনে চললে এবং ধৈর্যশীল থেকে কঠোর পরিশ্রম করলে বাংলাদেশের মেয়েরা সফলভাবে বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে এমএস বা পিএইচডি করতে পারবে ইনশাআল্লাহ!
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত—————–https://www.facebook.com/share/p/19pki3mMg2/
Leave a comment