প্রফেসর- ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন
ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণা এবং পাবলিকেশন একটি দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নের মূল স্তম্ভ। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে গবেষণা এবং পেপার লেখার উদ্যোগ নিতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে, যা উপরোক্ত উদাহরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রণয়ন করা হলো:
১. গবেষণার গুরুত্ব ও প্রাকটিকাল ক্লাসের পুনর্গঠন:
উদাহরণস্বরূপ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ‘Fish Population Dynamics’ কোর্সে ১০টি গ্রুপে ভাগ করে গবেষণার কাজ করা হয়েছে, তেমনিভাবে প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন কোর্সের প্রাকটিকাল ক্লাসগুলোকে শুধুমাত্র তত্ত্বীয় বা ল্যাবভিত্তিক কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবভিত্তিক গবেষণা প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা উচিত। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা বাস্তবসম্মত গবেষণা করার সুযোগ পাবে এবং গবেষণার মাধ্যমে পেপার লেখা ও পাবলিকেশন করার মতো প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করবে।
২. গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধি:
বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রাকটিকাল ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাব সুবিধা থাকলেও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ ও সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে, শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ল্যাব অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত, যেখানে তারা ছুটির দিনেও গবেষণা কাজ করতে পারবে। যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে বিনোদপুরে হোম ল্যাব ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনিভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে এমন ল্যাব স্থাপন করা যেতে পারে।
৩. পেপার লেখার প্রশিক্ষণ:
গবেষণার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের পেপার লেখার কৌশল শেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি কোর্সের সাথে একটি সংক্ষিপ্ত ‘রিসার্চ মেথডোলজি’ মডিউল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা পেপার লেখার নীতিমালা, রেফারেন্স ম্যানেজমেন্ট এবং পাবলিকেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পাবে। এর মাধ্যমে তারা কীভাবে একটি গবেষণা পেপার তৈরি করতে হবে, কোথায় জমা দিতে হবে, এবং কীভাবে আন্তর্জাতিক বা দেশীয় জার্নালে পেপার পাবলিশ করা যায়, তা শিখবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থন:
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গবেষণা কাজে প্রণোদনা দিতে হবে। তারা গবেষণা কাজে বিনিয়োগ করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিতে পারে। এর মধ্যে আর্থিক সহায়তা, উপকরণ সরবরাহ এবং গবেষণা প্রজেক্ট পরিচালনায় শিক্ষকদের সহায়তার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
৫. পাবলিকেশন উদ্যোগ:
প্রতিটি বিভাগ থেকে নিয়মিতভাবে গবেষণা পেপার প্রকাশের জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত। যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগে একটি কোর্সের প্রাকটিকাল ক্লাসের মাধ্যমেই ১০টি পাবলিকেশন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তেমনিভাবে প্রতিটি বিভাগে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রতি সেমিস্টারে অন্তত একটি প্রাকটিকাল কোর্সকে গবেষণা-ভিত্তিক করা উচিত, যেখানে শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে পাবলিকেশন করবে।
৬. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালের সাথে সহযোগিতা:
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালের সাথে সংযোগ স্থাপন করা, যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই তাদের গবেষণা পেপার জমা দিতে পারে। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজেদের জার্নাল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে যেখানে ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকেরা নিজেদের গবেষণা পেপার প্রকাশ করতে পারবেন।
উপসংহার হিসেবে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের গবেষণার দিকে আরও মনোযোগী করার জন্য প্রাকটিকাল ক্লাসগুলোকে গবেষণা ভিত্তিক করে পুনর্গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণা ও পাবলিকেশন বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত——–https://www.facebook.com/share/p/1CYtcpKiPa/
Leave a comment