নারী বিজ্ঞানীদের জন্য একটা অনুপ্রেরণা মেরি কুরি। অসাধারণ প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী দুইবার নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বিজ্ঞানী হিসেবে আমরা জানি তাকে। কিন্তু পরিবারে কেমন ছিলেন মেরি কুরি। মেরি কুরিকে নিয়ে তার মেয়ে ইভের ডায়েরি থেকে ………………
আমার জন্মের সময় মায়ের বয়স ছিল ৩৭ বছর। যতদিনে আমি তাকে বোঝার উপযুক্ত হলাম ততদিনে তিনি খ্যাতিমান এক বয়স্ক মহিলা । খ্যাতিমান হওয়া সত্তেও সে ছিল আমার কাছে বিস্ময়। কারণ সে নিজের ব্যাপারে অমনযোগি । আমি আরও বেশি অভিভূত ছিলাম এজন্য যে আমি বাস করতাম আমার অনেক আগে জন্ম নেয়া এক গরিব ছাত্রীর সাথে। সে শুধু স্বপ্ন দেখত, আর সেই ছিল মেরি কুরি ।— ইভ কুরি।
আমাদের মা সব সময় বলতেন, একজনকে অবশ্যই গুরুত্তের সাথে কাজ করতে হবে, নিজে স্বাধীন হতে হবে এবং কখনই জীবনটাকে হেলায় কাটানো যাবে না। তবে তিনি কখনই জীবন গড়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে মূল হিসেবে বিবেচনা করেন নি—আইরিন জুলিয়েট কুরি।
বিখ্যাত পদার্থবিদ পিয়েরে কুরি (১৮৫৯-১৯০৬) সংসারের বাইরেও স্ত্রী মেরির সাথে অনেক বিষয়ে ভাগাভাগি করেছেন। এই যেমন ১৯০৩ সালে তাদের একসঙ্গে নোবেল পাওয়া। পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী মেরি শুধু যুবতী এবং সুন্দরীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন পিয়েরের মত বুদ্ধিমত্তার অধিকারিণী । উল্লেখ আছে অনেকেই মেরিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তবে পিয়েরে তার মনই জয় করেননি, বিয়েও করেছেন। ১৮৯৪সালের ১০ আগস্ট মেরি কুরিকে লেখা তার চিঠি ঃ
তোমাকে পাওয়ার চেয়ে কোন কিছুই আমাকে অধিক আনন্দ দেয় নি। দুই মাস তোমার কোন খোঁজ না পাওয়া ছিল আমার জন্য বেদনাদায়ক। বলতে কি তোমার চিঠিটা আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। আমি আশা করি তুমি ভাল থাকবে এবং আগামী অক্টোবরে ফিরে আসবে। ওই সময় আমি কোথাও যাবো না, দেশেই থাকব। আমার সারাটি দিন কাটবে খোলা জানালার পাশে অথবা বাগানে দাঁড়িয়ে । আমরা দুজন দুজনকে কথা দিয়েছিলাম, দিয়েছিলাম না? অন্তত ভাল বন্ধু হওয়ার জন্য। তুমি তোমার মনকে পরিবর্তন নাও করতে পার। তবে সকল পতিরশ্রুতি বাঁধা নয়, কিছু বিষয় ইচ্ছামত হয় না । আমি ভালভাবে বিশ্বাস করি কিছু বিষয় যেমন আমাদের একসাথে বাস করা, আমাদের স্বপ্ন, তোমার দেশপ্রেম, আমাদের মানবপ্রেম এবং বিজ্ঞান প্রেম। সব কিছুর শেষ হচ্ছে আমি ন্যায়কে বিশ্বাস করি। আমি মনে করি সমাজ পরিবর্তন করার শক্তি আমাদের নেই। যদি আমরা এক সাথে না থাকতাম তাহলে নিশ্চিত হতাম না কিছু অপরিহার্য পরিবর্তন দমন ভালোর চেয়ে খারাপ কাজ। বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা অন্য কিছু করার প্রত্যাশা করি। যেখানে ভূমি হচ্ছে সৈনিক, আর আমরা জ্ঞান অর্জনের স্বার্থে কিছু আবিষ্কার করতে পারি,তা যত ছোটই হোক না কেন। এটা নিশ্চিত যে আমরা ভাল বন্ধু হতে পারি। তুমি যদি ফ্রান্সে থাক তাহলে এটি হবে প্লেটোনিক ভালবাসা । আর এখানে দুটি প্রাণী কখনই একে অন্যকে দেখতে পাই না। আমার সাথে থাকার চেয়ে ভাল কিছু হবে তোমার? আমি জানি এই প্রশ্ন তোমাকে রাগাচ্ছে। হয়তবা এর জন্য পরে কথা বলতে চাইবে না। ভাববে ধীরে ধীরে আমি তোমাকে অশ্রদ্ধা করব। ফ্রিবারগে আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। তুমি সেখানে আছ আমার ভুল করা দেখার জন্য। তবে একদিন, অবশ্যই একদিন তুমি আমাদের বন্ধুত্ব অনুভব করবে কভালস্কিস।
Leave a comment