[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী. অর্গঃ প্রথমেই ধন্যবাদ বিজ্ঞানী. অর্গ এর পক্ষ থেকে। আপনার ছোটবেলার গল্প বলেন। বিজ্ঞানী হিসেবে কিভাবে গড়ে উঠলেন? কারা কারা আজ আপনার বিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে উঠার পিছনে ভূমিকা রেখেছে?
ড. জাহাংগির আলমঃ আমি মূলত সিলেটের ছাতক থানার কোম্পানীগঞ্জ এ আমার জন্ম। ঐখানে আমি ইলিমেন্টারি পর্যন্ত পড়াশুনা করছি। তারপর আমি সিলেট এর কামালবাজার হাজী রাশেদ আলি হাই স্কুলে আমি পড়াশুনা করি। ওইখান থেকে এস এস সি পাশ করি সিলেটের এমসি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ মাইক্রোবায়োলজি তে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। ওইসময়ই আমি আইসিসিডিডিআরবি এর সাথে সম্পৃক্ত হই থিসিস এর কাজের জন্য। কারণ ওইটাই মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে গবেষণার একমাত্র উপায় ছিল। গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার একটাই কারণ ছিল আমি দেখেছি কালো জ্বর কিভাবে মানুষ মারা যায়। দোয়া বা তাবিজ ব্যবহার করত দেখতাম আমার ইলিমেন্টারি তে থাকার সময়য়। তখন আমি ভাবছিলাম কিভাবে এটা নিরাময় করা যায়। এই চিন্তা থেকেই আমার আসলে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ হয়। তখন কিন্তু জীবাণু সম্পর্কে ও বা এই শব্দটা ও আমি জানতাম না। আমি হাই স্কুল এ পড়ার সময়য় জীবাণু সম্পর্কে আমার ধারণা হয়। এবং আমি বুঝতে পারি কলেরা ও একটা জীবাণুর মাধ্যমে হয়। মাস্টার্স এ থাকাকালীন আমি থিসিস ও করি কলেরা নিয়ে আইসিসিডি আরবি তে। ওখানে আমি মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে ৭-৮ বছর চাকরি করি। তখন আমি এই অসুখটির উপর আরো বিস্তারিত গবেষণা করি। কেন এটি হয়, কিভাবে ছড়ায়, এবং কিভাবে নিরাময় করা সম্ভব হয়। আমি এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে বেশ কয়েকটা জার্নালে ১২ টা আর্টিকেল বা বিজ্ঞান প্রবন্ধ প্রকাশিত করি পরের ১০ বছরে। পরবর্তীতে এই বিজ্ঞান প্রবন্ধগুলিই আমাকে সাহায্য করে জাপানের ওকাইহামা ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি গ্রাজুয়েট স্কুলে এ পি এইচ ডি তে ভর্তি হবার জন্য। যদিও এই কাজটা ছিল কলেজ অফ ফার্মেসিতে, কিন্তু আমার এফিলিয়েশন ছিল ন্যাচারাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি গ্রাজুয়েট স্কুলে। ওইখানে ও আমি কলেরা ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আরো গবেষণার কাজ করি। ব্যাকটেরিয়াটার নাম হল বিব্রিও প্যারাএংগুলেইটার। এটা নিয়ে ভালোভাবে কাজ করে আমি পিএইচডি শেষ করে, আমি আমেরিকাতে স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পোস্টডক করতে চলে আসি। এখানেও আমি কলেরা ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করা শুরু করি। আমেরিকাতে কলেরা যদিও নেই, কিন্তু ডায়রিয়ার খুব প্রবণতা রয়েছে। এটা নিয়ে আমি কাজ শুরু করি। ব্যাকটেরিয়াটির নাম, ইকোলাই ও ওয়াই ৫৭। এই ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনে অনেক বাচ্চা ও বৃদ্ধরা মারা যায়। আমেরিকাতে এটা নিয়ে আমি প্রথম কাজ শুরু করি। এর পরের ৫ বছর পোস্ট ডক্টোরাল শেষ করে – টেক্সাস এ এন এম ইউনিভার্সিটিতে। ওইখানে ও আমি ইকোলাই নিয়ে আরো কিছু কাজ করি। এরপর আমি একটা সরকারী প্রতিষ্ঠান ইপিএ তে ওইটার ই একটা এজেন্সি রয়েছে টিসিইকিউ (TCEQ)। ঐটার কাজ হল ওয়াটার পলিউশন, এয়ার পলিউশন, সয়েল পলিউশন – এগুলোর রেগুলেটর করা। আমার মনে হল ওখানে আমার গবেষণার সুযোগ নেই। তাই আমি টেক্সাস এ এন্ড এম হেলথ সায়েন্স সেন্টার এ রিসার্চ ফ্যাকাল্টি তে চলে আসি। কারণ আমার স্বপ্ন ই ছিল- গবেষণা করা। এখানে আমি ইনফেকশোনাল ডিজিস অর্থাৎ ডায়রিয়া টাইপের ব্যাকটেরিয়া/জীবাণু নিয়েই কাজ করি এবং বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টন কলেজ অফ ফার্মেসিতে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে আছি। আমি ৩০-৩২ বছর ধরে এই ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমার ৮০ টার উপর পাবলিকেশন রয়েছে, ১০০ টির উপর ও কনফারেন্স এ অংশ নিয়েছি। আমার সাথে আমার স্ত্রী খুরশীদা বেগম (উনিও বিজ্ঞানী )আমার সাথে জীবাণু নিয়ে গত ৪ বছর একসাথে কাজ করছেন। আমার ২ বাচ্চা আছে, এক ছেলে এবং এক মেয়ে। আমার ২৩ বছরের মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স সম্পন্ন করে এখন একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। আর আমার ২১ বছরের ছেলে আন্ডারগ্রেডে বিজনেস নিয়ে পড়াশুনা করছে। এই হল আমার সংক্ষিপ্ত বিবরণ।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ আপনি ত দীর্ঘদিন ডায়রিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। মানে বাংলাদেশ, আমেরিকা এবং জাপানে ও কাজ করেছেন। কিন্তু ডায়রিয়াই কেন আপনার গবেষণার বিষয়?
ড. জাহাংগির আলমঃ সারা বিশ্বজুড়েই ডায়রিয়া একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বলতে গেলে প্রথম বা দ্বিতীয় অসুখ এটি। এই রোগে বহু মানুষ ইনফেকটেড হয় এবং বহু ভাবে মানুষ ডায়রিয়া ইনফেকটেড হয়। এটার ভাইরাস আছে, প্যারাসাইট আছে, ব্যাকটেরিয়া আছে, এমনকি ফাংগাস ও আছে। এক কথায় শত শত জীবাণু রয়েছে, যেটার কারণে মানুষ ডায়রিয়া তে আক্রান্ত হয়। আমেরিকার মত দেশেও মানুষ প্রতিনিয়তই কোন না কোন ভাবে এই রোগের শিকার হয়। আমি এখন পর্যন্ত প্রায়ই ২/৩ ডজন জীবাণু নিয়ে কাজ করেছি এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। এখন আরো নতুন ৮ ডজন প্যাথোজেনের উপর কাজ করছি। এক কথায়- বিশ্বজুড়ে এটা কোটি কোটি টাকার সমস্যা। আমেরিকাতে এখন একটা নতুন জীবাণু যেটা ডায়রিয়া করে clostridium difficile infection ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডেফিসিল ইনফেকশন —– সিডেফ বলি আমরা। আমেরিকাতে প্রায় হাফ মিলিয়ন লোক এই রোগ এ আক্রান্ত হয়। ৩০ হাজার মানুষ প্রতি বছর মারা যায় এই জীবাণু ঘটিত কারণে। অনেকে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও মারা যায়। অর্থনৈতিকভাবে বলতে গেলে এটা ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সমস্যা প্রতি বছরে। ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডেফিসিল ইনফেকশন এটা নিয়েই আমি এখন মূলত গবেষণা করছি।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ এখন বলা হয় রোগ জীবাণু নাকি আগের চেয়ে ও অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে। তারা সময়ের সাথে সাথে তাদের ট্যাকটিকস পরিবর্তন করে। এবং এটা ও শোনা যায় এন্টিবায়োটিক গুলো এখন আর কাজ করে না। তা আমার প্রশ্ন হল এই জীবাণুগুলো কেন বা কিভাবে এত স্মার্ট হচ্ছে?
ড. জাহাংগির আলমঃ এটা আসলেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা আসলে এখন এটা নিয়েই কাজ করছি। আগে দেখা যেত যেমন যেই জীবাণু নিয়ে আমি কাজ করছি ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডেফিেসিল ইনফেকশন সেটা আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে কোন ইনফেকশনই করত না। কিন্তু এখন কেন এটাই আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। উন্নত বিশ্বে যেহেতু তথ্যগুলি সঠিক তাই সেসব তথ্য থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। কিন্তু অনুন্নত বিশ্বে ভালো তথ্য না থাকার কারণে আমরা জানিনা ওখানে কি পরিস্থিতি হচ্ছে। এটার কারণ হল এন্টিবায়োটিকের বেশী মাত্রায় এবং ভুল ব্যবহারের কারণে। এখন অকারণেই মানুষ এন্টিবায়োটিক খাচ্ছে এবং ভুল প্রয়োগ করছে। শুধুমাত্র তাই না এটা কৃষিক্ষেত্রেও প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা এত বেশি এক্সপোজ হচ্ছে যে বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক এর বিপরীতে এটা মিউটেটেড হচ্ছে। এন্টিবায়োটিকের রেজেন্সি মিউটেটেড হলে এটা ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়।অনেক সময়য় এক সপ্তাহের মধ্যেও এটা রেজিস্টেন্স হয়ে যেতে পারে। “মিউটেট বলতে আমরা বুঝি , সব কিছুর মূলেই হল ডিএন এ। ডিএনএ র কোন বেইজ এ যদি পরিবর্তন হয় কোন এক্সপোজার এর কারণে , ওই সেন্স টাকেই আমরা মিউটেশন বলে আখ্যায়িত করি। এটা হতে পারে কোন একটা বেইজ আবার অনেক বেইজ এর ও পরিবর্তন হয়। তবে একটা বেইজ পরিবর্তন হলে তাদের ক্যারেকটার অনেক চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। “ আগে একসময় যেটা ছিল পেনিসিলিন এর ক্ষেত্রে সেনসিটিভ , কিন্তু মিউটেশন এর কারণে হয়ে যাচ্ছে রেজিস্টেন্স।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ এই যে মিউটেশন এর পরিবর্তন এটা কি নিজে নিজেই হচ্ছে, নাকি পরিবেশ গত কারণে ও হয়?
ড. জাহাংগির আলমঃ এটা নিজে নিজেও হতে পারে। কিন্তু পরিবেশ এর কারণে ও সাংঘাতিক ভাবে ইনফেকটেড হতে পারে, যেমনঃ রেডিয়েশন, কেমিক্যাল, এন্টিবায়োটিক, এমনকি হিট, এছাড়া ফুড শর্টেজ এর কারণেও এটা মিউটেটেড হয়ে যেতে পারে।বিভিন্ন ফ্যাক্টর এর জন্যই এটা তরান্বিত হয়। বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক এক্সপোজারের কারণে অনেক জীবাণু রাতারাতি রেজিস্টেন্স হয়ে যায়। এটা আসলেই খুব ভয়াবহ ব্যাপার। এই মিউটেশন এর ফলে যে পরিবর্তন হচ্ছে দেখা যায় একটা জীবাণু সব এন্টিবায়োটিক এর বেলায় ও রেজিস্টেন্স হয়ে যেতে পারে। আমাদের তো এন্টিবায়োটিক এর সংখ্যা অনেক সীমাবদ্ধ।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, আধুনিক সভ্যতার সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে আমাদের এই জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী এটা ও বলে মিউটেশন এর যে সমস্যা তা প্রাচীন কালে ও ছিল, এটার সাথে আধুনিক সময়ের সুযোগ সুবিধার কোন সংযোগ নেই। ত আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
ড. জাহাংগির আলমঃ এটা আসলেই সব সময়ই ছিল। কিন্তু আধুনিক সময়ের একটা এফেক্ট ত আছেই। আধুনিক জীবন যাপনে এটা আরো তরান্বিত হচ্ছে। যেমন কেমিক্যাল, আগে ত ন্যাচারাল কেমিক্যাল ছাড়া কোন আর্টিফিশিয়াল কেমিক্যাল ছিল না। কিন্তু এখন দেখেন হাজার হাজার কম্পাউন্ড রয়েছে। যেগুলো কোন না কোন ভাবে পানিতে, খাওয়ারে, বাতাসে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জীবাণু ও এক্সপোজ হচ্ছে, আমাদের ভিতরে ও মিউটেশন টা তরান্বিত হচ্ছে। এটা আসলেই কোন নতুন সমস্যা বা ঘটনা না। শুধু পার্থক্য টা হল স্পিড টা ডিফারেন্স। যেমনঃ একজন মানুষ যদি কোন জীবাণু দ্বারা ইনফেকটেড হয়, আর আমরা কোন এপ্রুভড রেট এন্টিবায়োটিক দ্বারা ট্রিটমেন্ট করি, কিন্তু দেখা যায় এন্টিবায়োটিক এক্সপোজার এর কারণে রাতারাতি আর একটা জীবাণু এন্টিবায়োটিক রেজিটেন্স হতে পারে ঐ ড্রাগ এর এগেইন্সট এ, এত দ্রুতই মিউটেশন হয়। এর একটা উদাহরণ হলঃ ক্যান্ডিডাস পিসি, এই ফাংগাস গ্রুপ টা খুবই মারাত্মক সমস্যা তৈরি করছে। আমি এখন এটা নিয়ে ও কাজ করছি। দেখা যাচ্ছে ট্রিটমেন্ট শুরুর সাথে সাথে মিউটেশন শুরু হয়ে যায়, যা বন্ধ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়, এবং ড্রাগের ট্রিটমেন্ট ফেইল করে এবং অনেক মানুষ মারা ও যাচ্ছে। এখন এই এন্টিবায়োটিক গুলোর ভ্যারিয়েবল বের করছে যেটা দিয়ে এত হাই রেটে হচ্ছে না, ফলে কন্ট্রোল ভাবে এটাকে ট্রিট করা যাচ্ছে। তারপর ও এন্টিবায়োটিক এর শর্টেজ হয়ে যাচ্ছে, কারণ যেই অনুপাতে ড্রাগ রেজিট্যান্স হয়ে যাচ্ছে জীবাণুগুলো ওই অনুপাতে কোন ড্রাগই ডেভেলপ করা যাচ্ছে না। এটা পুরা বিশ্বব্যাপী এক মারাত্মক সমস্যা।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ আজ আমরা নতুন জিনিস জানতে পারলাম ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া বা কলেরা এশিয়া বা আমাদের মত আন্ডার ডেভেলপ কান্ট্রিতে নয় আমেরিকার মত দেশে ও এর প্রভাব রয়েছে।
ড. জাহাংগির আলমঃ এটা একটি কোটি কোটি টাকার সমস্যা। এটা এত মারাত্মক আকার ধারণ করবে, দেখা যাবে আজ থেকে ৩০ বছর পর অর্থাৎ ২০৫০ সালে ১০ মিলিয়ন এর মত ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ঘটিত সমস্যার কারণে মানুষ মারা যাবে। যা এখন বর্তমানে মাত্র ১ মিলিয়ন। এটা ১০ গুন বেড়ে যাবে ৩০ বছরে যদি আমরা ড্রাগ এবিউজ বা ওভার ইউজ কন্ট্রোল করতে না পারি। এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সমস্যার কারণে অনেক নরমাল ইনফেকশনকেই আমরা কন্ট্রোল করতে পারব না ফলে মানুষ অকারণেই মারা যাবে। এখন যেই সমস্যা খুব স্বাভাবিক সেটা অস্বাভাবিক ভাবে ইনফেকশন হবে কারণ এন্টিবায়োটিক কাজ করবে না।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ এই সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানীদের ভূমিকা বা পদক্ষেপ কি?
ড. জাহাংগির আলমঃ এই সমস্যা সমাধানে অনেক পরিকল্পনা চলছে। যেমন এন্টিবায়োটিক টোয়ারশিপ এটার মানে হল এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহারকে কিভাবে অপ্টিমাইজ করা যায়, কিভাবে কারেক্টলি ট্রিটমেন্ট দেয়া যায়। আমেরিকার ই একটি উদাহরণ দিই “আমেরিকার মত উন্নত দেশে ৫০% এর প্রেসক্রিপশন দেয়া হচ্ছে যাতে অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। আমেরিকার মত দেশে যদি ৫০% প্রেসক্রিপশনের কারণে যদি এন্টিবায়োটিক খায়, এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে প্রকট রূপ ধারণ করে তাহলে ত বুঝতেই পারছেন, অন্যান্য দেশে কি হচ্ছে। আমাদের দেশে ত এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে ইচ্ছা সেই কিনতে পারে। এখানে ত এন্টিবায়োটিক কিনতে গেলে ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশন লাগে এবং অনেক নিয়ম কানুন মেনেই এন্টিবায়োটিক কিনতে হয়। এন্টিবায়োটিক টোয়ারশিপ মানেই হচ্ছে এই এন্টিবায়োটিক এর মিস ইউজ বা এবিউজ কে কন্ট্রোল করে আনা, এছাড়া রেগুলেটরি এজেন্সি গুলোর ও কাজ আছে যেমন FDA (ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন) তারা এগুলো কন্ট্রোল করতেছে। এন্টিবায়োটিক টাকে কিভাবে মিনিমাইজ করা যায়। এত এন্টিবায়োটিকের দরকার নাই। ভাইরাল ইনফেকশনে এন্টিবায়োটিকের দরকার নাই, কিন্তু তারপর ও দেখা যায় ভাইরাল ইনফেকশনের হলে ও এন্টিবায়োটিক খাচ্ছে যা আসলেই ভয়াবহ। আমেরিকার মত দেশেও ৮০% লোক এন্টিবায়োটিক নির্ভর। এটা একটা মারাত্মক সমস্যা তৈরি করে ফেলছে সারা বিশ্বের জন্য।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ আপনি ত এখন ডায়রিয়া নিয়ে কাজ করছেন, এটা ছাড়া ও অন্য কিছু নিয়ে কাজ করার কি ইচ্ছে আছে আপনার?
ড. জাহাংগির আলমঃ সবকিছু ত আর করা সম্ভব না। যেহেতু গত ৩০ বছর ধরে ডায়রিয়া নিয়ে কাজ করছি আপাতত এটা নিয়েই কাজ করতে চাই। এই সমস্যা শুধু উন্নত বিশ্বে না অনেক অনুন্নত দেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডেফিেসিল ইনফেকশন বাংলাদেশে আছে কিনা কেউ এটা নিয়ে কোন গবেষণা করে নি। আমি ই প্রথম বারের মত আইসিডিডিআরবির সাথে কোলাবোরেশন করে জার্নাল পাবলিশ করলাম এই জীবাণুর উপরে আমাদের দেশে এই জীবাণুর প্রভাব কি তা বুঝানোর জন্য। আমি এই বিষয়টি নিয়ে খুবই এক্সাইটেড, তাদের ট্রেনিং দিলাম, তাদেরকে আইডিয়া দিলাম, প্রজেক্ট নিয়ে বাংলাদেশের ইনভায়রনমেন্টে ৩ টা হাসপাতালে কাজ করে দেখালাম এই জীবাণু যেমন আমেরিকাতে আছে তেমন বাংলাদেশেও রয়েছে। আমাদের ডাক্তার রা ও জানে না এটা কি সমস্যা তৈরি করছে। এই জীবাণু আমেরিকাতে যেমন মহামারি আকার ধারণ করছে বাংলাদেশে আগামী ১ বা ২ দশকে এই সমস্যা মহামারী রূপ ধারণ করবে। আমরা ভাগ্যবান হয়তো আমাদের দেশে এত টনে টনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে না কিন্তু আবার কন্ট্রোল ও নাই। তাই কম হলে ও এবিউজ হচ্ছে ফলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর সমস্যা তৈরি হবে এবং ওই জীবাণুটা ইনফেকশন করে এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার এর ফলে। আমরা এটাকে বলি এন্টিবায়োটিক এসোসিয়েটেড ইনফেকশন। কারণ মানুষকে যখন এন্টিবায়োটিক দেয়া হয় তখন তাদের ইন্টেস্টাইন এ যে নরমাল ব্যাকটেরিয়া আছে (আমাদের ইন্টেস্টাইন এ ট্রিলিয়ামস অফ ব্যাকটেরিয়া আছে) ওইগুলো অনেকগুলো মরে যায় ফলে এই জীবাণু মানে ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডেফিেসিল গ্রো করার সুযোগ পায়। এজন্যই আমরা এটাকে বলি এন্টিবায়োটিক এসোসিয়েটেড ডায়রিয়া। আমাদের দেশে এটা হচ্ছে কিন্তু আন্দাজ এর উপর চিকিৎসা করে তারা এটাকে ভালো করার চেষ্টা করছে। ফলশ্রুতিতে বিনা কারণে অজান্তেই মানুষ মারা যাচ্ছে, তারা এটা বুঝতেই পারেনা তারা এই জীবাণুর আক্রমণে মারা যাচ্ছে। এটা আমরা চিহ্নিত করে এই বিষয়ে ২ টা আর্টিকেল পাবলিশ করছি, ১ টি পাবলিশ হয়েছে অন্যটি সাবমিটেড। আশা করি এই বছরে ২য় টি পাবলিশ হবে। আমাদের উদ্যোগে প্রথম বাংলাদেশে এই কাজটি করা হচ্ছে।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ আমাদের জন্য এটা গর্বের বিষয় আপনি দেশের কথা ভেবে কাজ করছেন।
ড. জাহাংগির আলমঃ আমি আরো অনেক কিছু করতে চাই আমার দেশের জন্য। আমি এখনো বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে অনেককে আইডিয়া দিচ্ছি কিভাবে এই ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স জীবাণুগুলোকে আমরা পর্যবেক্ষণ করে নিয়ন্ত্রণ এ আনতে পারি। আশা করি আগামী ৫-১০ বছরে এই নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে আমি আরো অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারব। কিন্তু আমাদের দেশে গবেষণা খাতে ফান্ডিং নিয়ে বিশাল সমস্যার রয়েছে। আইসিডিডিআরবি এর মত জায়গায় কাজ করা সম্ভব কিন্তু তার বাইরে কাজ করা খুবই কঠিন। তারপর আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের দেশের প্রচুর মেধাবী রয়েছে।খুব স্বল্প রিসোর্স দিয়ে ও এটা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি, কারণ এটা এত ও বেশি ব্যয়বহুল নয়। আইডিয়াটাই প্রধান, আইডিয়া আর মেথড এবং আনুষঙ্গিক সব কিছু দিয়ে যদি সহায়তা করা যায় তারা এটা অবশ্যই করতে পারবে। আমি ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেককে চিহ্নিত করেছি, আশা করি তারা এই কাজটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ আমাদের বিজ্ঞানী.অর্গ এর বিশাল অংশ কিশোর কিশোরী বা ছাত্রজীবনে রয়েছে, তারা যদি আপনাদের মত বিজ্ঞানী হতে চায় তাদের জন্য আপনি কি উপদেশ দিবেন?
ড. জাহাংগির আলমঃ আমি মনে করি এটা কোন কঠিন কাজ নয়। এটার জন্য নেশা থাকতে হয়, তাদেরকে তাদের নিজের জীবনের টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে। তারপর ঐটাকে ভিত্তি করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অনেকে অনেক ভাবে নিরুৎসাহিত হতে পারে কিন্তু তারপর ও লক্ষ থেকে সরে দাঁড়ানো যাবে না, নিজেকে নিজে শক্ত করে ধরে রাখতে হবে। আজকাল ইন্টারনেট এর যুগ, সিনিয়রদের সাথে নেটওয়ার্ক করে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারে। কেউ যদি আমার সাথে যোগাযোগ করতে চায়, আমি তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত যেকোনো সময়। আমি মনে করি সত্যি যদি গবেষণা করতে চায়, তাদেরকে লেগে থাকতে হবে, এটা অসম্ভব কিছু না। আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করে এটুকু আসতে পারলে আরো অনেক মেধাবী রয়েছে তারা প্রত্যেকে আরো অনেক ভালো কাজ করার ক্ষমতা আছে, পোটেনশিয়ালিটি আছে। শুধু আগ্রহ আর নেশা টা থাকা দরকার, কিন্তু কিছুদিন পরপর নিজের আগ্রহ আর ডিরেকশন পরিবর্তন করে ফেলে তাহলে এই সফলতার হার বা সাকসেস রেট টা অনেক কমে যাবে। দেশে বিদেশে অনেকেই সাহায্যের হাত এগিয়ে রেখেছে, তাই শুধুমাত্র তারা যদি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে তাহলে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। যাকেই প্রশ্ন করবেন সেই উত্তর দিবে, অনেক ফোরাম রয়েছে যেখানে একজন অপরিচিত ও আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত, শুধুমাত্র নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। শুধু আগ্রহই প্রয়োজন, ডিটারমিনেশন প্রয়োজন।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ জাপান আর আমেরিকাতে যেহেতু আপনি গবেষণা করেছেন, একজন বিজ্ঞানী হিসেবে এই দুই দেশের গবেষণার পরিবেশ আর আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই। কি পার্থক্য রয়েছে এই দুই দেশের গবেষণার পরিবেশে?
ড. জাহাংগির আলমঃ আমি মনে করি প্রতিটি দেশেরই কালচার, চিন্তাভাবনা আর পরিবেশ ভিন্ন। জাপান খুবই উন্নত দেশ, তারা খুবই ইউনিক গবেষণা করে, সারা বিশ্বের মানুষই অবাক হয় তারা কিভাবে এত এডভান্স এবং ভিন্নভাবে চিন্তা ভাবনা করে। আমি নিজে ও অবাক হই। আমেরিকাতে ডাইভারসিটি অনেক ব্যাপক, কারণ এখানে অনেক দেশ থেকে লোক আসে, অনেক চিন্তাভাবনা, অনেক কালচার এর লোক আসে। আমেরিকা আর জাপানের মধ্যকার প্রধান সমস্যা যা আমি অনুভব করেছি তা হল ভাষাগত সমস্যা। আমেরিকাতে ইংরেজি হওয়ার কারণে সবাই কমিউনিকেট করতে পারে সহজে, কিন্তু জাপানে ভাষাগত জটিলতার কারণে অনেক কিছু করতে চাইলেও করতে পারিনি। কিন্তু যদি ভাষাগত সমস্যা এড়ানো যায় মানে জাপানের ভাষা শিখে যদি কমিউনিকেট করা সম্ভব হয় তাহলে ওইখানে অনেক ভালো বিষয় নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব। কিন্তু আমেরিকাতে রিসার্চে যে পরিমাণ ফান্ডিং করা হয় পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই পরিমাণ এ ফান্ডিং করা হয় না। আমেরিকাতে অফুরন্ত রিসোর্স রয়েছে, এখানে চাইলে মিলিয়নস অফ ডলার এর রিসার্চ করা খুব সহজেই সম্ভব। যেমন এখানে আমি বর্তমান বছরে ১ মিলিয়ন এর বেশী বিনিয়োগ নিয়ে গবেষণা করতে পারছি, যেটা অন্য কোন দেশে থাকলে পারতাম না।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী. অর্গঃ বাংলাদেশে গবেষণাতে আপনার অভিজ্ঞতা কি?
ড. জাহাংগির আলমঃ বাংলাদেশে প্রচুর শিক্ষিত এবং মেধাবী লোক রয়েছে, যদি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ও যদি সহযোগিতা করা যায় বাংলাদেশে ও অনেক বিষয় নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক অবস্থার কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, রাজনীতি করলে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব, গবেষণা করে তা সম্ভব না। তাই সরকারের উচিত এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত।[/box]
[divider style=”solid” top=”20″ bottom=”20″]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন।
[mc4wp_form id=”3448″]
Leave a comment