বিশ্বজুড়ে যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বায়োটেকনোলজি এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা নতুন গতিতে এগিয়ে চলছে, তখন সে যাত্রায় বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানীর অবদান উল্লেখ করার মত। তিনি ড. মো: জাবেদ হোসেন—Guangzhou University–এর স্কুল অফ লাইফ সাইন্স এর একজন প্রফেসর, সিন্থেটিক বায়োলজি ও বায়োপ্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন গবেষক।
২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা (বাংলাদেশ সময়) biggani.org–এর আয়োজিত বিশেষ সাক্ষাৎকারে যুক্ত হচ্ছেন এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী। ইভেন্টকে সামনে রেখে তাঁর কাজ, অবদান ও গবেষণা যাত্রা সম্পর্কে একটি পরিচিতিমূলক প্রবন্ধ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম থেকে চীনের বিজ্ঞানশালা—এক অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা
ড. জাবেদের যাত্রা শুরু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে। উচ্চতর শিক্ষা সম্পন্ন করেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরবর্তী সময়ে মালয়েশিয়ার University of Malaya থেকে বায়োফুয়েল-ভিত্তিক বায়োটেকনোলজিতে পিএইচডি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণা কর্ম ও নতুনত্বপূর্ণ চিন্তাধারা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হয়েছে।
এশিয়া জুড়ে তিনি কাজ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে—University of Malaya, Jiangsu University, এবং বর্তমানে Guangzhou University। সিন্থেটিক বায়োলজি, মেটাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনজাইম ইঞ্জিনিয়ারিং সহ সর্বাধুনিক বায়োটেকনোলজি গবেষণার মাধ্যমে তিনি টেকসই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানুফ্যাকচারিং তথা গ্রীন ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
বিশ্বের টপ ২% Highly Cited Scientist—বাংলাদেশের গর্ব
গত পাঁচ বছর ধরে (২০২১–২০২৫) তিনি বিশ্বের টপ ২% Highly Cited Scientist তালিকায় অবস্থান করছেন। তাঁর ১০০+ Scopus-indexed পেপার, ৪,০০০+ সাইটেশন, ২৯-এর অধিক h-index, এবং একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার তাঁকে বৈশ্বিক বিজ্ঞানমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দিয়েছে।
গবেষণার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- সিন্থেটিক বায়োলজি
- বর্জ্য থেকে উচ্চমূল্যের রাসায়নিক ও জ্বালানি উৎপাদন
- বায়োফুয়েল প্রযুক্তি
- এনজাইম ও মেটাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং
- গ্রিন ম্যানুফ্যাকচারিং ও সার্কুলার ইকোনমি
তিনি National Natural Science Foundation of China (NSFC), চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (MoST), এবং Guangzhou Municipal Government–সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা অনুদান পেয়েছেন।
সিন্থেটিক বায়োলজির মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর
ড. জাবেদের অন্যতম বড় অবদান হলো বায়োম্যাস ও বর্জ্যকে উচ্চমূল্যের রাসায়নিক, বায়োফুয়েল এবং জীববৈচিত্র্য-নির্ভর উপকরণে রূপান্তরের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
বিশ্বব্যাপী “Waste-to-Product” এবং “Circular Bioeconomy” ধারণা যখন গুরুত্ব পাচ্ছে, তখন তাঁর গবেষণা বাস্তব শিল্পে প্রয়োগযোগ্য মডেল তৈরি করছে।
তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে কৃষি বর্জ্য, খাদ্যশিল্প বর্জ্য, জৈব বস্তুর অবশিষ্টাংশ সবই উন্নত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিণত হতে পারে বায়োফুয়েল, বায়োপ্লাস্টিক, জৈব রসায়ন বা শক্তিতে।
এটি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, বরং ভবিষ্যতের টেকসই শিল্পবিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আধুনিক বায়োপ্রসেস ও মেটাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নতুন উচ্চতা
তাঁর গবেষণার আরেকটি বড় অংশ মেটাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং—যেখানে মাইক্রোবকে এমনভাবে ডিজাইন ও পরিবর্তন করা হয়, যাতে তারা আরও দক্ষভাবে বায়োফুয়েল বা মূল্যবান রাসায়নিক উৎপাদন করতে পারে।
এনজাইম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে মাইক্রোবিয়াল রিঅ্যাকশনের গতি ২–৫ গুণ পর্যন্ত বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাঁর কাজ শিল্প গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
এ ছাড়া মাইক্রোঅ্যালগি, জেনেটিক এডিটিং, ওমিক্স ভিত্তিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তিনি এমন পদ্ধতি তৈরি করছেন যা ভবিষ্যতের বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভিত্তি গড়ে দেবে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা
ড. জাবেদ ব্যক্তিগত ও গবেষণা জীবনে বাংলাদেশের প্রতি গভীর আবেগ রাখেন। বিভিন্ন সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের গবেষকদের মান, সক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জনের পথ বারবার তুলে ধরেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন—
“বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চাইলেই গ্লোবাল গবেষণায় নেতৃত্ব দিতে পারে। প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা, পরিশ্রম ও ধারাবাহিকতা।”
ইতিমধ্যে তিনি দেশের তরুণ গবেষকদের থিসিস মূল্যায়ন, লেকচার এবং রিভিউয়ার হিসেবে সহায়তা করেছেন। এই ইভেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, গবেষক এবং বিজ্ঞানপিয়াসীরা জানতে পারবেন—
- বিশ্বমানের গবেষণা ল্যাব কীভাবে কাজ করে
- সিন্থেটিক বায়োলজির ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে
- Waste-to-Product প্রযুক্তির বাস্তব সম্ভাবনা
- বিদেশে গবেষণার সুযোগ, আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতি
- একজন বাংলাদেশি কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় সাফল্য অর্জন করতে পারেন
এটি শুধু একটি সাক্ষাৎকার নয়—একটি অনুপ্রেরণার মঞ্চ।
ড. হোসেন জাবেদ শুধু একজন বিজ্ঞানী নন; তিনি বাংলাদেশের সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল প্রতীক। তাঁর গবেষণা, নেতৃত্ব, ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাশক্তি আমাদের নতুনভাবে ভাবতে শেখায়—টেকসই পৃথিবী, সবুজ উদ্ভাবন এবং জীবনমান উন্নয়নের পথে আমরা কীভাবে এগোতে পারি।
২০ ডিসেম্বর biggani.org–এর এই আয়োজনে তাঁর কথা শোনার সুযোগ হয়তো অনেককেই নতুন পথে হাঁটার সাহস যোগাবে।
রেজিস্ট্রেশনের লিংকে:
https://forms.gle/CtZfLDDr5tGcKRCn6
তারিখ:
২০ ডিসেম্বর ২০২৫, বিকেল ৬ (বাংলাদেশ সময়)

Leave a comment