মোহাম্মদ আব্দুল হালিম
সহকারী অধ্যাপক
কেনেসো স্টেট ইউনিভার্সিটি
প্রতি সেমিষ্টারে আমার জেনারেল কেমেষ্ট্রি ক্লাসে কিছু ছাত্র থাকে যারা ক্লাসে পড়ানোর সাথে কোপ করতে পারে না ।
এদের মধ্যে অনেক ছাত্র আছে যারা হাই স্কুলে রসায়ন কোর্স নেয়নি এবং রসায়নে তাদের পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই । বেশ কিছু ছা্ত্র আছে যারা হাই স্কুলে রসায়ন (নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেনী) নিলেও যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে তখন অনেক বিষয় ভুলে গেছে ।
ক্লাসে এই ছাত্ররা বিভিন্ন রকম সমস্যায় পরে ।
আমি সপ্তাহে জেনারেল কেমেষ্ট্রির তিনটি ক্লাস নেই ৫০ মিনিটের অথবা দুইটি ক্লাস নেই ৭৫ মিনিটের । আমার ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা ৭২ জন । ক্লাসের বাইরে আমার অফিস আওয়ার থাকে যে সময়ে ছাত্ররা আমার অফিসে এসে তাদের সমস্যা গুলো বুঝে নিতে পারে ।
এ ছাড়াও আমার ক্লাসে একজন টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে ।
প্রতি সপ্তাহে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট দুইটি এক ঘন্টার করে সেশন রাখে যেখানে ছাত্ররা তাদের কনসেপ্টচুয়াল সমস্যা বা হোমওয়ার্ক বিষয়ক সমস্যা নিয়ে আসে যা তারা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে আলোচনা করে । এ ছাড়াও ছাত্ররা টিউটরের সাহায্য নিতে পারে । আমার বিশ্ববিদ্যালয়েই বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর (যেমন গনিত, পদার্থ, জীববিজ্ঞান ও রসায়নের) জন্য একটি টিউটরিং সেন্টার আছে । যেখানে ছাত্ররা টিউটরের কাছে ঘন্টা ভিত্তিক সেশন নিতে পারে । এ ছাড়াও ক্যাম্পাসে জুনিয়র ও সিনিয়র আন্ডাগ্রাড্ ছাত্ররা ব্যক্তিগতভবে ঘন্টা ভিত্তিক সেশনে টিউটরিং (অনেকটা আমাদের দেশের টিউশনির মতো) সার্ভিস প্রদান করে । এ ক্ষেত্রে টিউটররা ঘন্টায় ২০ ডলার থেকে ৩০/৩৫ ডলার নেয় । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ম্যাথ ও ফিজিক্স টিউটরের ডিমান্ড অনেক বেশী ।
এখন আসি হাইস্কুল ছাত্রদের ক্ষেত্রে ।
আমি যখন পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে ছিলাম তখন আমি একটি টিউটরিং সেন্টারে রসায়ন টিউটর হিসাবে পার্টটাইম কাজ করতাম । প্রতিষ্ঠানটি ছিল প্রাইভেট, সেখানে হাইস্কুলের ছাত্রদের জন্য বিষয়ভিত্তিক ও SAT/ACT উপর টিউটরিং সেবা প্রদান করা হতো । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সাবেক ও কারেন্ট হাইস্কুল শিক্ষকরা টিউটর হিসাবে কাজ করত । সেখানে ওয়ান-টু-ওয়ান বা গ্রুপ টিউটরিং সেশান অফার করা হতো । প্রতিষ্ঠানটির মালিক ছাত্রদের ফি থেকে একটি অংশ রাখতেন এবং টিউটরদের অভিজ্ঞতা ও সেশন অনুযায়ী একটা ভালো বেতন দিতেন ।
এছাড়াও বর্তমানে অমেরিকায় অনলাইন টিউটরিং সার্ভিস খুবই পপুলার ।
TutorChase, Varsity Tutors, Kaplan, Tutorcom, TutorMe, eTutorWorld, Wyzant, Skooli, Chegg Tutors সহ অসংখ্য অনলাইন টিউটরিং সার্ভিস আছে যেখান থেকে হাইস্কুল ও আন্ডারগ্রাড ছাত্র সেবা নিতে পারে । এখানে এবং অনান্য সাইটগুলোতে অনেকে ইন্ডিয়া ও পাকিস্হানসহ অনান্যদেশ থেকেও টিউটর হিসাবে কাজ করে । অনেকে ফ্রিল্যান্সার শিক্ষক বা টিউটর হিসাবেও কাজ করে ।
সুতারাং আমেরিকায় ছাত্ররা যদি স্কুল বা বিশ্বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম থেকে শিখতে না পারে
(সেটা যেকোন কারনেই হোক না কেন) তাহলে প্রতিষ্ঠানটি টিউটরিং সার্ভিস প্রদান করে, অথবা ছাত্ররা ব্যক্তিগতভাবে অনলাইন বা অফলাইন থেকে টিউটরদের হেল্প নেয় ।
বাংলাদেশের স্কুল ও কলেজে ভাল শিক্ষকের তীব্র সংকট ফলে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ছাত্ররা ক্লাসরুম থেকে শিখতে পারে না ।
আবার অনেক শিক্ষক বাসায় প্রাইভেট পড়ান বলে স্কুলে সময় কম দেন । শিক্ষকের বেতন খুবই কম ফলে সংসার চালাতে স্কুল বা কলেজে বাইরেও তাদেরকে কিছু করতে হয় । তাছাড়াও অনেক শিক্ষক স্কুলে ভালো পড়ালেও সেই স্কুল বা কলেজের ছাত্ররা তার বাসায় পড়তে আসে । স্কুল বা কলেজের শিক্ষকদের বাইরেও অনেক কোচিং সেন্টার আছে যেখানে ছাত্ররা যায় ও তাদের হেল্প নেয় ।
ভালো শিক্ষক নিয়োগ,
বিশেষ পে স্কেলে শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার পরিকল্পনা না করে শুধু কারিকুলাম পরিবর্তন করে ছাত্রদের কোচিং বিমুখী করা সম্ভব নয় । আবার নিন্মমানের কারিকুলমের জন্য ছাত্ররা আগের মান সম্মত শিক্ষার জন্য আগের চেয়ে বেশী কোচিং মুখী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ।
যেকোন জিনিসের চাহিদা ঐ জিনিসের অস্তিত্বকে নির্মাণ করে । অস্তিত্বকে সংযত বা সীমাবদ্ধ করতে হলে চাহিদার ব্যপকতা ও তার ক্ষেত্রকে গভীরভাব বুঝতে হয়, পরীক্ষা করতে হয় ।
বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–
https://www.facebook.com/share/p/15fa7ccFbC
Leave a comment