বিজ্ঞান বিষয়ক খবর

দ্বৈত আইনস্টাইন বলয় খুঁজে পেল হাবল মহাকাশ দুরবিন

Share
Share

{mosimage}২০০৮ সালের ১০ই জানুয়ারিতে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান্টা বারবারার দুই গবেষক (রাফায়েল গাভাজ্জি এবং তোমাসো ত্রিউ) মার্কিন অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে একটি গবেষণাপত্র জমা দিয়েছেন যাতে একটি দ্বৈত আইনস্টাইন বলয় আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ধরণের দ্বৈত আইনস্টাইন বলয় বেশ বিরল ঘটনা। আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২১১তম সম্মিলন হতে যাচ্ছে টেক্সাসের অস্টিনে। সেখানে তারা তাদের আবিষ্কার পেশ করবেন। এ নিয়ে কিছু বলার আগে আইনস্টাইন বলয় নিয়ে কিছু বলে নেয়া প্রয়োজন।

একই দৃষ্টিরেখায় যদি পর্যবেক্ষক, একটি দূরবর্তী বস্তু (তারা বা ছায়াপথ) এবং দুয়ের মাঝে একটি লেন্স এসে যায় তাহলে মহাকর্ষীয় লেন্সিং নামে একটি ক্রিয়া সংঘটিত হয়। এখানে লেন্স বলতে কিন্তু কাঁচের তৈরী কোন বস্তু বোঝায় না। আসলে অন্য একটি তারা বা ছায়াপথই লেন্সের মত আচরণ করে। দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে আলো পর্যবেক্ষকের কাছে আসার সময়ে মাঝখানের লেন্সরূপী ছায়াপথের কারণে বেঁকে যায়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী অতি বৃহৎ কোন বস্তু স্থান-কালের জালিকাকে বাঁকিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আলোর গতিপথকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। এ কারণেই এভাবে মহাকর্ষীয় লেন্সিং ঘটে। ফলে মাঝখানের ছায়াপথের চারদিকে একটি বলয়ের সৃষ্টি হয় যাকে আইনস্টাইন বলয় বলে। এখন যদি চারটি বস্তু পর্যায়ক্রমিকভাবে একই রেখায় এসে পড়ে তখন। ধরলাম পর্যবেক্ষক, “ক” তারা, “খ” তারা এবং “গ” তারা এক দৃষ্টিরেখায় এসে পড়েছে। “গ” সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। তাহলে কিন্তু লেন্সরূপী তারার চারদিকে দুটি বলয়ের সৃষ্টি হবে। দূরবর্তী তারার জন্য সৃষ্ট বলয় হবে বড় আর কাছেরটির জন্য ছোট বলয় সৃষ্টি হবে। এভাবেই দ্বৈত আইনস্টাইন বলয়ের সৃষ্টি হয়।
{mosimage}
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমনই একটি দ্বৈত আইনস্টাইন বলয়ের সন্ধান পেয়েছেন। তাদের গবেষণা প্রকল্পটির নাম “স্ল্যাক” (স্লোয়ান লেন্স অ্যাডভান্সড ক্যামেরা ফর সার্ভেইস)। এক্ষেত্রে লেন্স হিসেবে আচরণকারী ছায়াপথটি পৃথিবী থেকে ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আর যে ছায়াপথ দুটির কারণে বলয় সৃষ্টি হয়েছে তাদের দূরত্ব যথাক্রমে ৬ ও ১১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে এর ছবি তোলা হয়েছে।

একটি ছায়াপথ স্থান-কালকে কি পরিমাণ বাঁকাবে তা নির্ভর করে তার মধ্যকার অদৃশ্য বস্তু এবং শক্তির পরিমাণের উপর। দ্বৈত বলয়ের মাধ্যমে এই দুই বিজ্ঞানী আলো কি পরিমাণ বেঁকেছে তা নির্ণয় করেছেন। এই পরিমাণ থেকে তারা অদৃশ্য বস্তুর পরিমাণ নির্ণয় করেছেন এবং এর মাধ্যমে লেন্স হিসেবে ক্রিয়াশীল ছায়াপথটির ভরও নির্ণয় করেছেন। এভাবে এই প্রথম নির্ণয়যোগ্য দূরত্বে থাকা কোন ছায়াপথের ভর নির্ণয় করা সম্ভব হল। এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা অদৃশ্য বস্তু এবং মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্বন্ধে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্যের জন্ম দেবে বলে সবাই মনে করছেন।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
বিজ্ঞান বিষয়ক খবর

গবেষণা প্রবন্ধের জন্য কীওয়ার্ড নির্বাচন: কার্যকরী টিপস ও উদাহরণ!

গবেষণা প্রবন্ধ বা নিবন্ধের জন্য সঠিক কীওয়ার্ড নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

বন্যার ধ্বংস থেকে জাহাজের স্থায়িত্ব: এক তরুণ গবেষক  মোহাম্মদ ইব্রাহীম এর গল্প!

এবারের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমাদেরকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম।তিনি মাদারিপুরের শিবচরের একজন কৃষক পরিবারে...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

বিজয় চন্দ্র ঘোষের সাথে সাক্ষাৎকার: সৌরশক্তি ও পরিবেশ রসায়নে আধুনিক গবেষণা!

বর্তমান সময়ে আমরা একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছি বিশিষ্ট গবেষক বিজয় চন্দ্র ঘোষের সাথে।...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.